খুশী কবির
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪১ এএম
আপডেট : ০৪ মে ২০২৪, ১২:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কর্মপরিবেশ এখনো নারীবান্ধব হয়ে ওঠেনি

বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশী কবির। সৌজন্য ছবি
বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশী কবির। সৌজন্য ছবি

মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় তৃণমূলে কাজ করে যাচ্ছেন। দুস্থ নারীদের কল্যাণে সমন্বয়ক হিসেবে তিনি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ‘নিজেরা করি’তে যোগ দেন। নারীর বর্তমান অবস্থান, কর্মক্ষেত্রে নারীর অধিকার, ক্ষমতায়নসহ নানা বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি-

কালবেলা : স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরে বাংলাদেশে নারীর অগ্রগতি কতটা হলো?

খুশী কবির : শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই যুগ যুগ ধরে নারীর অবদান অনেক। ঘরে, কৃষিতে, অফিস-আদালতে, কলকারখানা—সব জায়গায় নারীর অবদান রয়েছে। উৎপাদনমুখী যে কোনো কাজে নারী এবং পুরুষ যেই অংশগ্রহণ করুক, সবারই অবদান রয়েছে। সাধারণত সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে মূল্যায়নে নারীর অবদান সামনে নিয়ে আসা হয় না। নারীর অবদান উপেক্ষা করা হয়। শত বছর ধরে এটাই আমরা দেখেছি; বিশেষ করে একজন নারী যখন বাইরে কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন না বা তার ঘরের কাজকে অর্থনৈতিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। নারীর ঘরের কাজের যে একটি অর্থনৈতিক মূল্যায়ন রয়েছে, সেটা অর্থনীতিবিদরা এতদিন গ্রহণ করেননি। তবে এখন কিছু আধুনিক অর্থনীতিবিদ বিশ্বজুড়েই নারীর এই ঘরের কাজকে অর্থনৈতিকভাবে মূল্যায়নের কথা বলছেন। তারা দেশের জিডিপি হিসাব করার ক্ষেত্রেও এটাকে হিসাব করছেন। নারীর এই ঘরের কাজ সেবামূলক খাতের মধ্যে ধরা হচ্ছে।

একজন নারীর কাজ পরিবারের সদস্যদের সামনে খাবার তুলে দেওয়া। পরিবারের উপার্জনকারী পুরুষ সদস্য ঘরে চাল নিয়ে এলো কি এলো না, তার ওপর নির্ভর করে একজন নারী বসে থাকতে পারেন না। তাকে চুলা জ্বালাতেই হয়। নারী বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করেন, হাঁস-মুরগি পালন করেন, রান্নার কাঠ জোগাড় করেন। এসব কিছুর একটি অর্থনৈতিক ভ্যালু রয়েছে। এই ভ্যালু অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে।

কালবেলা : আমাদের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ নারী। তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত না করে টেকসই উন্নয়ন কতটা সম্ভব?

খুশী কবির : আমি যদি শুধু অবকাঠামো এবং গড় আয়কে উন্নয়ন হিসেবে দেখি, সেটা এক ধরনের হিসাব। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন দেশের রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো বলে কোনো কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। এরপর বন্যা এবং পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সংকট। সব মিলে সে সময় দারিদ্র্যের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশ আজকের এই জায়গায় এসেছে। মানুষের ঘরে এখন অন্তত দুবার চুলা জ্বলে। কিন্তু একই সঙ্গে দেশে ধনী এবং গরিবের বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে। আমরা গড় যে মাথাপিছু আয় দেখছি, সেটা দিয়ে দেশের মানব উন্নয়ন বিচার করা যাবে না। মাথাপিছু আয় একজন মানুষের হাজার কোটি টাকা এবং আরেকজন মানুষ ১০০ টাকার মালিক—এ দুটিকে গড় করে দেখানো হচ্ছে। এভাবে দেখলে মাথাপিছু আয় অনেক মনে হয়, সব মানুষের অনেক আয় আছে বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর নয়। বিপুল মানুষের আয় এখনো গড় আয়ের চেয়ে কম।

ধনী ও গরিবের ব্যবধান অনেক বেড়ে গেলে সেখানে শোষণ বেড়ে যায়। আমি যদি নিজেকে উন্নত হচ্ছি বলে দাবি করি, তাহলে দেশের সব মানুষের উন্নতির কথা চিন্তা করতে হবে।

নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসার ব্যাপারে গার্মেন্ট শিল্প বড় ভূমিকা রেখেছে, সত্য। কিন্তু গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরিতে তাদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। নারীদের কম মূল্যে কাজ করানো হচ্ছে। আমরা উন্নত হচ্ছি, কিন্তু শুধু গড় হিসাব দেখিয়ে উন্নয়ন হওয়া এবং সত্যিকারের মানব উন্নয়ন করা এক বিষয় নয়। উন্নয়ন মানে সবার উন্নয়ন। মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকার সবাই যাতে ভালোভাবে পূরণ করতে পারে, সেটাই উন্নয়ন। নারীরা যদি আরও বেশি সংখ্যায় কর্মক্ষেত্রে আসেন, তাহলে দেশের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত এবং শক্তিশালী হবে। তাই নারীদের বাদ দিয়ে কোনোভাবেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

কালবেলা : কর্মপরিবেশ কতটা নারীবান্ধব হয়েছে?

খুশী কবির : না, এখনো সেই প্র্যাক্টিস আমাদের গড়ে ওঠেনি। সে জন্যই তো বারবার বলছি, আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন সবার আগে জরুরি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উচিত তার নারীকর্মীদের যৌন নিপীড়ন বা হয়রানি রোধ করার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কমিটি গঠন করা। শুধু প্রতিষ্ঠানের নয়, প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকেও দু-একজন সদস্য সেখানে থাকতে পারেন, নিরপেক্ষ জাজমেন্টের জন্য। এসব নীতিমালা আছে, কিন্তু কয়জন সেটা মেনে চলেন? আবার দেখবেন, যৌন হয়রানির শিকার কোনো নারীকর্মী যদি প্রতিষ্ঠানের কাছে অভিযোগ করতে যান, অনেক ক্ষেত্রে ভিক্টিমকেও বাজেভাবে দেখা হয়। ফলে এসব ক্ষেত্রে আমাদের এখনো আরও অনেক কাজ করা বাকি।

কালবেলা : বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর ৩০ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নারী। এর পরও নারীর অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়নি কেন?

খুশী কবির : অনেক বছর ধরে আমাদের দেশে নারী সরকারপ্রধান দায়িত্ব পালন করছেন। এত বছর একটানা নারী প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর ইতিহাসে কমই আছে। তবে আমি ব্যক্তিকে দিয়ে একটি গোটা জাতিকে মূল্যায়ন করতে পারি না। ব্যক্তি আমাদের সামনে একটি উদাহরণ হিসেবে আসেন। একটি রোলমডেল হিসেবে আসেন। রোলমডেল মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে শেখায়। একজন নারী প্রধানমন্ত্রীকে দেখে একটি ছোট শিশু নারী কী করতে পারেন সেটা শিখতে পারে। কিন্তু গোটা ব্যবস্থা এবং চিন্তাধারা কোনো কিছু পরিবর্তন না করে শুধু একজন নারী সরকারপ্রধানকে দিয়ে মূল্যায়ন করতে পারব না। পরিবার থেকে শুরু করে গোটা সমাজব্যবস্থা নারীকে সুযোগ দিচ্ছে না।

কালবেলা : বিদ্যমান সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী?

খুশী কবির : পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার সবার আগে। নারী-পুরুষের লিঙ্গগত পার্থক্য ছাড়া অন্য কোনো পার্থক্য আমার চোখে পড়ে না। আর যা পার্থক্য দেখেন, সেটা সমাজের সৃষ্টি। সমাজই চোখে আঙুল দিয়ে নারী আর পুরুষের আলাদা বৈশিষ্ট্য তৈরি করে বিভেদ সৃষ্টি করছে। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ অনেক উচ্চ পদে এখন নারীরা কাজ করছেন। ফলে নারীর ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সময় হয়েছে।

কালবেলা : শুধু কী পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বা মানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্য থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে মনে হয় আপনার?

খুশী কবির : না, তেমনটা আমি মনে করি না। পুরুষের মানসিকতার সঙ্গে সঙ্গে নারীদেরও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। আমি অনেকের সঙ্গেই কথা বলি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বা কর্মজীবী নারীরও পরিবার থেকে বিয়ের ব্যাপারে চাপ থাকে। নারী বিদেশ থেকেও যদি উচ্চশিক্ষা নিয়ে আসে, কিংবা যতই মুক্তমনা পরিবারে বেড়ে উঠুক না কেন, একটা স্টেজের পরে তাকে বিয়ের জন্য নানাবিধ চাপ প্রয়োগ করা হয়।

কালবেলা : একজন পুরুষ দিন হোক বা রাত, যে কোনো সময় রাস্তায় একা চলাফেরা করতে পারছে, কিন্তু একজন নারীর ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হচ্ছে না কেন?

খুশী কবির : মূল ভয়টা কী আসলে? নারীকে ধর্ষণ করা হবে? কিংবা অপহরণ করা হবে, তাই তো? এখন একজন পুরুষ যখন রাতের বেলায় বাইরে থাকে; সে যদি ছিনতাই, ডাকাতি বা খুন করতেও বাইরে অবস্থান করে, তাকে কিন্তু প্রমাণ করতে হয় না সে ভালো কি খারাপ! তার চরিত্র নিয়েও কেউ প্রশ্ন করে না, যতই সে খারাপ কাজ করুক না কেন। কিন্তু একই ঘটনা যদি একজন নারীর ক্ষেত্রে ঘটে! জরুরি কাজে হোক কিংবা ঘুরতেই বাইরে বের হোক, কেন একজন নারীকে তার চারিত্রিক সনদ দেখাতে হবে? কেন তাকে প্রমাণ করতে হবে সে ভালো নাকি মন্দ? আপনার নিশ্চয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোমানা মঞ্জুরের ঘটনা মনে আছে? তার স্বামী যখন চোখ উপড়ে ফেলল, মিডিয়ায় সে খবরের চেয়ে বেশি ফলাও করে প্রচার করল রোমানার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা। আবার তার পরিবারও কিন্তু এটা ডিফেন্ড করার জন্য সবাইকে বুঝাতে চেষ্টা করল সে বেশ ধার্মিক মেয়ে, ভালো মেয়ে। ভালো-মন্দ প্রমাণ করতে হবে কেন? তার সঙ্গে একটা অমার্জনীয় অন্যায় করা হয়েছে। একজন পুরুষ হত্যা হলে বা তাকে কেউ হত্যার চেষ্টা করলে কি প্রমাণ করতে হয় সে ভালো ছিল না কি মন্দ? নারীকে কেন করতে হবে? অপরাধী যেই হোক, সে তো অপরাধীই। ভিক্টিমাইজ যে হয়েছে, সে ভালো নাকি মন্দ, এটা তো মূল বিষয় হওয়ার কথা না। এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।

কালবেলা : কোন জায়গাটায় নজর দিতে হবে বলে মনে করেন?

খুশী কবির : প্রথমেই আমাদের পরিবারের ভেতরে নজর দিতে হবে। এরপর নজর দিতে হবে সমাজে। আমাদের ভালো কিছু আইন রয়েছে। কিন্তু সেসব আইনের প্রয়োগ একদমই নেই। এ ছাড়া আইনকে ব্যাখ্যা করার মধ্যে অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ যখন ১৯৮৪ সালে ভূমি সংস্কার আইন করা হয় তখন খাসজমি বিতরণের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছিল। সেই নীতিমালায় বলা হয়েছে, একজন নারী তখনই জমি পাবেন, যদি তার একটি সক্ষম পুত্রসন্তান থাকে। একটি সক্ষম পুত্রসন্তান থাকার শর্ত দেওয়া হয়েছে। তাহলে যাদের সক্ষম পুত্রসন্তান নেই তাদের কী হবে? এভাবে বৈষম্য করা হয়েছে।

কালবেলা : যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা বা সহযোগিতা পুরুষদেরই দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আপনার মত কী?

খুশী কবির : মানুষ মনে করে, নারী যখন কাজ করেন বা উপার্জন করেন, সেটা সাবসিডিয়ারি। নারীকে পুরুষের সহযোগী হিসেবে দেখা হয়। অর্থাৎ পরিবারের পুরুষ সদস্যের আয়ে ভালোভাবে সংসার চলছে না, তাই পরিবারের নারী সদস্যের আয়কে পরিপূরক হিসেবে দেখা হয়। আলাদা সত্তা হিসেবে দেখা হয় না। নারীকে শুধু পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখা হয়। যে কারণে প্রণোদনা, সহযোগিতা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। যখন খাসজমি দেওয়া হয় তখন স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের নামেই রেজিস্ট্রি হয়। কিন্তু স্বামী সেটাকে দেখেন, ওই নারী তার স্ত্রী বলেই জমিটা পেয়েছে। নারী একজন নাগরিক হিসেবে বা একক সত্তা হিসেবে জমি পাননি।

কালবেলা : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্পদের ওপর নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতি কতটা?

