আবারও আন্দোলনে নামতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদবঞ্চিত কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খানের আশ্বাসের কয়েক মাস পরও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এই কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছেন তারা। এবার তারা শাটডাউন কর্মসূচি ও ব্লকেড আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, দেশের বৃহত্তম বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতি বঞ্চিত ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তাগণ দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে পদোন্নতি পাওয়ার আশায় দাবি উত্থাপন করে আসছেন। কিন্তু দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত না করায় মানববন্ধন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় নিজেদের দাবি আদায়ের কর্মসূচির কারণে ব্যাংকের গ্রাহকরা যেন তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে বিবেচনায় নিয়ে তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অবস্থান নেন। তাদের এই যৌক্তিক দাবিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন ব্যাংকটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান। এসময় অন্যান্য পদের ন্যায় তিন বছরে পদোন্নতি প্রদান, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ন্যায় ৪র্থ গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে ভাইবা গ্রহণ পদ্ধতি বাতিল করে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের (এসিআর) ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদান, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে পদোন্নতি প্রদানসহ বেশ কিছু আশ্বাস দেন। তার দ্রুততম সময়ে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আশ্বাসে কর্মকর্তাগণ মানববন্ধন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
দীর্ঘ তিন মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাসের কোনো প্রতিফলন না হওয়ায় কর্মকর্তাগণ পুনরায় গত বছরের ৩০ নভেম্বর পুনরায় মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেন। এই ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রায় সকল শাখা থেকে আগত ১২০০ কর্মকর্তা প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অবস্থান নেন। পরবর্তীতে গত ১ ডিসেম্বর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলীর আশ্বাসে পদোন্নতি সংক্রান্ত আশ্বাস নিয়ে তারা পুনরায় কর্মস্থলে ফিরে যান।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পদোন্নতি বঞ্চিত অফিসারদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে পরবর্তীতে যোগাযোগ করলে তারা জানান যে, সুপারনিউমারারি এর মাধ্যমে মার্চ মাসের মধ্যে সকল পদোন্নতি বঞ্চিত ও পদোন্নতিযোগ্য অফিসারদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। অথচ সবগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সুপারনিউমারারি এর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদোন্নতি দিয়েছে। অগ্রনী ব্যাংক পিএলসিতে ৩০৮৪ জন, জনতা ব্যাংক পিএলসিতে ৫৭৯ জন, রূপালী ব্যাংক পিএলসিতে ১৩৬৮ জন এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসিতে ২২৮৫ জন অর্থাৎ সর্বমোট ৭৩১৬ জন সুপারনিউমারারির মাধ্যমে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন।
পদোন্নতি বঞ্চিত অফিসাররা মনে করেন, যেখানে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ২-৩ কর্মদিবসের মধ্যেসুপারমিউমারারি পদ্ধতিতে পদোন্নতি প্রদান করেছেন সেখানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এহেন উদাসীনতা তাদের কর্মীবান্ধবহীন কর্মপরিবেশ এবং কর্তৃপক্ষের অনীহার বহিঃপ্রকাশ। এছাড়া তারা আরও মনে করেন ৫ই আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন আসলেও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ফ্যাসিস্ট আমলে সুবিধাভোগীগণ বহাল তবিয়তে নিজ নিজ অবস্থানে অপরিবর্তিত থাকার পাশাপাশি নতুনভাবে পদায়ন নিয়েছেন যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে অন্যতম বাধা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সকল ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তাদের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিশ্চিত করতে পারলেও, আমাদের ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শুধু ১০ম গ্রেডের অফিসারদের দমন পীড়নে মেতে উঠেছেন। কর্তৃপক্ষ বরাবরই পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছেন, যেটি প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক বড় বাঁধা তৈরি করবে। সকল পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা মনে করেন যে, প্রতিষ্ঠানের মোট জনবলের প্রায় ৫২ শতাংশ অর্থাৎ সিংহভাগ কর্মকর্তা ১০ম গ্রেডের, তাদের পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রেখে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কখনোই বৃহৎ অর্জন বা লক্ষ্যপূরণ সম্ভব নয়।
পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক এবং উপমহাব্যবস্থাপক মহোদয়গণের সঙ্গে পদোন্নতির ব্যাপারে একাধিবার আলোচনা হয়, কিন্তু তারা বারবার আশ্বাস দিয়ে সুকৌশলে সময় ক্ষেপণের মাধ্যমে ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখেন। তাই তারা বাধ্য হয়ে চলতি বছরের মে মাসের যেকোনো কর্মদিবসে পুনরায় কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে যাচ্ছেন।
তারা প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি, কর্মবিরতি, শাটডাউন কর্মসূচি ও প্রধান কার্যালয় ব্লকেড সহ আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। পদোন্নতির ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ সকল কর্মসূচি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য চলমান থাকবে বলেও জানান তারা।
উল্লেখ্য আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন শহীদ জিয়ার আদর্শে বলীয়ান সাবেক ছাত্রদলের নেতৃস্থানীয় অফিসারবৃন্দ, যারা অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার ও প্রতিবাদ করে আসছেন।
মন্তব্য করুন