দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ মূলত জুনে শুরু হলেও এ বছর মৌসুম আসার আগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সব রেকর্ড ভেঙেছে। এডিসের বিস্তার ঠেকাতে না পারায় পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। মিনিটে মিনিটে হাসপাতালে আসছে রোগী। হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করতে রোববার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবনে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় শুধু সিটি করপোরেশন নয়, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাউন্সিলর ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টাও জরুরি। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ, এডিস মশার কামড়ে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গু হয়ে থাকে। শুধু বাংলাদেশ নয় ২০১৯ সালেও বিশ্বের ১৫২টি দেশের মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। এ বছর হয়ত সেই পরিসংখ্যান আরও বাড়তে পারে। তবে আগের চেয়ে বর্তমানে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। আর আমাদের উত্তর-দক্ষিণের মেয়রের নির্দেশে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে দিন দিন মানুষ আরও সচেতন হচ্ছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা জানুয়ারি মাসেই মিটিং করেছি, সে সময় আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে মেশিন, ওষুধপত্র ও ডেঙ্গু মোকাবিলায় দুই সিটিতেই পর্যাপ্ত লোকবল (মশক নিধন কর্মী) আছে কিনা আলোচনা করেছি। তারপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন উদ্যোগ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখছি। দুঃখজনক হলেও সত্য বাসাবাড়ির চাইতে সরকারি অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজে এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সফল হব।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এই পুরো মৌসুমে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে পরিচালিত কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে, আমরা চালিয়ে যাব। আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে মাধ্যমে আমরা সকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের এই চলমান কার্যক্রম তদারকি করে থাকি, সেজন্যই আমরা কিন্তু ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। অনেকেই ঢালাওভাবে অনেক মন্তব্য করেন। কিন্তু আমরা যদি গত সাত দিনের পরিসংখ্যান দেখি তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
তিনি জানান, গত ২২ শে জুলাই ২০২৩ সাল থেকে ২ হাজারের ঊর্ধ্বে রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ২২ তারিখে সারা বাংলাদেশে ২ হাজার ২৪২ জন রোগী পাওয়া গেছে। সেখানে আমাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫৫ জন রোগী আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। ১৫৫ জনের ঠিকানাতে, স্থাপনাতে কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য স্থাপনাতেও কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। ২৩ তারিখে দেশব্যাপী রোগী ছিল ২ হাজার ২৯২ জন। সেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২২ জন। ২৪ তারিখে সারাবাংলাদেশ ২ হাজার ২৯৩ জন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার রোগী ১৩৩ জন। ২৫শে জুলাই সারাদেশে ২ হাজার ৪১৮ জন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এলাকায় ১২২ জন। ২৬ শে জুলাই ২ হাজার ৬৫৩ জন- সারা দেশব্যাপী। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১২৩ জন। ২৭শে জুলাই সারাদেশে ২ হাজার ২৬১ জন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১০০ জন।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেন, আমাদের কার্যক্রম যে সফল হয়েছে, ঢাকাবাসী যে সুফল পাচ্ছে -- এটি তারই নিদর্শন। আমরা এই পর্যায়ে আমাদের রোগীর সংখ্যা ১০০-১৫০ এর ঘরে রাখতে পেরেছি। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের সকল কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে আমাদের কর্মীবাহিনী নিরলস পরিশ্রম করছে। সেজন্য আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। আমরা পুরো মৌসুমে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাব।
শেখ তাপস বলেন, ডেঙ্গু রোগ শুধু আমাদের দেশে আছে তা নয়, শুধু ঢাকায় আছে তা নয়। এটা অন্যান্য দেশেও আছে। সকল ট্রপিক্যাল কান্ট্রি, সকল দেশেই এই রোগ আছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও এই রোগ আছে। সুতরাং বহির্বিশ্বের প্রেক্ষাপটে আমাদের কর্মপরিকল্পনা যেভাবে সাজিয়েছি, এটি সারা বিশ্বে স্বীকৃত। সিটিসি কর্তৃক সুপারিশকৃত যে সোর্স রিডাকশন তথা উৎসস্থল বিনষ্ট করতে হবে, ধ্বংস করতে হবে। পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। পানির উৎস ধ্বংস করতে হবে।
এদিকে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষ সভা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কাউন্সিলররা নিজেদের ওয়ার্ডের জনগোষ্ঠীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাউন্সিলররা মাঠে থাকলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
মেয়র বলেন, কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে যে টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটি নিজ নিজ এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্যাপক প্রচারণা চালাবে। সিটি করপোরেশন থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আর্ট বুক ছাপানো হয়েছে কাউন্সিলররা প্রতিটি ওয়ার্ডের সকল কিন্ডারগার্টেন ও প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এটি বিতরণ করবে।
আতিকুল ইসলাস বলেন, নির্মাণাধীন ভবনে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। তাই কাউন্সিলররা তাদের নিজেদের ওয়ার্ডের নির্মাণাধীন ভবন মালিককে চিঠি দিবে যেন পানি জমে না থাকে। সেই সঙ্গে নির্মাণাধীন ভবনের তালিকা প্রনয়ণ করবে। এই তালিকা অনুযায়ী আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গঠিত র্যাপিড একশন টিম পরিদর্শন করবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে। কোন কোন বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী আছে সেটির তালিকা প্রনয়ণ করে আশেপাশে লার্ভিসাইডিং বাড়াতে হবে।
আরও পড়ুন : ডেঙ্গু এ সময়ে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ : তাজুল ইসলাম
মন্তব্য করুন