কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৩, ১১:০০ পিএম
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৩, ১১:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এবার ল্যাবএইডে ‘ভুল চিকিৎসায়’ রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

ল্যাবএইড  হাসপাতাল। ছবি: কালবেলা
ল্যাবএইড হাসপাতাল। ছবি: কালবেলা

রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ল্যাবএইড হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ তাহসিন হোসেইন (১৭) নামে এক কিশোরের অপমৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন স্বজনরা।

শুক্রবার (২৩ জুন) ল্যাবএইড হাসপাতালে তিন মাস ধরে চিকিৎসাধীন থাকা তাহসিনকে মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপরই স্বজনরা এই অভিযোগ করেন।

স্বজনদের অভিযোগ, গত ২৮ মার্চ অপারেশন করে তার মলাশয়ের এক টুকরো নালি কেটে ফেলে দেওয়া হয়। ডা. সাইফুল্লাহ একে সফল অপারেশন বললেও ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হতে থাকে তাহসিনের। এর সাত দিন পর কাউকে অবগত না করেই ৬ এপ্রিল দ্বিতীয়বার অপারেশন করেন ডা. সাইফুল্লাহ।

কিন্তু কোনো সুখবর দিতে পারেননি তিনি। বরং রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। রোগীর শরীরে তিন জায়গা থেকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অপারেশনের স্থান থেকে, শরীরে লাগানো টিউবের পাশ দিয়ে এবং স্টুল ব্যাগ দিয়ে যেখানে মল জমা হওয়ার কথা সেখানে শুধুই রক্ত বের হচ্ছিল।

জানা গেছে, তাহাসিনকে তিন মাসে ১৪৪ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু তার অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি হয়নি।

মৃতের মা তাজমিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার ছেলের পেট ব্যথা ছিল। সে হাঁটা চলা সব কিছুই করত। এই অবস্থায় আমরা ল্যাবএইডের ডা. সাইফুল্লাহকে দেখাই। তিনি বলেন তার (ছেলের) অবস্ট্রাক্টিভ স্মল গাট বা নাড়ির প্যাঁচ রয়েছে। যার কারণে তার পেটে ব্যথা এবং সে মল ত্যাগ করতে পারছে না। অপারেশনের করতে হবে।’

তাজমিন ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘আমার ছেলের পেটের সেলাই করা স্থান ফাঁকা হয়ে ময়লা বের হতো। ফলে প্রচণ্ড ব্যথা হতো। তারাও খেতে দেয়নি। আমার ছেলেও খেতে পারেনি এই তিন মাস। সে শুয়ে শুয়ে বিভিন্ন রান্নার ছবি দেখত। আর চিন্তা করত, সুস্থ হয়ে সে ইচ্ছামতো খাবে। কিন্তু ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই। এটা অপমৃত্যু। আমার ছেলে একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। তার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু আজ সব স্বপ্ন নিভে গেল।’

এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাহসিন দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় ছিল।

তাহসিনের বাবা মনির হোসেন বলেন, ‘আমি ডা. সাইফুল্লাহকে অনেকবার জিজ্ঞেস করছি আমার ছেলের সমস্যা কী? কিন্তু উনি কোনোবারই সঠিক করে কিছুই বলতে পারেননি। সে যে আমার ছেলের ভুল চিকিৎসা করছে সেটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত। কারণ আমি পিজির (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ) সাবেক চিকিৎসক ডা. ফজলুল রহমানসহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। এমনকি ভারত ও ব্যাংককের চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছি। ডা. সাইফুল্লাহকে অনুরোধ করছিলাম ওনাদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু উনি বলেননি। একদিন সময় দিয়েও উনি আসেননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজকে সকালেও ডা. সাইফুল্লাহ আসছিলেন। কিন্তু যখন শুনছেন আমার ছেলে মারা গেছেন তখনই তিনি পালিয়ে গেছেন।’

স্বজনদের আরও অভিযোগ, তাহসিন মারা যাওয়ার পর স্বজন সবাই যখন শোকে বিভোর, তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উল্টো পুলিশ ডেকে তাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।

এ বিষয়ে স্বজনদের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ‘আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। মামলার করার পরিকল্পনা আছে।’

মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ জেনারেল, ল্যাপারোস্কোপিক, কোলোরেক্টাল এবং ক্যান্সার সার্জন। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত ৯ জুন রাতে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডেলিভারির জন্য চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার অধীনে মাহবুবা রহমান আঁখি নামে এক প্রসূতি নারীকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সে সময় ড. সংযুক্তা সাহার বদলে উপস্থিত ছিলেন ড. মিলি। তিনি কোনো চেকআপ ছাড়াই তাকে কাটাছেঁড়া করেন।

আখির স্বামী সুমনের ভাষ্যমতে, ডেলিভারি করার জন্য তারা পেট কাটতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হতে থাকে এবং রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অজ্ঞান অবস্থায় সিজার করে বের বাচ্চা বের করা হয়। ফলে বাচ্চার হার্টবিট কমে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে নবজাতককে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

সুমন জানান, এ অবস্থায় তিনি বারবার ড. সংযুক্তার খোঁজ করলে কর্তৃপক্ষ জানায় তিনি দেশের বাইরে আছেন।

সেন্ট্রাল হাসপাতালে সিসিইউ ও এনআইসিইউ না থাকায় আঁখিকে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। এরপর সেন্ট্রাল হাসপাতাল সুমনকে জানায় তাদের বাচ্চাটি মারা গেছে।

ল্যাবএইডের সিসিইউতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা হয় আঁখিকে। অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় গত ১২ জুন ৬ চিকিৎসকের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ১৮ জুন দুপুরে আঁখি সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা তারুণ্যের সমাবেশস্থল

তীব্র গরমেও জনসমুদ্র চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড

কোহলি অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে, আশাবাদী বিসিসিআই

ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নতুন অভিযান ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’

লঞ্চ ঘাটে তরুণীদের মারধর, সেই যুবক আটক

মিছিল নিয়ে শাহবাগে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ফিলিস্তিনের গাজায় ধারাবাহিকভাবে সহায়তা করছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

তীব্র গরমে নগরবাসীকে ডিএনসিসি প্রশাসকের সতর্কতামূলক বার্তা

চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড

অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে : গণপূর্ত উপদেষ্টা

১০

প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত চট্টগ্রামবাসী

১১

উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক সন্ধ্যায় 

১২

চট্টগ্রামে দলে দলে আসছে বিএনপির নেতাকর্মী

১৩

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার হলেন নোবিপ্রবির শিক্ষক শিবলুর রাহমান 

১৪

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি, অতিষ্ঠ জনজীবন

১৫

মশার উপদ্রব কমাতে বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখার আহ্বান

১৬

ঢাবির হলে ছাত্রদল নেতার ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

১৭

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পাক-সেনাপ্রধানের কী কথা হলো

১৮

সিলেট সীমান্তবর্তী ভারতের তিন জেলায় কারফিউ জারি

১৯

চট্টগ্রামে তারুণ্যের সমাবেশ, সিআরবিতে নেতাকর্মীদের অবস্থান 

২০
X