দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল বাস্তবায়নে ১০ হাজার ২৯ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৪৯ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। বর্তমানে এই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৫৪৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু কেন এই খরচ বেড়েছে সে বিষয়ে রোববার (১৭ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাখ্যা দিয়েছে মেট্রো বাস্তবায়নকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)।
২০২৬ সালের মধ্যে এই পাতাল রেলের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এই রেলপথটি ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১ নামে পরিচিত হবে। পাতাল ও উড়াল অংশ মিলিয়ে পুরো পথের দৈর্ঘ্য ৩১.২৪ কিলোমিটার। পুরো কাজটি ১২টি ভাগে (প্যাকেজ) ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এরই মধ্যে ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১১টি প্যাকেজের ক্রয় প্রক্রিয়া চলমান আছে। ২০১৮ সালের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করা হয়। পরে বিশাদ নকশা (ডিটেইল ডিজাইন) প্রস্তুতের জন্য ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস কনসালটেন্টের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে ২০২০-২১ সময়ে কোডিড-১৯ মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ এবং কর্মস্থলে সীমাবদ্ধতার ফলে পরামর্শক দীর্ঘ সময় কাজ করতে পারেননি, যা ডিজাইন চূড়ান্তকরণে বিলম্ব ঘটায়। ফলে দরপত্র প্রস্তুতি ও ক্রয় প্রক্রিয়া নির্ধারিত সময়ে শুরু সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া অংশীজনদের অনুরোধে পাতাল স্টেশনগুলোর এক্সিট, এন্ট্রি ও ডেন্টের অবস্থান পরিবর্তন হওয়ায় একাধিকবার ডিজাইন সংশোধন প্রয়োজন হয়।
ব্যয় বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে (প্রতি ডলার ৮৪.৫০ টাকা থেকে ১২০ টাকা)। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি নির্মাণ উপকরণের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছে। একই সময়ে শ্রম মজুরি, পরিবহন ও লজিস্টিকস ব্যয়ও বেড়েছে।
এদিকে প্রাথমিক সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রস্তুত ডিপিপির তুলনায় ডিটেইল ডিজাইন শেষে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় একাধিক সংযোজন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন অন্তর্ভুক্ত করতে হয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় পাতাল রেল নির্মাণের ঝুঁকি বিবেচনায় ফিজিক্যাল ও প্রাইস কন্টিজেন্সি খাতে যৌক্তিক সংস্থান রাখা হয়েছে। আর ১২টি প্যাকেজের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮টির দরপত্র জমা পড়েছে। একটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এর মধ্যে ৪টি জাপানি, দুটি চায়না ও দুটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে। তিনটি প্যাকেজে বাংলাদেশি কন্ট্রাক্টর বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে যুক্ত রয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব দিলে তাতে চূড়ান্ত ব্যয় প্রতিফলিত হবে না এবং ভবিষ্যতে আবার সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে, যা প্রশাসনিক ও আর্থিক দিক থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত। সরকারি খাতের প্রকল্প সংশোধনসংক্রান্ত নির্দেশিকা (জুন ২০২২) অনুধায়ী প্রকল্প সর্বোচ্চ দুইবার সংশোধন করা যাবে এবং সংশোধন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন