বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-কমিশনের সভায় অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি নিয়ে কোনো আলোচনা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার (৫ অক্টোবর) সংগঠনটির সভাপতি রেজোয়ান খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. সালাউদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে তাদের বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা প্রদানসহ বিদ্যমান জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের প্রথম-ষষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী ৭ম-১২তম গ্রেডভুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিশনের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ এবং বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হলেও অধস্তন আদালতে কর্মরত সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি স্থান পায়নি। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া আগামী ৯ অক্টোবর কমিশন সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের (বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, আইন মন্ত্রণালয়, আইন কমিশন ও বিচার প্রশাসন ইনস্টিটিউট) সঙ্গে বিচারকদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণ বিষয়ে মতবিনিময় করবেন। কিন্তু সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আলোচনার বাইরে। কমিশনের আলোচনায় বিচার বিভাগে কর্মরত একমাত্র বিচারকের বেতন ভাতা বিষয়ে আলোচনা হলেও অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়ে সিদ্ধান্ত এ আলোচনায় উল্লেখ নেই। অথচ দেশের বিচার বিভাগ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রায় ২০ হাজার সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনরাতের শ্রমই বিচার বিভাগকে সচল রাখে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর বিচারকদের জন্য ৬টি গ্রেড রেখে পৃথক পে-স্কেলসহ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও দিনের পর দিন অধস্তন আদালতের সহায়ক কমকর্তা-কর্মচারীরা এই কাঠামোর বাইরে রয়েছেন। যদি বিচারক আদালতের হৃদপিন্ড হন তবে অধস্তন আদালতের সহায়ক কমকর্তা-কর্মচারীগণ স্নায়ুতন্ত্র। মামলার নথি প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে রায় প্রচার নিশ্চিত করা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবদান অপরিহার্য। তাদের অক্লান্ত শ্রম ছাড়া জুডিসিয়াল কার্যক্রম কার্যত অচল।
এ বিষয়ে সংগঠনটির সভাপতি মো. রেজোয়ান খন্দকার বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন, তাতে অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের কোনো প্রতিফলন নেই। বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষায় প্রথম শর্তই হলো বৈষম্যহীন কাঠামো নিশ্চিত করা।’
সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরে সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়নি। আগামী ৯ অক্টোবরের সভায় যদি সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হয় এবং ২০২৫ সালের জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-কমিশনের প্রতিবেদনে যদি আবারও কর্মচারীরা বঞ্চিত হন, তাহলে লাগাতার শাটডাউনসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার জন্য অ্যাসোসিয়েশন প্রস্তুত থাকবে।’
মন্তব্য করুন