কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫, ০৪:২৯ এএম
আপডেট : ১১ মে ২০২৫, ০৭:৩৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

সরকারের পদক্ষেপ ইতিবাচক, সবাইকে ঘরে ফেরার আহ্বান হাসনাতের 

বক্তব্যকালে হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া
বক্তব্যকালে হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া

ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে নেওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এ সময় জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত সবাইকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তবে ঘোষণাপত্র প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত সবকিছু পর্যবেক্ষণে রাখার আহ্বানও জানান হাসনাত।

শনিবার (১০ মে) মধ্যরাতে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আগামীকাল সরকারি বন্ধ। আমাদেরকে বলা হয়েছে সোমবার (১২ মে) প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আমরা প্রজ্ঞাপন নিয়ে আনন্দ মিছিল করব। আপনারা এখন নিরাপদে যার যার বাসস্থানে ফিরে যান। তবে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত সবকিছু পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেব।

এর আগে, লিখিত বক্তব্যে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করার দাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক আমলে নেওয়ার ঘটনাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তবে আমরা মনে করি, এতটুকুই যথেষ্ট নয়। বিগত সময়েও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের টালবাহানা আমরা লক্ষ করেছি। এ ছাড়া আওয়ামী গণহত্যাকারীদের বিচারের দীর্ঘসূত্রিতাও আমরা দেখেছি।

তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা গণহত্যা, গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড-ধর্ষণ, ও জুলাই গণহত্যার পর যেখানে ত্বরিত গতিতে খুনি লীগের বিচার হওয়ার কথা ছিল। সেখানে আমরা দেখেছি অনেক জুলাই বিপ্লবী ও আহত যোদ্ধাদের মামলা নিচ্ছে না বিভিন্ন থানা। অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূলে; এমনকি রাজধানী শহরেও জুলাই যোদ্ধারা আওয়ামী গণহত্যাকারীদের দ্বারা হামলার শিকার হচ্ছে। উপরোক্ত বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান এবং পদক্ষেপ আমরা জানতে চাই।

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যকরী সংস্কার চাই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে জনতার পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তা আমলে নিয়ে সংস্কার কার্যক্রমে সরকারকে হাত দিতে হবে। দেশের প্রতিটি বিভাগে ট্রাইব্যুনালের অফিস স্থাপন করতে হবে; যাতে করে তৃণমূলে ফ্যাসিবাদের ভুক্তভোগী নাগরিকদের আইনি সেবা পেতে কোনো বেগ পেতে না হয়।

হাসনাত বলেন, আমরা আরও দেখছি- আওয়ামী গণহত্যাকারী এবং তাদের ফ্যাসিবাদের প্রতি সমর্থন উৎপাদনকারী সাংস্কৃতিক, মিডিয়া এবং অর্থনৈতিক ফ্রন্টগুলো এখনো তাদের স্ব-স্ব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থান ও চলমান আন্দোলনকে ভিলিফাই করতে এবং ‘দেশি-বিদেশি শক্তির চক্রান্ত’ হিসেবে উপস্থাপন করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা, যা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভুক্তভোগী এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য শাহাদাতবরণকারী সকল নাগরিকদের মানবিক মর্যাদার প্রতি চরম অপমান।

তিনি বলেন, আমরা আরও উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি, আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং পলাতক গণহত্যাকারীদের অর্থনৈতিক জোগান এখনো অটুট রয়েছে। যার মাধ্যমে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা এই বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুস্পষ্ট নীতিমালা জানতে চাই। আওয়ামী লীগের সকল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থাকে অর্ডিন্যান্স জারি করে রাষ্ট্রায়ত্ত ঘোষণা করে নাগরিকদের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।

এনসিপি এই নেতা বলেন, আমরা লক্ষ করছি- গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও এর ১৪ দলীয় অংশীদাররা; যারা বিগত ১৫ বছরে ভোটডাকাতির মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকার হরণ এবং ফ্যাসিবাদ কায়েমের পক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন জুগিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের সরকার হিসাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে চাই।

তিনি বলেন, আজ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রণয়ন ও জারি করতে সরকার ৩০ কার্যদিবস সময় চেয়েছে। কিন্তু ইতিপূর্বে ঘোষণাপত্র প্রণয়নে সরকারের টালবাহানা ও রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আমাদের মনে উদ্বেগ ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই- ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসাবে আমাদের ঐতিহাসিক সংগ্রামের বিবরণ, জুলাই গণহত্যাসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের শিকার ভুক্তভোগীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠাকরণ, জুলাই যোদ্ধাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের কথা আবশ্যিকভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। আমরা আরো দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক নির্বাচনের ঘোষণার পূর্বে আবশ্যিকভাবে বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

তিনি বলেন, চলমান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে জুলাই অভ্যুত্থানে তৈরি হওয়া জাতীয় ঐক্য নবায়নের সুবর্ণ সুযোগ আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল, পক্ষ, ও মত এবং সরকারকে উপরোক্ত তিনটি দাবি পরিপূর্ণ ও যথাযথভাবে বাস্তয়নে এবং জুলাই ঘোষণাপত্রে উপরোক্ত তিনটি দাবির যথাযথ প্রতিফলন রাখতে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই আমরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ, কড়া বার্তা ভারতের

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এক নেতা বহিষ্কার 

সব ধর্মের মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট থাকার প্রয়াস তারেক রহমানের

মা দিবসে সব মায়েদের শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে কুচক্রী মহল: আবু নাসের

সাবেক রাষ্ট্রপতি পালিয়েছেন, ব্যর্থতা অন্তর্বর্তী সরকারের : আমিনুল হক 

সরকারের পদক্ষেপ ইতিবাচক, সবাইকে ঘরে ফেরার আহ্বান হাসনাতের 

চট্টগ্রামের ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না গ্রেপ্তার

বৃষ্টির সুখবর, হতে পারে কালবৈশাখীও

জামায়াতে আমিরের সঙ্গে ‘জুলাই ২৪’ শহীদ পরিবার সোসাইটির মতবিনিময়

১০

বিএনপির কাছে সবার আগে বাংলাদেশ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব: মুন্না

১১

আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করলেন ইআবির ভিসি 

১২

গণহত্যাকারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে : আসিফ মাহমুদ

১৩

উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে হাসনাতরা

১৪

আ.লীগের বিচার ত্বরান্বিত করুন : জামায়াতে আমির

১৫

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন: নয়ন

১৬

রাজপথেই রয়েছেন আন্দোলনকারীরা

১৭

জুলাই ঘোষণাপত্র ছাড়া ঘরে না ফেরার সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারীদের 

১৮

তিন দফার একটি বাকি থাকতেও রাস্তা ছাড়বো না : হাসনাত

১৯

তারেক রহমানের মা ও শাশুড়ির আরোগ্য কামনায় দোয়া মাহফিল

২০
X