কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৪, ০৮:৫৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘পাকিস্তানিরা অগ্নিচুল্লিতে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছিল স্বাধীনতকামীদের’ 

প্লাটিনাম জুটমিলের অগ্নিচুল্লি। ছবি : কালবেলা
প্লাটিনাম জুটমিলের অগ্নিচুল্লি। ছবি : কালবেলা

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরা বেছে নিয়েছিল হত্যার নানা বর্বর উপায়। প্লাটিনাম জুটমিলের জ্বলন্ত বয়লার বা অগ্নিচুল্লিতে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছিল শ্রমিক, স্বাধীনতাকামী মানুষদের।

খুলনায় স্থাপিত ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরে (সংক্ষেপে গণহত্যা জাদুঘর) প্লাটিনাম জুটমিলের এই অগ্নিচুল্লি, একাত্তরের গণহত্যার অন্যতম এই স্মারক সংরক্ষণ করা হয়েছে গণহত্যা জাদুঘরে। গণহত্যা জাদুঘরের নতুন ভবনে ঢোকার মুখেই পুরোনো বয়লারটি প্রদর্শিত হয়েছে। বয়লারটি আনা হয়েছে খুলনার প্লাটিনাম জুটমিল থেকে।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এই বয়লারটি খুঁজে বের করেছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি কালবেলাকে বলেছেন, এ রকমভাবে মানুষ হত্যার কথা হিটলারও চিন্তা করেননি। এ ধরনের নিদর্শন পৃথিবীতে এই একটিই। এটি দেখে নতুন প্রজন্ম অনুধাবন করবে পাকিস্তানি সৈন্য ও শাসকদের প্রকৃতি ছিল কত জঘন্য, হিটলার থেকেও তারা ছিল কত নির্দয়। কোনো গণহত্যাকারী সভ্যতার জন্য শুভ নয়। এ বোধ থেকেই তারা শাসকদের অত্যাচার নির্মমতা, গণহত্যার প্রয়াসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।

১৯৫৪ সালে স্থাপিত প্লাটিনাম জুটমিলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দুটি বয়লার ছিল। এই বয়লারটি তার একটি। প্লাটিনামসহ আশপাশের পাটকলের বাঙালি শ্রমিক, স্বাধীনতাকামী স্থানীয়দের এখানে ধরে আনত ঘাতকরা। তাদের বস্তাবন্দি করে বয়লারে প্রথম পা ঢুকিয়ে দিত এবং পা পোড়া হলে আস্তে আস্তে শরীরের বাকি অংশ ঢুকিয়ে দেওয়া হতো জ্বলন্ত বয়লারে। তাদের আর্তচিৎকারে প্রকম্পিত হতো পুরো এলাকা, কষ্ট দিয়ে আস্তে আস্তে পুরো শরীর বয়লারে ঢুকিয়ে হত্যা করা হতো বাঙালিকে। এভাবে বয়লারে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো ধরে আনা বাঙালিদের।

পাকিস্তান সরকার খুলনা এলাকার শ্রমিক আন্দোলনে বাঙালি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বিহারিদের ব্যবহার করত। একাত্তরে এই বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। যুদ্ধ শুরু হলে বিহারিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় পুরো এলাকা। শুরু হয় ভয়াবহ নির্মমতার ইতিহাস। খালিশপুরের বিভিন্ন মিল ও শিল্পকেন্দ্র নির্যাতন কেন্দ্র, বধ্যভূমি ও জল্লাদখানায় পরিণত হয় পাকিস্তানি সৈন্যদের সহায়তায়। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর এই বিহারিরা নিয়মিত বিভিন্ন পাটকলে বাঙালিদের হত্যা করে ভৈরব নদীতে ফেলে দিত। আর প্লাটিনামে বয়লারে বা অগ্নিচুলায় মানুষ পুড়িয়ে মারত।

বিভিন্ন সময়ে প্লাটিনাম জুটমিলের বয়লারে কমপক্ষের ১০০ জন বাঙালিকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকজন শহীদের নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন- মো. হারুন সরদার, মো. মোসলেম, হেমায়েত, হাসু মোল্যা, আজিজ, মো. আব্দুল কুদ্দুস ও আব্দুল জলিল।

মিল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ও অনুমতিক্রমে বয়লারটি গণহত্যা জাদুঘরের সামনে পুনঃস্থাপিত করা হয়েছে। বর্বরতা আর নির্যাতনের স্মারক হিসেবে বয়লারটি আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরছে। লাল সবুজের এই পতাকা যে কত রক্ত আর অশ্রু দিয়ে কেনা সেই ইতিহাস জানাতে গণহত্যা জাদুঘর প্লাটিনামের এই বয়লার সংরক্ষণ করেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

চাঁদপুরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

অটোমেটেড মেশিনের দিকে ঝুঁকছে পোশাক কারখানার মালিকরা

ব্যারিস্টার সুমন গ্রেপ্তার

মধ্যরাতে ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিও বার্তা

ব্যারিস্টার সুমন কি গ্রেপ্তার হয়েছেন?

আইটেক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ভারতে গেলেন ১০ কর্মকর্তা

চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৩

শুরু হলো আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ৭১ কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্প

১০

বাবা হত্যার দায়ে ছেলের মৃত্যুদণ্ড

১১

দৌলতদিয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আটক

১২

বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে প্রাণ গেল কিশোরের

১৩

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বেরোবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৪

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিধি বাড়ানোর দাবি রাশেদ খাঁনের

১৫

শেখ হাসিনা পালায় না, ভেগে যায় : আমান উল্লাহ আমান

১৬

পুলিশে নিয়োগ হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে : পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল

১৭

ডেঙ্গুতে আরও ৩ মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল অর্ধলক্ষ

১৮

চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন 

১৯

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু

২০
X