শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দেশের ৬৪ জেলায় হবে ‘মডেল মন্দির’ 

রাজধানীর টিকাটুলিতে শ্রীশ্রী স্বামী ভোলানন্দগিরি আশ্রমে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের (বাংলাদেশ) দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি : কালবেলা
রাজধানীর টিকাটুলিতে শ্রীশ্রী স্বামী ভোলানন্দগিরি আশ্রমে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের (বাংলাদেশ) দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি : কালবেলা

দেশের ৬৪ জেলায় পর্যায়ক্রমে ৬৪টি ‘মডেল মন্দির’ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট। সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার এই পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিটি মন্দির নির্মাণ করা হবে।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে শ্রীশ্রী স্বামী ভোলানন্দগিরি আশ্রমে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের (বাংলাদেশ) দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

তপন মজুমদার বলেন, বিগত আওয়ামী সরকার সারা দেশে সাড়ে পাঁচশ’র মতো মডেল মসজিদ বানিয়েছিল। কিন্তু তারা কয়টি মডেল মন্দির বানিয়েছেন? অথচ তাদের আচরণ ও কথাবার্তায় মনে হতো, তারা এ দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ‘সোল এজেন্সি’। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর হিন্দুদের বিপদের মুখে ফেলে রেখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেন।

তিনি বলেন, আমরা ৬৪ জেলায় ৬৪টি মডেল মন্দির বানাতে চাই। সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক হাজার একর দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল হয়ে রয়েছে। যারা এসব সম্পত্তি দখল করে আছেন, তাদের অনুরোধ করব- অবিলম্বে এই সম্পত্তি ছেড়ে দিন। তাহলে সারা দেশে এসব মডেল মন্দির নির্মাণে অসুবিধা হবে না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনকে (বাংলাদেশ) তাদের সংগঠনের পরিসর বাড়ানোর পরামর্শ দেন শ্রীশ্রী স্বামী ভোলানন্দগিরি আশ্রম ট্রাস্টের সভাপতি ও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। এ জন্য তিনি তাদেরকে হিন্দু ইকোনমিকস ফেডারেশন, হিন্দু কালচারাল ফেডারেশন, হিন্দু পেশাজীবী ফেডারেশন, হিন্দু নারী ফেডারেশন, হিন্দু ইয়ূথ ফেডারেশনের মতো বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলা এবং সংগঠনকে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলেন।

সুব্রত চৌধুরী বলেন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হলেও বৈষম্য আজও নিরসন হয়নি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হিন্দু কর্মকর্তা, শিক্ষকদের বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই এক পরিবার’। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অবস্থা হয়তো আরও খারাপ হতে পারে। তিনি দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, সামনে যত অন্ধকারই আসুক, এ দেশে আমরা সমান অধিকার নিয়েই থাকব। কেউ আমাদের দমাতে পারবে না। আমরা মাথা উঁচু করেই থাকব। নতুন বাংলাদেশ গঠনে আমরা ভূমিকা রাখতে চাই।

গণফোরামের এই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, আগে দেশের অবস্থা এমন ছিল যে, হিন্দু সম্প্রদায় নৌকায় ভোট দিয়েছে। এখন দেশের পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিএনপিকে বলব, হিন্দু সম্প্রদায় তথা ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের দূরে না ঠেলে কাছে টানুন। তাহলে হিন্দু সম্প্রদায়ও বিএনপিকে আপন করে নিবে। সদ্য অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল তার প্রমাণ দিয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়কে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি, রাস্তায় রয়েছি। রাষ্ট্র ও সমাজে সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। আমরা বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি শুধু সমঅধিকার চাচ্ছি তা নয়- আমরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও লড়াই করছি।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, এ দেশে সনাতনীরা কখনো নিরাপদে ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও হামলা-মামলা, নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে, নারীদের সম্ভ্রমহানি করা হয়েছে। আমরা সনাতনীরা এখনো যদি একত্রিত হতে না পারি, তাহলে সামনে আরও বিপদ হতে পারে।

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, বাংলাদেশ আমাদের মাটি। আমরা এ দেশের ভূমিপুত্র। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মর্যাদার সাথে যাতে এ দেশে থাকতে পারি, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। তাই আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।

বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের (বাংলাদেশ) সভাপতি বরুন চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব রঘুপতি সেনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (একাংশ) নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায় প্রমুখ।

সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে বরুন চন্দ্র সরকারকে সভাপতি এবং রঘুপতি সেনকে মহাসচিব করে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের (বাংলাদেশ) ৪৫ সদস্যের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে এবং প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অতিথিরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের দাবি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের

চলনবিলে নৌকাবাইচ দেখতে হাজারো মানুষের ঢল

ওসির ভোজসভায় অংশ নিলেন যুবলীগ নেতা

রাকসুর শীর্ষ তিন পদেই লড়বেন ৭ নারী প্রার্থী

ইসলামকে সুদৃঢ় করতে নফসের সঙ্গে জিহাদ করতে হবে : সাবির শাহ্

ফরিদপুরে সড়ক ও রেল বন্ধ করার ঘোষণা

জুলাই মামলা নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগে ৩ সমন্বয়ক কারাগারে 

শজিমেকে নবীনবরণ অনুষ্ঠিত

আর্জেন্টিনাকে দুঃসংবাদ দিল রিয়াল

হারিসের ঝড়ো ফিফটিতে পাকিস্তানের লড়াকু সংগ্রহ

১০

জাবিতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের বিবৃতি

১১

দেশের ৬৪ জেলায় হবে ‘মডেল মন্দির’ 

১২

৮ দফা বাস্তবায়নে অনশনে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন

১৩

ববিতে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, পুলিশ মোতায়েন

১৪

সরকারি চিকিৎসকদের জন্য ৮ দফা কঠোর নির্দেশনা

১৫

ঢাকাস্থ চাঁদপুর সাংবাদিক ফোরামের নবনির্বাচিত কমিটিকে উইমেন চেম্বারের সংবর্ধনা

১৬

ম. রাশেদুল হাসান খানের কবিতা ‘শবযাত্রার সহগামী’

১৭

বাংলাদেশে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে : মহিউদ্দিন রাব্বানী

১৮

‘নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে’

১৯

যে কারণে পদত্যাগ করলেন জাকসুর এক নির্বাচন কমিশনার

২০
X