বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন, মানবেন যেসব সতর্কতা

ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন, মানবেন যেসব সতর্কতা
ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন, মানবেন যেসব সতর্কতা | পুরনো ছবি

বিদায় নিতে চলেছে পবিত্র মাহে রমজান। কয়েকদিন পর উদযাপন হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদকে সামনে রেখে পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অধিকাংশ মানুষ নাড়ির টানে গ্রামে ফিরে যায়। উৎসবের আনন্দটা ভাগাভাগি করতে ছুটবেন তারা। যে কারণে যাত্রাপথে বাড়তি চাপ দেখা যায়। ফলে যাত্রাপথে সাবধানে থাকাসহ খেয়াল রাখতে হয় অনেক বিষয়ে। তাই যারা ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন তাদের কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি। যেমন-

ঈদযাত্রায় যেসব বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন

এক. আবহাওয়ার খোজ নেয়া :

পরিকল্পনা অনুযায়ী যেদিন যাত্রা করছেন সেদিনের আবহাওয়ার যথাযথ খোঁজ তো রাখবেনই, একইসঙ্গে ছুটির দিনগুলো যেখানে থাকবেন, সেই সময়কার আবহাওয়া কেমন থাকবে তার অগ্রিম খবরও নিন। এ ছাড়া যেহেতু এখন গ্রীষ্মকাল তাই দাবদাহের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। অন্যদিকে বৃষ্টিতে যেন ভোগান্তিতে না পড়েতে হয় তার পূর্বপ্রস্তুতিও রাখতে হবে।

দুই. আরামদায়ক পোশাক

ভ্রমণের সময় অবশ্যই আরামদায়ক পোশাক পরুন। এই ক্ষেত্রে সুতির পোশাক হতে পারে সবচেয়ে আরামদায়ক। ভুল করেও সিনথেটিকের কোনো পোশাক পরতে যাবেন না। এতে সারা পথ অস্বস্তিতে ভুগবেন। এ সময় হালকা রঙের পোশাক পরুন। এতে যাত্রাপথে গরম কম অনুভূত হবে।

তিন. সানগ্লাস

রোদ থেকে বাঁচতে সানগ্লাস তো আপনাকে নিতেই হবে। তবে নন ব্র্যান্ডেড সানগ্লাসের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। এতে চোখের ক্ষতি হয়। তাই দাম একটু বেশি হলেও ব্র্যান্ডেড সানগ্লাস কিনুন। এতে আপনার চোখ রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাবে। তাছাড়া রোদ থেকে বাঁচার জন্য ছাতা, ক্যাপ ও সানস্ক্রিন সঙ্গে রাখুন।

চার. খাবার গ্রহণে সতর্কতা

একে তো তীব্র গরম, তার ওপর রোজা। তাই যাত্রা শুরুর আগে সেহরি বা ইফতারে ভারী খাবার একদমই খাবেন না। এর বদলে হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া সঙ্গে পানির বোতল রাখুন। যেকোনো সময় প্রয়োজন হতে পারে। কোনো কারণে পথেই যদি ইফতার বা সেহরি খেতে হয় তবে সেসব বিষয় মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিয়ে বের হোন। কারণ রাস্তার ধারের খাবার অস্বাস্থ্যকর হওয়ার ভয় বেশি থাকে।

পাঁচ. ভ্রমনের সময় নির্ধারন

যেহেতু দিনের বেলায় রোদের তীব্রতা থাকে তাই যদি সম্ভব হয় রাতের বেলা ভ্রমণের চেষ্টা করুন। এ সময় গরমের তীব্রতা কম থাকে। তবে আপনার সঙ্গে গামছা বা তোয়ালে রাখুন। গরমে বেশি ঘামলে এটি কাজে লাগবে। এ ছাড়া যাদের পা ঘেমে যাওয়ার সমস্যা আছে তারা সুতির মোজা পরে বের হতে পারেন।

সাত. বাড়তি সতর্কতা

ঈদের সময় বিভিন্ন চক্র, ছিনতাইকারী, মলম পার্টি ও গামছা পার্টি থেকে সাবধান থাকতে হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস বা ট্রেনের ছাদে যাতায়াত করবেন না।

জাল টিকিট বিক্রিকারী চক্রের প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে হবে। যাত্রাপথে অপরিচিত কারও দেওয়া খাবার বা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

আট. যানবাহন বাছাইয়ে সতর্কতা

নদীপথে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ দেখলে যাত্রা থেকে বিরত থাকতে হবে। সময় বাঁচাতে লাফ দিয়ে পরিবহনে ওঠা যাবে না। অতিরিক্ত যাত্রীবাহী লঞ্চে যাত্রা করা থেকে বিরত থাকুন। ঝুঁকি নিয়ে যে কোনো যানবাহনে চড়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

নয়. প্রাথমিক সতর্কতা

প্রবাদ আছে, সাবধানের মার নেই। তাই সতর্কতা হিসেবে একটি ফাস্ট এইড বক্স সঙ্গে রাখুন। তাতে প্রয়োজনীয় ও জরুরি ওষুধপত্র রাখুন। কারণ হাতের কাছে সব সময় ফার্মেসি কিংবা প্রয়োজনীয় সব ওষুধ নাও থাকতে পারে। তাই বিপদে ফাস্ট এইড বক্স কাজে দেবে।

ঈদ যাত্রায় যেসব সুন্নাত মেনে চলবেন

সারা বছরের ব্যস্ততাকে পেছেনে ফেলে অন্তত ঈদের সময়টি সবাই প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কাটাতে পছন্দ করে। তাই ঈদের সময় বেশির ভাগ মানুষকেই ভ্রমণ করতে হয়। তবে এ ভ্রমণকালে প্রিয় নবী (সা.)-এর কিছু সুন্নাত রয়েছে, যা অনুসরণ করলে আমাদের ভ্রমণও ইবাদতে পরিণত হতে পারে।

এক. নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে বের হওয়ার আগে কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তির (যিনি ওই রাস্তাঘাট কিংবা গন্তব্যের অবস্থা সম্পর্কে অবগত) সঙ্গে পরামর্শ করা। এতে কোনো রাস্তায় গেলে ভ্রমণ সহজতর হবে তা জানা যাবে এবং সুন্নাত ও আদায় হবে।

দুই. ওযু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে ইস্তিখারা করা (কোনো কাজ শুরু করার আগে এর ভালো ফলের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা)।

তিন. অভিবাবকের অনুমতি নিয়ে যাত্রা শুরু করা। মা-বাবা কিংবা দায়িত্বশীল ও সম্মানিত কোনো ব্যক্তি এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে। এ ছাড়া আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তিগফার ও সাহায্য প্রার্থনার মধ্য দিয়ে গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করা।

চার. ভ্রমণে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া উচিত। ‘সুবহানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিন, আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সাফরিনা হাজাল বিররা ওয়াত তাকওয়া, ওয়া মিনাল আমালি মা তারদা, আল্লাহুম্মা হাউইন আলাইনা সাফারনা হাজা, ওয়াতভি আন্না বু’দাহু, আল্লাহুম্মা আংতাস সাহিবু ফিস সাফরি ওয়াল খলিফাতু ফিল আহলি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ওয়া’সা-ইস সাফরি, ওয়া কা’বাতিল মানজারি, ওয়া ছু-ইল মুনকলাবি ফিল মালি ওয়াল আহলি।’

পাচঁ. খুব বেশি বিপদে না পড়লে একা একা ভ্রমণ না করা। কমপক্ষে দুজন মিলে যাত্রা করা। এতে মানুষের মনোবল বেশি থাকে, কোনো সমস্যায় পড়লে পাশে থাকার মতো অন্তত একজন পরিচিত লোক থাকে।

ছয়. যেকোনো যানবাহনে আরোহণের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে যাত্রা শুরু করা।

সাত. গাড়িতে বসার পর তিনবার ‘আল্লাহ আকবার’ পড়ে এই দোয়া পড়া : সুবহানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিন, ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনকালিবুন।

