রাজধানীর শাহবাগে ‘সম্প্রীতির সমাবেশ’ থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্য এবং মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন দেশ গড়ার শপথ নিয়েছে সব ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণিপেশার ছাত্র-জনতা। এ ছাড়া জনগণের অধিকার রক্ষা, ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে সর্বস্তরের মানুষ।
বুধবার (১৪ আগস্ট) শাহবাগ মোড়ে ‘একতার বাংলাদেশ’ নামক একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
‘একতার বাংলাদেশ’-এর মুখপাত্র তাহমীদ আল মুদাসসিরের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, সাইফুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আবু সায়েম, অধ্যাপক শাফী মোহাম্মদ, ফাদার তপন ডি রোজারিও, দৈনিক কালবেলা পত্রিকার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা প্রমুখ।
সমাবেশে অংশ নেওয়া সবাইকে নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিক। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমার প্রতিটি পদচিহ্ন হবে ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখার একেকটি প্রতিরূপ। সাম্য এবং মানবিক মর্যাদা হবে আমার রাষ্ট্রের প্রতিটি অংশীজনের সঙ্গে যোগাযোগের সেতুবন্ধন। আমার কাছে জনগনের সার্বভৌম ক্ষমতার যথাযথ বাস্তবায়নই হবে ব্যক্তিগত স্বার্থকে সমুন্নত রাখার একমাত্র রক্ষাকবজ। বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আমার কার্যক্রম এবং চিন্তার পরিসর জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছাকে সব সময় ক্ষমতায়িত করবে। আমি জীবনের যে কোনো পর্যায়ে বাংলাদেশের জাতীয় মর্যাদা এবং সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করব না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যদি নিপীড়নমূলক হয়ে উঠে বা হয়ে উঠতে চায় তার বিপরীতে দাঁড়ানো হবে আমার একান্ত দায়িত্ব। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, সব ধরনের বিভাজনের পথ রুদ্ধ করে বাংলাদেশ হবে সব মানুষের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণের উর্বর ভূমি।
সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে ঢাবি শিক্ষক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ দেশে মুসলমান হিন্দু বলে কোনো ভেদাভেদ ছিল না, থাকবেও না। আজকের এই সম্প্রীতির সমাবেশ থেকে আমাদের শপথ আমাদের এই বন্ধন অটুট থাকবে। ন্যায়ের পক্ষে, দেশের তরে আমরা সবাই এক থাকব।
অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, যতদিন দেশ থেকে কুচক্রী মহল বিতাড়িত না হবে, ততদিন আমাদের পাহারায় থাকতে হবে। কোনোভাবেই কুচক্রী মহলকে ছাড় দেওয়া যাবে না। দিল্লিতে পরিত্যাক্ত স্বৈরাচার আছেন, অথচ তার ছেলে জয় বলেন, তার মা পদত্যাগ করেনি। সেখান থেকে তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সতর্ক থাকতে হবে। অবশ্যই ভেতরের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা আমাদের দেশের একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনকে লেলিয়ে দিয়েছে। আমরা সবাই মিলে তাদের রুখে দিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও দিব। তারাই আমাদের আলাদা করে বর্ণায়িত করেছে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান হিসেবে। আমাদের দেশ সম্প্রীতির দেশ, কখনো সাম্প্রদায়িক হতে পারে না।
দৈনিক কালবেলা পত্রিকার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, আমরা একতার বাংলাদেশ চাই। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কোনো হামলা বা আক্রমণের বিচার পায়নি হিন্দু সমাজ। এ দেশ আমার, আমাদের, সবার। আমরা এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই না। আমরা সবাই মিলেই একটি পরিবারের মতো বসবাস করতে চাই।
এ ছাড়া সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার ও সারজিস আলম।
মন্তব্য করুন