চিকিৎসকের অবহেলা ও মিথ্যাচারে নবজাতকের মৃত্যু ও মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর গ্রিনরোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
রোগীর স্বামী ইয়াকুব আলী সুমনের অভিযোগ, সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার অধীনে তার স্ত্রীকে ভর্তি করানো হয়। ওই চিকিৎসকের অধীনেই তার স্ত্রীর ডেলিভারি হওয়ার কথা থাকলেও তিনি দেশে ছিলেন না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন করে এবং ডেলিভারি করে।
সুমন জানান, তার স্ত্রী গত তিন মাস ধরে চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার অধীনে নিয়মিত চেকআপ করাচ্ছিলেন। তার শরীরের অবস্থা নরমাল ডেলিভারির জন্য ঠিক ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টাও করেছিল।
যা ঘটেছিল
গত শুক্রবার (৯ জুন) রাত ১২টা ৫০ মিনিটে ডেলিভারির জন্য চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার অধীনে সুমনের স্ত্রীকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সে সময় ড. সংযুক্তা সাহার বদলে উপস্থিত ছিলেন ড. মিলি। তিনি কোনো চেকআপ ছাড়াই তাকে কাটাছেঁড়া করেন।
সুমনের ভাষ্যমতে, ডেলিভারির করার জন্য তারা পেট কাটতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হতে থাকে এবং রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অজ্ঞান অবস্থায় সিজার করে বের বাচ্চা বের করা হয়। ফলে বাচ্চার হার্টবিট কমে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে নবজাতককে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
সুমন জানান, এ অবস্থায় তিনি বারবার ড. সংযুক্তার খোঁজ করলে কর্তৃপক্ষ জানায় তিনি দেশের বাইরে আছেন। এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে।
সেন্ট্রাল হাসপাতালে সিসিইউ ও এনআইসিইউ না থাকায় সুমনের স্ত্রীকে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। এরপর সেন্ট্রাল হাসপাতাল সুমনকে জানায় তাদের বাচ্চাটি মারা গেছে। এ অবস্থায় সুমন ৯৯৯ কল করে একটি সাধারণ ডায়রি করেন।
রোগীর বর্তমান অবস্থা
সুমন বলেন, এখনো পর্যন্ত আমার স্ত্রীর জ্ঞান ফেরেনি। আজ পর্যন্ত কোনো উন্নতি নেই। ডাক্তার বলেছেন তার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনাও কম। কারণ, আমার স্ত্রীর কিডনি, লিভার, হার্ট এবং অন্য কোনো অংশ কাজ করছে না। এর মধ্যে সে ব্রেন স্ট্রোকও করেছে, তার সঙ্গে রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছে না। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ার কারণে শরীরের অন্য অংশগুলো কাজ করতে ব্যর্থ, গত চার দিন ধরে প্রচুর পরিমাণে রক্ত দিতে হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিঃশ্বাস চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত রক্ত দিতে হবে।
এদিকে এ ঘটনায় চিকিৎসক-নার্স এবং আয়াসহ ১১ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন সেন্ট্রাল হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ডা. আফসানা বিনতে গাউস।
মন্তব্য করুন