আট. নৌকা বা জাহাজযোগে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই দোয়া পড়া, ‘বিসমিল্লাহি মাজরিহা ওয়া মুরসাহা, ইন্না রাব্বি লা গাফুরুর রাহিম। ’

নয়. ভ্রমণ অবস্থায় যানবাহন যখন ওপরের দিকে ওঠে তখন ‘আল্লাহু আকবার’ আর যখন নিচের দিকে নামে তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়া। যেমন, বাসগুলো যখন ফ্লাইওভারে বা ব্রিজে ওঠে তখন ‘আল্লাহু আকবার’ আর যখন ফ্লাইওভার বা ব্রিজ থেকে নিচে নামে তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়া যেতে পারে।

দশ. গন্তব্যে পৌঁছার পর তিনবার ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহ’ পাঠ করা। ভ্রমণের প্রয়োজন পূরণ হলে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসা উচিত। অযথা দেরি করা ঠিক নয়।

এগারো. মুসাফিরের জন্য ইসলামী শরিয়তে কিছু শিথিলতা দেওয়া হয়েছে। তাদের চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো দুই রাকাত পড়তে হবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত চার রাকাতের নামাজগুলো চার রাকাতই পড়ে তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং তাকে নামাজ আবার পড়তে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১)

মুসাফিরদের জন্য তার যানবাহন চলন্ত অবস্থায় বা তাড়াহুড়া থাকলে ফজরের সুন্নাত ছাড়া অন্যান্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা না পড়ার সুযোগ আছে। তবে স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়তে হবে। (ইলাউস সুনান : ৭/১৯১, রদ্দুল মুহতার : ১/৭৪২)

যাদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করা উচিত

ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়িতে যাওয়ার আগে প্রত্যেকের জন্য সামান্য কিছু হলেও উপহার নিন। তবে সময় বা অর্থের সংকট থাকলে অন্তত ঈদের দিন বাড়ির শিশুদের ঈদি দিতে পারেন। এতে তাদের ঈদটা আরও আনন্দময় হবে। এ ছাড়া ঈদের নিজেদের কেনাকাটা আনন্দের পাশাপাশি গরীব দুঃখীর প্রতিও খেয়াল রাখা উচিত। ঈদের সময় অপ্রয়োজনীয় খাতে অর্থ ব্যয় না করে তা দিয়ে সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যেতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিয়ানমারে বৌদ্ধদের উৎসবে জান্তার বিমান হামলায় নিহত ৪০

আ.লীগের কর্মী-সমর্থকদের জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেন হাদি

তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারে ভুল উদ্ধৃতি সংশোধনের আহ্বান টিআইবির

‘আবরারের স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে অনেকের গাত্রদাহ দেখেছি’

সৌন্দর্যবর্ধনে সাভার উপজেলা প্রশাসনের নানা উদ্যোগ

ছেলের দায়ের করা মামলায় বাবাসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে কোরআন অবমাননা, সিএমপির জরুরি সতর্কবার্তা

জাতীয়করণ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি তারেক রহমানের বার্তা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

খেলা শেষ হতেই রেফারির ওপর হামলা

১০

জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের জন্য সুখবর

১১

আদালতের ‘ন্যায়কুঞ্জে’ খাবার হোটেল, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে উচ্ছেদ

১২

অ্যানথ্রাক্স ছড়াচ্ছে উত্তরাঞ্চলে, রংপুর-গাইবান্ধায় সরেজমিনে তদন্ত শুরু

১৩

চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা / জানলে যে সব বলে দিতে হবে সেটা তো না

১৪

শেখ হাসিনা ও কামালের নির্বাচনী যোগ্যতা নিয়ে যা জানা গেল

১৫

ছাত্রদলকে সমর্থন জানিয়ে চাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন দুই প্রার্থী

১৬

খুন করে আল্লাহর ভয়ে নামাজ পড়ে ক্ষমা চান হত্যাকারীরা

১৭

ইংলিশদের বিপক্ষে মারুফাদের লড়াই করে হার

১৮

পিআর নিয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব : চরমোনাই পীর

১৯

ফুটবলকে বিদায় বললেন মেসির আরও এক সতীর্থ

২০
X