কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫, ১১:১৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ব্যালটের ম্যান্ডেট প্রতিষ্ঠা করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখ্য অগ্রাধিকার : আনসারি

মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। ছবি : সংগৃহীত
মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। ছবি : সংগৃহীত

জনগণের ব্যালটের ম্যান্ডেট প্রতিষ্ঠা করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটা মুখ্য অগ্রাধিকার বলে মন্তব্য করছেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

‘দেশে একটা কাঙ্ক্ষিত সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ক্ষমতায় থাকার একটা প্রচ্ছন্ন দাবি উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি আলজাজিরার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ‘এই সরকার চলে যাক জনগণ এমন বলছে না’ মর্মে কথা বলেছেন। অপরদিকে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল এখনই নির্বাচন চাচ্ছে। আপনি কোনটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?’

এমন প্রশ্নের উত্তরে মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, আলজাজিরার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পুরো বক্তব্য হয়তো আপনি শোনেননি। উনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) বলেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ এই অবস্থায় আমাদের চাচ্ছে। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দিকে আমাদের যেতে হবে, অলরেডি একটি সময়সীমার কথাও বলেছেন তিনি। জনগণের ব্যালটের ম্যান্ডেট প্রতিষ্ঠা করা এই সরকারের একটা মুখ্য অগ্রাধিকার।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা ও বর্তমানের আন্তর্জাতিক অবস্থান দীর্ঘকাল বাংলাদেশে ভোটবিহীনভাবে শাসন করার অভিপ্রায় প্রফেসর ইউনূসের নেই সেটা আমি হলফ করে বলতে পারি। বিষয়টি হলো তার মতো একজন বরেণ্য ও উঁচুমাপের ব্যক্তিকে আমরা কতটুকু কাজে লাগাতে পারি এটাই চিন্তাভাবনার বিষয়। এই সুযোগটা বাংলাদেশে আর আসবে না। আমাদের প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে, জাতির প্রয়োজনে ভোট হয়ে গেলেও কিন্তু উনার দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না। ধরেন একটি ভোট হয়ে গেল, একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো। আমি মনে করি নির্বাচিত সেই সরকারেও প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ব্যক্তিকে দেশের জন্য প্রয়োজন। দেশের প্রয়োজনে বৃহত্তর স্বার্থে তাকে কাজে লাগানো উচিত। উনি না চাইলেও তাকে কাজে লাগানো উচিত।

‘আগস্ট বিপ্লবের পরও প্রশাসনের ফ্যাসিবাদের দাপট আমরা লক্ষ্য করছি। অনেকেই মনে করছেন এখনো আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ প্রশাসনে কাজ করছে। আপনি এ ব্যাপারে সরকারকে কী পরামর্শ দেবেন?’

এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের ছায়া রয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। যার কারণে দেখছি অনেকেরই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক ভালো ভালো কাজ করতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে। আপনাকে বুঝতে হবে দেশে দীর্ঘকাল থেকে একটি স্বৈরতান্ত্রিক, অনিয়মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম ছিল। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার বহুস্তরে বসানো সেটআপ হঠাৎ ভেঙে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনে যাদের সঙ্গে আমার কথা হয়, আমি সেটা বলার চেষ্টার করি যে, অতীতের ফ্যাসিবাদী সরকারে যারা ফ্রন্ট লাইনে ছিল তারা যাতে এখন সরকারের ফ্রন্ট লাইনে না থাকে। অন্তত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যাতে তারা অন্তর্ভুক্ত না থাকে। অন্তত তাদের যাতে চিহ্নিত করা যায় এমন দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত।

আনসারি বলেন, বিগত সরকারের সঙ্গে অনেকে কিন্তু উপযাজক হয়ে কাজ করেছে। বুলেট চালানোর ক্ষেত্রে, গুলি করার ক্ষেত্রে যে বা যারা সরকারের তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করেছে তারা নিজেরা গুরুতর অপরাধ করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এদের অনেকেই সরকারের উপযাজক হিসেবে কাজ করেছে, সরকারকে খুশি করার জন্য, নিজের সুবিধার নেওয়ার জন্য। এসব লোককে আইডেন্টিফাই করা উচিত। এরা যাতে সম্মুখ স্থানে, পলিসি মেকিংয়ে না থাকে। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনব্যবস্থার মধ্যে প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘাপটি মারার লোক আছে। অনেকে আবার বাধ্য হয়ে অনেক কাজ করেছে। তাদেরকে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। অনেকে আবার অনিচ্ছায় করেছে, চাপের কারণে করেছে। কিন্তু কেউ কেউ ইচ্ছায় করেছে। সুতরাং কারা ইচ্ছায় করেছে, কারা অনিচ্ছায় করেছে তার পার্থক্য নির্ণয় করা উচিত। আমি মনে করি সরকারের শুরুতে এ কাজ করতে বেগ পেতে হয়েছে। সময়ের ব্যবধানে এখন আইডেন্টিফাই খুবই সহজ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এখন অনেকটাই বুঝা যায় কে কি? আরেকটা প্রবণতা লক্ষ্য করছি, কে কাকে স্বৈরাচারের দোসর বলবে এটার এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। একজন নেতার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তির আলাদা ছবি প্রচার করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছবি প্রচার করে একজন আরেকজনকে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করছেন। শুধু প্রচার করছে না কেউ কেউ বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠাচ্ছেন। হয়তো ফ্যাসিবাদের দোসর যিনি, তিনি আবার অন্যকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলে নিজেকে আড়াল করতে চাচ্ছেন। এই দোসর এবং ননদোসর নিয়ে ইন্টারনালি তাদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। কাউকে ঠেকানোর জন্য প্রতিপক্ষ এটা করছেন। আপনাকে যদি আমি অপছন্দ করি, ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা থাকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটাও ব্যবহার করা হচ্ছে। আপনাকে আমি একটা ট্যাগ দিয়ে দিচ্ছি। আরেকটা হলো রিয়েল অর্থে অতীতে ট্যাগ দেওয়ার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, যা ছিল খুবই ভয়ঙ্কর। আমার মনে হয় সরকারে যারা দায়িত্বে আছেন তারা বিষয়গুলো দেখে শুনেই কাজ করছেন। সরকারের লোকজন সবক্ষেত্রেই যে শতভাগ সফল হয়েছেন সেটা আমি বলব না।

প্রসঙ্গত, মুশফিকুল ফজল আনসারী সিনিয়র সচিব পদ মর্যাদায় মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত আছেন।

মুশফিকুল ফজল আনসারী ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব ছিলেন। এ ছাড়া দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনীতিক প্রতিবেদকও ছিলেন তিনি।

জাতিসংঘ এবং হোয়াইট হাউসের প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বাচন জালিয়াতি এবং আওয়ামী দুঃশাসন নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন করতেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শেষ কয়েক বছরে দেশের নানা পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। তবে এসব তুলে ধরতে গিয়ে তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়ে দেশ ছাড়েন তিনি।

মুশফিকুল ফজল আনসারী যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাস্ট নিউজ বিডি ডটকম সম্পাদনার পাশাপাশি স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের সদরদপ্তর ও হোয়াইট হাউসে দায়িত্ব পালন করেন।

বার্তা সংস্থা ইউএনবিসহ আরও কয়েকটি মিডিয়ায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি। বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্টও ছিলেন। ব্রিটেনের দ্য টাইমস ও সানডে টাইমস পত্রিকায় ওয়ার্কএক্সিপিরিয়েন্স রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন।

মুশফিকুল ফজল আনসারি গত ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ফেরেন। দেশের সাংবাদিকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাকে সংবর্ধনা দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্যারিসে আর্সেনালের স্বপ্নভঙ্গ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে পিএসজি

স্বাস্থ্য পরামর্শ / থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বাঁচাতে প্রয়োজন রক্তদাতাদের গ্রুপ

দৈনিক ভিত্তিক সাময়িক শ্রমিক নীতিমালা বাতিলের দাবি

এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কেউই বিজয়ী হবে না : সাইফুল হক

ঘটনা তদন্তে কমিটি / নতুন বাড়ি করার জন্য বটগাছটি বিক্রির দাবি মালিকের

সীমান্তের গেইট খুলে ১৫ বাংলাদেশিকে ‘পুশ ইন’ বিএসএফের

এনসিপি স্বাস্থ্য উইং প্রস্তুতি কমিটি গঠন

শেখ মুজিবের গ্রাফিতি মুছে দিল ঢাবি ছাত্রদল

হাসপাতাল থেকে মাকে নিয়ে বাসায় গেলেন জুবাইদা রহমান

গুরুতর অসুস্থ প্রবাসীকে মালদ্বীপ দূতাবাসের বিমানের টিকেট হস্তান্তর

১০

আসামি ছিনিয়ে নেওয়ায় মামলা, অভিযানে আটক ৭

১১

পরিচয় মেলেনি কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতকের, বেড়ে উঠবে শিশু নিবাসে

১২

পরীক্ষায় উত্তর বলে দেওয়ায় আটক ১০ শিক্ষক

১৩

তরুণদের মেধা, জ্ঞান ও স্বপ্নকে ধারণ করতে চায় বিএনপি : বুলু

১৪

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত, সিলেটে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ

১৫

চট্টগ্রামে জোড়া খুন / ‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদের অন্যতম সহযোগী ৫ দিনের রিমান্ডে

১৬

প্রতিটি রক্তবিন্দুর প্রতিশোধ নেওয়া হবে : শেহবাজ

১৭

দুই শিক্ষকসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে বেরোবি প্রশাসনের মামলা

১৮

স্বামীর সঙ্গে সংসার করার দাবিতে স্ত্রীর অনশন

১৯

‘ভারত থেকে এভাবে ‘পুশ-ইন’ সঠিক প্রক্রিয়া নয়’

২০
X