সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সভাপতি এম. হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ অবমাননার জন্য কেন আদালত অবমাননার দরখাস্ত দায়ের করা হবে না, তা জানতে চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (২৪ জুলাই) জনৈক হারুন-অর-রশীদ এবং অন্যানদের পক্ষে তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড মো. হেলাল আমিন এ নোটিশ পাঠান।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় কারাবন্দী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার জামিন প্রশ্নে আবেদন শুনানি আপিল বিভাগ চার মাসের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করার প্রেক্ষিতে সুজন সভাপতি ও সম্পাদক গত ১২ জুলাই এক বিবৃতি প্রদান করেন। এই বিবৃতির অংশবিশেষ উল্লেখ করে আইনি নোটিশে দাবি করা হয়েছে যে, এতে আপিল বিভাগের অবমাননা হয়েছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, সরকারবিরোধী প্রচারণা ও কটূক্তির অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে মাসের পর মাস জামিন না দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গত বুধবার (১৯ জুলাই) সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সই করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, খাদিজার বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলার জামিন শুনানি চার মাসের জন্য মুলতবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ১৭ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের পর থেকে খাদিজার জামিনের আবেদন আদালতে বারবার খারিজ হচ্ছে। খাদিজাকে জামিন না দেওয়া চরম অমানবিক, যা নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব ও বিচারবিভাগের স্বাধীনতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
উল্লেখ্য, খাদিজাতুল কুবরার জামিনের ব্যাপারে গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনা ও মতামত প্রকাশিত হয়েছে। গত ২১ জুলাই খাদিজার জামিন শুনানি মুলতবির ঘটনায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, গণসংস্কৃতি কেন্দ্র, সংহতি সংস্কৃতি সংসদসহ ৩১টি সাংস্কৃতিক সংগঠন উদ্বেগ জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা বিনা বিচারে প্রায় এক বছর ধরে কারাবন্দী। একজন শিক্ষার্থীর জীবনে যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, সেখানে খাদিজার মতো একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বিনা বিচারে এক বছরের বেশি সময় আদালতের আদেশের কারণে কারাগারে বন্দী থাকতে দেখে দেশের কোটি কোটি জনগণের মতো আমরাও হতবাক, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ।’
এর আগে গত ১৪ জুলাই খাদিজাকে জামিন না দেওয়ার ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের ‘রাষ্ট্রের দাপটে অসহায় খাদিজা’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলো’তে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধে ড. আসিফ নজরুল দাবি করেন যে, ‘জামিন কোনো অভিযোগ থেকে মুক্তির আদেশ নয়, এটি দোষ প্রমাণের আগে শর্ত সাপেক্ষে মুক্ত থাকার এবং সেভাবে বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ। জামিন না দেওয়া মানে বিচারের আগেই কাউকে শাস্তি দেওয়া। মূলত এই বিবেচনায় উন্নত আইন ব্যবস্থায় সিরিয়াল কিলার বা ভয়াবহ সন্ত্রাসী ছাড়া কাউকে জামিন না দেওয়ার ঘটনা ঘটে না। আমাদের দেশের আইনেও জামিন কাউকে দেওয়া যাবে না বলা নেই। এ দেশে ব্রিটিশ আমলে করা ফৌজদারি আইনে কম গুরুতর মামলায় জামিন পাওয়া হচ্ছে মানুষের অধিকারভুক্ত বিষয়। গুরুতর মামলায়ও কাউকে জামিন দিতে সেখানে নিষেধ করা হয়নি; বরং অল্পবয়স্ক, নারী ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জামিনের আবেদন সুবিবেচনা করার নির্দেশনা আছে। প্রতিটি বিবেচনায় খাদিজার জামিন পাওয়ার কথা বহু আগে উল্লেখ আছে।’
এছাড়াও গত ১১ জুলাই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘নারীপক্ষ’ খাদিজার পক্ষে বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘খাদিজাতুল কুবরার গ্রেপ্তার ও কারাবাস, বার বার জামিন আবেদন বাতিল বা স্থগিত হওয়া এবং স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন শুনানী ৪ মাস পর্যন্ত মুলতবী ঘোষণা চরম অমানবিক এবং আইন ও নীতি বিরুদ্ধ, যা বিচারবিভাগের স্বাধীনতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। নারীপক্ষ’র দাবি, এই সব বিষয় বিবেচনা ও পর্যালোচনা করে খাদিজাতুল কুবরাকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক।’
মন্তব্য করুন