সুসংগঠিত ও স্বচ্ছ সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মচারীরা। তাদের দাবি, খসড়া সার্ভিস রুলে প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ী করার জন্য একটি বিতর্কিত ‘বিশেষ বিধান’ রাখা হয়েছে, যা নিয়মিত কর্মচারীদের স্বার্থের পরিপন্থি। এ ছাড়া এটি প্রচলিত আইন ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে ডিএমটিসিএল গঠিত হলেও ১৪ বছর পরও কোনো স্বতন্ত্র সার্ভিস রুল তৈরি হয়নি। সার্ভিস রুল না থাকায় কর্মীচারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ ও হতাশা। ২০১৯ সালে একটি খসড়া সার্ভিস রুল তৈরি করা হলেও, প্রকল্পের জনবলের অদৃশ্য চাপের কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি।
কর্মচারীরা জানান, এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন তারা। তবে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরে গতবছরের ১২ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপদেষ্টা ডিএমটিসিএলকে দ্রুত সার্ভিস রুল প্রস্তুত ও অনুমোদনের নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ৩ অক্টোবর ডিএমটিসিএলের ৬০তম বোর্ড সভায় ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি-বিধিমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। তবে, সেই সময়সীমা পার হয়ে গেলেও সার্ভিস রুল প্রণয়ন করা হয়নি, ফলে কর্মচারীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন। বর্তমানে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ এক মাসের মধ্যে সার্ভিস রুল প্রণয়নের আশ্বাস দেওয়ায় আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে।
কর্মচারীদের অভিযোগ, খসড়া সার্ভিস রুলের একাদশ অধ্যায়ে একটি ‘বিশেষ বিধান’ যুক্ত করা হয়েছে। এই বিধান অনুযায়ী, প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মচারীদের ডিএমটিসিএলের স্থায়ী জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করার এবং প্রকল্পে যোগদানের তারিখ থেকে তাদের কার্যকাল গণনা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত কর্মচারীদের মতে, এই বিধানটি অযৌক্তিক এবং প্রথা ও বিধিবিরোধী। তারা মনে করেন, এটি কার্যকর হলে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।
নিয়মিত কর্মচারীরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় এবং সরকারি নির্দেশনার উদ্ধৃতি দিয়ে এই বিশেষ বিধানকে অবৈধ বলে দাবি করেন। সুপ্রিম কোর্টের সিভিল আপিল নম্বর ৪৬০/২০১৭-এর রায়ে উন্নয়ন প্রকল্পের জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থায়ী করাকে ‘ব্যাক ডোর অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ বা পেছনের দরজা দিয়ে নিয়োগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি স্মারকে বলা হয়েছে- প্রকল্পের মেয়াদ শেষে অস্থায়ী কর্মচারীদের নিয়োগপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে অব্যাহতিপত্র হিসেবে গণ্য হবে।
ডিএমটিসিএলের নিয়মিত কর্মচারীরা এই ‘বিশেষ বিধান’ বাতিল করে দ্রুত আইনসম্মত একটি সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, আইন লঙ্ঘন করে প্রকল্পের কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে সার্ভিস রুল পাস করার প্রতিবাদে ডিএমটিসিএল এর স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীগণ ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ এবং ডিএমটিসিএল পরিচালনা পর্ষদকে লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছেন কর্মচারী।
মন্তব্য করুন