বিশ্বজুড়ে ফুটবল শুধু খেলা নয়—এটা আবেগ, আশা আর জীবনের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু কখনো কখনো সেই জীবনের গল্প থেমে যায় এক মুহূর্তেই। যেমনটা ঘটল দিয়োগো জোতার ক্ষেত্রে। মাত্র ২৮ বছর বয়সে স্পেনের এক সড়কে প্রাণ হারালেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড ও তার ভাই আন্দ্রে। আর সেই বেদনাবিধুর ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল—ফুটবলাররাও শেষ পর্যন্ত মানুষ, আর মৃত্যু তাদেরও তাড়া করে ফিরতে পারে হঠাৎ করে, এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায়।
জোতার মৃত্যু যেমন বিশ্ব ফুটবলে শোকের ছায়া ফেলেছে, তেমনই এর আগে অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার অকালে থেমে গেছেন একইভাবে। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো এমনই কিছু করুণ অধ্যায়, যেখানে গাড়ি বা বিমানের দুর্ঘটনায় ফুটবল বিশ্ব হারিয়েছে উজ্জ্বল নক্ষত্রদের।
জোসে আন্তোনিও রেয়েস (২০১৯)
স্প্যানিশ উইঙ্গার ও প্রাক্তন আর্সেনাল তারকা রেয়েস ২০১৯ সালের ১ জুন স্পেনের উত্রেরা শহরে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। গাড়ির গতি ছিল ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার। রেয়েসের মৃত্যুতে স্প্যানিশ ফুটবলে নেমে আসে গভীর শোক।
জোসেফ শুরাল (২০১৯)
চেক রিপাবলিকের জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড ও তুর্কি ক্লাব আলানিয়াসপোরের খেলোয়াড় ছিলেন জোসেফ শুরাল। ক্লাবের ম্যাচ শেষে খেলোয়াড় পরিবহনের একটি মিনিবাসে ফেরার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। ২৯ এপ্রিল, ২০১৯ সালে, ২৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
জুনিয়র মালান্ডা (২০১৫)
মাত্র ২০ বছর বয়সে থেমে যায় বেলজিয়ান মিডফিল্ডার জুনিয়র মালান্ডার স্বপ্ন। ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি, জার্মান ক্লাব ভিএফএল ভলফসবুর্গের হয়ে খেলা এই তরুণ এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি গাড়ির পেছনের সিটে বসে ছিলেন এবং সিটবেল্ট পরেননি। সংঘর্ষের ফলে ছিটকে বাইরে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এমিলিয়ানো সালা (২০১৯)
নঁত থেকে কার্ডিফ সিটিতে যোগ দেওয়ার পথে ছোট একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। ইংলিশ চ্যানেলে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় সালার মরদেহ পরে উদ্ধার করা হয় সাগরের নিচ থেকে। বয়স ছিল মাত্র ২৮।
চাপেকোয়েন্সে বিমান দুর্ঘটনা (২০১৬)
ব্রাজিলিয়ান ক্লাব চাপেকোয়েন্সে কোপা সুদামেরিকানার ফাইনালে খেলতে যাওয়ার পথে কলম্বিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়। খেলোয়াড়, কোচ, স্টাফসহ ৭১ জনের মধ্যে ৭০ জন প্রাণ হারান। কিছু খেলোয়াড় অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও, এ ছিল ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনাগুলোর একটি।
দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা ফুটবলাররা
সবাই অবশ্য এতটা দুর্ভাগা ছিলেন না। অনেক তারকাই দুর্ঘটনায় পড়ে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন—যেমন: ইব্রাহিমোভিচ, সার্জ গনাব্রি, আবামেয়াং।
তাদের গল্প যেন স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবন কতটা অপ্রত্যাশিত হতে পারে।
দিয়োগো জোতার করুণ মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মাঠের বাইরে ফুটবলারের জীবনেও ঝুঁকি লুকিয়ে থাকে প্রতিনিয়ত। তারা শুধু তারকা নয়, আমাদের মতোই রক্তমাংসের মানুষ—যাদের স্বপ্ন, পরিবার, ভবিষ্যৎ সবই হতে পারে এক মুহূর্তেই শেষ।
মন্তব্য করুন