প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ঘটনার প্রকৃত তথ্য নিশ্চিত করতে দুজন উপদেষ্টা মাইলস্টোন কলেজ কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসেই একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে আহত ও মৃতের সংখ্যা জানানো হবে এবং তা কলেজের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।
বুধবার (২৩ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান তিনি।
প্রেস সচিব জানান, গতকাল তিনি মাইলস্টোন কলেজ পরিদর্শন করেছেন শোকাহত পরিবার, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি বলেন, এখনো সবাই ভয়াবহ ওই ঘটনার শোক ও আতঙ্কে ভুগছেন। পুরো কলেজ চত্বরেই বিরাজ করছিল এক বিষণ্ণ ও উত্তপ্ত পরিবেশ। অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে এবং নিহতের সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রকাশ হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
প্রেস সচিব আরও বলেন, ২০০২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশে ঘটে যাওয়া বহু বড় দুর্ঘটনার সংবাদ তিনি সরাসরি কভার করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, বাংলাদেশে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা গোপন রাখা প্রায় অসম্ভব। সাধারণত দুর্ঘটনার পরপরই পরিবারগুলো প্রিয়জনদের নিখোঁজ বলে জানায়। তবে হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা স্বজনদের খুঁজে পায়।
তিনি বলেন, মাইলস্টোন কলেজ চাইলে প্রতিদিনের উপস্থিতি খাতা বিশ্লেষণ করে সহজেই শনাক্ত করতে পারে কারা এখনো অনুপস্থিত রয়েছেন। সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে দুজন উপদেষ্টা কলেজ কর্তৃপক্ষকে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে আহত ও নিহতের সংখ্যা নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা হবে এবং কলেজের রেজিস্ট্রারের তালিকার সঙ্গে এসব তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। উপদেষ্টারা বিশেষভাবে পরামর্শ দিয়েছেন, কক্ষটির কার্যক্রমে বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদেরও সম্পৃক্ত করতে।
প্রেস সচিব জানান, আজকের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের অবস্থা নিয়ে নিয়মিত তথ্য দিচ্ছে এবং সেনাবাহিনীও এই উদ্যোগে সহায়তা করছে।
প্রেস সচিব জোর দিয়ে বলেন, সরকার নিহত বা আহতের প্রকৃত সংখ্যা গোপন করার কোনো কারণ বা উদ্দেশ্য রাখে না। তিনি জানান, গতকাল উপদেষ্টারা প্রায় নয় ঘণ্টা কলেজে অবস্থান করেছেন। পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষ্যে তারা কখনোই বলপ্রয়োগের পথ নেননি। যতক্ষণ প্রয়োজন ছিল, ততক্ষণ তারা ছিলেন, এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা বিদায় নেন।
তিনি বলেন, যেসব শিক্ষক-শিক্ষার্থী এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের জন্য জাতি গভীরভাবে শোকাহত। তাদের ‘শহীদ’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এটি একটি জাতীয় ট্র্যাজেডি। আমরা চাই, সবাই মিলে একযোগে কাজ করি যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। সরকার জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার এবং আকাশপথে দুর্ঘটনার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন