বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলে সেটি মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিবে। দেশে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের কষ্ট হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবারের বাজেটে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
শনিবার (৩ জুন) ঢাকার এফডিসিতে এবারের বাজেট টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে কিনা- এ বিষয়ে এক ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন।
ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্যের কারণে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। রিজার্ভের পতনের কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। আমাদের রিজার্ভের হিসাব অতিরঞ্জিত, যা আন্তর্জাতিক মানের নয়। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির টার্গেট ৭.৫% ধরা হলেও তা বাস্তবতা বিবর্জিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কর আহরণের পরিমাণ বিশ্বের সর্বনিম্ন। তাই অধিক কর আহরণের জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দরকার। বিদ্যুৎ, গ্যাসের সমস্যা দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যাহত হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাবে অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এ অবস্থার উত্তরণ না হলে আমানতকারীদের আস্থাহীনতা বাড়বে। জাতীয় সংসদে সরকারি দলের একক আধিপত্য থাকায় বাজেট নিয়ে কার্যকর আলোচনা হয় না। এ ছাড়া বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জন অংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয়।
ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা নির্বাচনী বছরের বাজেটে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রস্তাবিত বাজেটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের চেষ্টা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে জনজীবনে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবারের বাজেটে তেমন প্রতিফলন ঘটেনি। আয়কর যোগ্য সীমার নিচে থাকা প্রত্যেক টিনধারীকে দুই হাজার টাকা কর পরিশোধের বিধান মানুষকে টিন গ্রহণ ও কর প্রদানে অনুৎসাহী করতে পারে।
বিতর্ক অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বাজেট পাশের পূর্বে নিম্নের ১০ দফা সুপারিশ বিবেচনায় নেওয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
১) আয়কর প্রদানযোগ্য নয় এমন টিনধারী ব্যক্তিদের ২ হাজার টাকা কর প্রদান ও অভ্যন্তরীণ আকাশপথে ভ্রমণকর ২শ টাকা প্রত্যাহার করা। ২) জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৩) সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ দ্বিগুণ করা। ৪) ধনী-দরিদ্রের আয় বৈষম্য কমিয়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারার সুযোগ তৈরি করা। ৫) আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধে পরিকল্পিত দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৬) পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আদলে অন্তত এক কোটি পরিবারকে রেশনকার্ড প্রদান করা। যাতে তারা স্বল্পমূল্যে পাক্ষিক ভিত্তিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ের সুযোগ পায়। ৭) সবার জন্য শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ৮) মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৯) প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করতে হবে। ১০) বেকার সমস্যা নিরসনে প্রস্তাবিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করা ও সম্ভব হলে বেকার ভাতা প্রবর্তন করা।
মন্তব্য করুন