রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ছুটি শেষে রাকসুর প্রচার শুরু, রয়ে গেছে শঙ্কা

রাকসু ভবন। ছবি : কালবেলা
রাকসু ভবন। ছবি : কালবেলা

দুর্গাপূজার ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরছেন শিক্ষার্থীরা। শুরু হয়েছে ক্লাস ও পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম। ক্যাম্পাসে নতুন করে বইতে শুরু করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনী হাওয়া।

রোববার (৫ অক্টোবর) ছুটির পরের প্রথম দিনেই প্রার্থীরা শুরু করেছেন প্রচার-প্রচারণা। প্রতিশ্রুতি নিয়ে ছুটে গেছেন শিক্ষার্থীদের কাছে। প্রচারে তাদের বাধা ছিল বৃষ্টি।

এদিকে পোষ্য কোটা ও শিক্ষক ‘লাঞ্ছনার’ অভিযোগে শিক্ষকদের আন্দোলনের সুরাহা না হওয়ায় রাকসু নিয়ে এখনো আশঙ্কা প্রকাশ করছেন প্রার্থীরা। আগামী ১৬ অক্টোবর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রোববার দিনের শুরু থেকেই ছাত্রদল, ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলসহ অন্য প্রার্থীরা নবোদ্যোমে প্রচারকাজ শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনে, টুকিটাকি চত্বর, পরিবহন মার্কেট, আমতলা, হল পড়াসহ সবখানেই ভোটারদের কাছে তারা নিজেদের ইশতেহার ও ব্যালট নম্বরসহ লিফলেট পৌঁছে দিচ্ছেন; চেয়ে নিচ্ছেন দোয়া এবং তাদের মূল্যবান ভোট।

তবে সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় খোলায় এখনো সব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ফিরে আসেনি। তা ছাড়া বাধা ছিল বারবার ধেয়ে আসা বৃষ্টির। ফলে প্রার্থীরা বলছেন, প্রচারণা পুরোপুরি জমে উঠতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে।

ছাত্রশিবির মনোনীত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজাসহ প্যানেলের একাংশ প্রচার চালিয়েছেন কয়েকটি একাডেমিক ভবন ও নবাব আব্দুল লতিফ হলে। ফাহিম বলেন, ‘নির্বাচনের ঠিক আগে তারিখ পরিবর্তন ও পোষ্যকোটার বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা এখনো রয়েছে।’

ছাত্রদল মনোনীত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের প্রার্থীরা প্রচার চালিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট ও তার আশপাশের এলাকায়। এ সময় প্যানেলের জিএস প্রার্থী নাফিউল জীবন সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য আমাদের দাবি ছিল দুর্গাপূজার পরে নির্বাচনের। কমিশন সে দাবিটি আমলে নেয়। বড় ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছেন। দীর্ঘ বছর পরে রাকসু নির্বাচন হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে আলাদা এটা উদ্দীপনা রয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।’

‘সার্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদের’ প্রার্থীরাও প্রচার চালিয়েছেন পরিবহন মার্কেট এলাকায়। প্যানেলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী সামসাদ জাহান বলেন, ‘রাকসু নিয়ে অনেক টালবাহানা চলছে। তবে এটা শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা এটা আদায় করে নেবেই।’

‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে কর্মবিরতি সেটি ৯ তারিখের পর আবারও ফিরবে কিনা সেটি আমরা নিশ্চিত নই। আবার শিক্ষকদের যে দাবি, শিক্ষার্থীদের বিচারের মুখোমুখি করা সেটি শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে বলে আমাদের মনে হয় না। সব মিলিয়ে রাকসুতে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি নিয়ে একটা শঙ্কার জায়গা তো আছেই। তবে আমরা আশাবাদী থাকতে চাই।’

‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী মারুফ বলেন, ‘প্রথমত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় একপাক্ষিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে আমরা সেটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। পাশাপাশি রাকসুকে জিম্মি করে আবারও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে কর্মবিরতি সেটি তারা শুরু করবেন বলে শুনতে পাচ্ছি। এ অবস্থায় রাকসুর আকাশে এখনো কালো মেঘ আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা আশা করব তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং প্রশাসন এক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্বশীল আচরণ করবে।’

জানতে চাইলে পোষ্য কোটাবিষয়ক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা রাকসু নির্বাচন চাই। সুষ্ঠ, স্বাভাবিক সুশৃঙ্খলভাবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে রাকসু নির্বাচন হোক। আমরা চেষ্টা করব রাকসু নির্বাচনে যেন বিঘ্নিত না হয়। কিন্তু প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকতে হবে।’

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আমীরুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের বিষয়টি নির্ভর করবে প্রশাসনের ওপর। আমরা দৃশ্যমান শাস্তি দেখতে চাই। যদি দৃশ্যমান কিছু না হয় তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত জানাবো। তবে রাকসু নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে না।’

তবে নির্বাচন কমিশন তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে জানিয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাকসু নির্বাচন পেছানোর কারণে প্রচারের সময় বাড়ানো হয়েছে। ৫ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত আচরণবিধি মেনে প্রচার চালাতে পারবে প্রার্থীরা। এছাড়া ১৬ অক্টোবর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হচ্ছে। কর্মবিরতি না হলে রাকসুতে কোনো বাধা নেই।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী একটি কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্যেও আইন মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, পোলিং এজেন্ট নিয়োগসহ শিক্ষকদের ভেতর থেকে দায়িত্ব পালন করার মতো কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। শিক্ষকদের দাবি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে ভিন্নতা না থাকায় শিক্ষক-কর্মকর্তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। যেহেতু আগামী ১৬ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের একটি বড় ইভেন্ট রয়েছে সেখানে তাদের আর কর্মসূচিতে আসার কোনো শঙ্কা আমরা দেখছি না।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুর্গোৎসবে টাইমস স্কয়ারে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আবহ

‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯’ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি

জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার নীতিমালা সংশোধন

কর্মবিরতিতে ভেঙে পড়েছে টিকাদান কর্মসূচি

আ.লীগ নেতাকে ছিনতাই, ২২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রাজশাহীতে মা-ছেলেসহ তিন মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

নীতি-আদর্শের পরিবর্তন করতে পারলেই শান্তি আসবে : ফয়জুল করীম

সেভিয়ার মাঠে বিধ্বস্ত বার্সা

আন্তঃশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন কাঞ্চন একাডেমি

একই দিনে বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু

১০

বিএনপিতে যোগ দিলেন ৫ শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী

১১

মায়ের মৃত্যুর শোক শেষ না হতেই ডেঙ্গুতে ছেলের মৃত্যু

১২

রাত ১টার মধ্যে ঢাকাসহ ১৭ জেলায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১৩

শিক্ষক দিবসে ক্যানসারে নিভল ‘জালাল স্যারের’ প্রাণ

১৪

জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে ইসরায়েলকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা

১৫

সুপ্রিম কোর্টে ভোট ডাকাতি : আবু সাইদ সাগর কারাগারে 

১৬

শেষ ম্যাচে আফগানদের ১৪৩ রানে থামাল বাংলাদেশ

১৭

ইসলামকে যথাযথভাবে ও পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে : জামায়াত আমির

১৮

মুলা-বেগুন মার্কা নির্বাচন কমিশনের রুচিবোধের প্রকাশ : সারজিস

১৯

রাষ্ট্রের উন্নয়নে ধানের শীষকে জয়যুক্ত করতে হবে : শিমুল বিশ্বাস 

২০
X