শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৪, ০৮:৫৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘পাকিস্তানিরা অগ্নিচুল্লিতে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছিল স্বাধীনতকামীদের’ 

প্লাটিনাম জুটমিলের অগ্নিচুল্লি। ছবি : কালবেলা
প্লাটিনাম জুটমিলের অগ্নিচুল্লি। ছবি : কালবেলা

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরা বেছে নিয়েছিল হত্যার নানা বর্বর উপায়। প্লাটিনাম জুটমিলের জ্বলন্ত বয়লার বা অগ্নিচুল্লিতে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছিল শ্রমিক, স্বাধীনতাকামী মানুষদের।

খুলনায় স্থাপিত ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরে (সংক্ষেপে গণহত্যা জাদুঘর) প্লাটিনাম জুটমিলের এই অগ্নিচুল্লি, একাত্তরের গণহত্যার অন্যতম এই স্মারক সংরক্ষণ করা হয়েছে গণহত্যা জাদুঘরে। গণহত্যা জাদুঘরের নতুন ভবনে ঢোকার মুখেই পুরোনো বয়লারটি প্রদর্শিত হয়েছে। বয়লারটি আনা হয়েছে খুলনার প্লাটিনাম জুটমিল থেকে।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এই বয়লারটি খুঁজে বের করেছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি কালবেলাকে বলেছেন, এ রকমভাবে মানুষ হত্যার কথা হিটলারও চিন্তা করেননি। এ ধরনের নিদর্শন পৃথিবীতে এই একটিই। এটি দেখে নতুন প্রজন্ম অনুধাবন করবে পাকিস্তানি সৈন্য ও শাসকদের প্রকৃতি ছিল কত জঘন্য, হিটলার থেকেও তারা ছিল কত নির্দয়। কোনো গণহত্যাকারী সভ্যতার জন্য শুভ নয়। এ বোধ থেকেই তারা শাসকদের অত্যাচার নির্মমতা, গণহত্যার প্রয়াসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।

১৯৫৪ সালে স্থাপিত প্লাটিনাম জুটমিলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দুটি বয়লার ছিল। এই বয়লারটি তার একটি। প্লাটিনামসহ আশপাশের পাটকলের বাঙালি শ্রমিক, স্বাধীনতাকামী স্থানীয়দের এখানে ধরে আনত ঘাতকরা। তাদের বস্তাবন্দি করে বয়লারে প্রথম পা ঢুকিয়ে দিত এবং পা পোড়া হলে আস্তে আস্তে শরীরের বাকি অংশ ঢুকিয়ে দেওয়া হতো জ্বলন্ত বয়লারে। তাদের আর্তচিৎকারে প্রকম্পিত হতো পুরো এলাকা, কষ্ট দিয়ে আস্তে আস্তে পুরো শরীর বয়লারে ঢুকিয়ে হত্যা করা হতো বাঙালিকে। এভাবে বয়লারে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো ধরে আনা বাঙালিদের।

পাকিস্তান সরকার খুলনা এলাকার শ্রমিক আন্দোলনে বাঙালি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বিহারিদের ব্যবহার করত। একাত্তরে এই বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। যুদ্ধ শুরু হলে বিহারিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় পুরো এলাকা। শুরু হয় ভয়াবহ নির্মমতার ইতিহাস। খালিশপুরের বিভিন্ন মিল ও শিল্পকেন্দ্র নির্যাতন কেন্দ্র, বধ্যভূমি ও জল্লাদখানায় পরিণত হয় পাকিস্তানি সৈন্যদের সহায়তায়। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর এই বিহারিরা নিয়মিত বিভিন্ন পাটকলে বাঙালিদের হত্যা করে ভৈরব নদীতে ফেলে দিত। আর প্লাটিনামে বয়লারে বা অগ্নিচুলায় মানুষ পুড়িয়ে মারত।

বিভিন্ন সময়ে প্লাটিনাম জুটমিলের বয়লারে কমপক্ষের ১০০ জন বাঙালিকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকজন শহীদের নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন- মো. হারুন সরদার, মো. মোসলেম, হেমায়েত, হাসু মোল্যা, আজিজ, মো. আব্দুল কুদ্দুস ও আব্দুল জলিল।

মিল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ও অনুমতিক্রমে বয়লারটি গণহত্যা জাদুঘরের সামনে পুনঃস্থাপিত করা হয়েছে। বর্বরতা আর নির্যাতনের স্মারক হিসেবে বয়লারটি আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরছে। লাল সবুজের এই পতাকা যে কত রক্ত আর অশ্রু দিয়ে কেনা সেই ইতিহাস জানাতে গণহত্যা জাদুঘর প্লাটিনামের এই বয়লার সংরক্ষণ করেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার ঢাকার হয়ে বিপিএল মাতাবেন তাসকিন

নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হওয়া জুলাই সনদের আইনানুগ বাস্তবায়ন চায় বিএনপি

জাহানারার বিস্ফোরক অভিযোগে তদন্তে নামছে বিসিবি

ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় সংক্রান্ত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ

মির্জা ফখরুলকে ফোন করে আলোচনার আহ্বান জামায়াতে ইসলামীর

আইডিইবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও গণপ্রকৌশল দিবসের সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা

মারা গেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী

চার দশক পর মার্কিন কংগ্রেস থেকে অবসর নিলেন ন্যান্সি পেলোসি

মাদক ও চাঁদাবাজমুক্ত ঢাকা-১১ গড়ার অঙ্গীকার ড. কাইয়ুমের

গাজায় আরও ফিলিস্তিনি নিহত, লেবাননেও ইসরায়েলি হামলা

১০

ক্রান্তিকালীন একমাত্র বিএনপিই দেশের হাল ধরেছে : মোস্তফা জামান

১১

জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট করতে হবে : জামায়াত আমির

১২

একই বিদ্যালের ৮ শিক্ষার্থীর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, হাসপাতালে ভর্তি

১৩

ঢাকা-১২ আসনে আনোয়ারুজ্জামানকে ধানের শীষে মনোনীত করতে মিছিল

১৪

স্থগিত হওয়া পদ ফিরে পেলেন বিএনপি নেতা কচি

১৫

ঘাটাইলে বিএনপির ওবায়দুল হক নাসিরের মনোনয়ন পরিবর্তন দাবি

১৬

১৯৩ নন-ক্যাডারকে সহকারী সমাজসেবা পদে নিয়োগের নির্দেশ

১৭

‘জরুরি প্রয়োজন’ ছাড়া চিকিৎসকদের বদলি-পদায়ন বন্ধ

১৮

মধ্যপ্রাচ্যের এক দেশে সিরিজ হামলা ইসরায়েলের

১৯

সনাতন ধর্মাবলম্বী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঁচ শতাধিক পরিবারের বিএনপিতে যোগ

২০
X