খুশী কবির : অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের সিইও বা চেয়ারম্যান নারী রয়েছেন। কিন্তু তার হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। তাকে শুধু লোক দেখানো সিইও বা চেয়ারম্যান বানিয়ে রাখা হয়েছে। ধনিকশ্রেণির অনেকে স্ত্রীর নামে বাড়ি বা সম্পদ বানাচ্ছে। কিন্তু সেই সম্পদে স্ত্রীর আধিপত্য নেই। আমি এমন অনেক ধনী পরিবারের নারীকে চিনি, যারা অনেক অত্যাচারের সম্মুখীন হন। কিন্তু তারা কথা বলেন না এবং ওই পরিবার ছেড়ে চলেও আসেন না। আমি অনেককে জিজ্ঞাসা করেছি, সম্পদের মালিকানা রয়েছে তার নামে, তাহলে সে পরিবার ছেড়ে দিচ্ছে না কেন। অত্যাচার সহ্য করে পরিবার আঁকড়ে ধরে আছে কেন? তারা কেউ পরিবার ছাড়তে কোনোভাবেই রাজি নয়। তারা কম্প্রোমাইজ করেন, নিজে সহ্য করেন। কিন্তু পরিবার থেকে বের হতে পারেন না, কারণ তাদের সাহস নেই। কারণ তারা জানেন সমাজ তাকে গ্রহণ করবে না, সমাজ তাকে সেভাবে সাপোর্ট দেবে না।

কালবেলা : নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে কঠোর আইন থাকলেও যৌতুকের দাবি, ধর্ষণ, অ্যাসিড নিক্ষেপ, হত্যা—এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে কেন?

খুশী কবির : রাষ্ট্র যদি আইন করে থাকে, তবে তার দায়িত্ব হচ্ছে সেটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। কিন্তু রাষ্ট্র কি তা করছে? নারী নির্যাতন বন্ধে যেসব আইন বা নীতিমালা হয়েছে, দুঃখজনক হলেও সত্য—এগুলো বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে না।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করেছে অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে পঁচাত্তরের পরে যখন জাতিসংঘ নারী দিবস পালন করা শুরু করল, নারী দশক পালন করল, এরপর নারীদের জন্য বিশেষ কিছু উদ্যোগ নিলো যেমন প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন নেওয়া শুরু করল, তখন তৈরি হতে শুরু করল নারী উন্নয়ন নীতি। জাতিসংঘ তার সদস্যভুক্ত সব দেশে থেকে নারীদের জন্য অবস্থান, উন্নয়ন পরিকল্পনা আহ্বান করা শুরু করে। জাতিসংঘ অনেক ইফোর্ট দিয়েছে নারীর উন্নয়নে, সেই সুরে বাংলাদেশও তার উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারীদের অগ্রাধিকার দিয়েছে। স্যোশাল ডেভেলপমেন্ট গোল-এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা কিন্তু তখনই নির্ধারণ করে সরকার। নারীর সমতা বিষয়ে সরকার বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। সমতা ছাড়াও আরও অনেক বিষয় আছে যেগুলোর মধ্যে নারীর মর্যাদা, নারীর নিরাপত্তাসহ সবকিছু। আমরা সবাই এসব ইস্যু নিয়ে কাজ করার কথা বলছি, কিন্তু প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র দেখতে পাই। ঘরের ভেতরে, পরিবারে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতাটা বেড়েই চলেছে। সে মেয়ে হোক, বিধবা বা সিঙ্গেল অথবা তালাকপ্রাপ্ত, সন্তানসহ কিংবা সন্তান ছাড়া, ছাত্রী কি ছাত্রী না, বোরকা পরে কি পরে না—সবই কিন্তু সহিংসতার শিকার হচ্ছে।

কালবেলা : নারীর অধিকার সমুন্নত করতে আপনার পরামর্শ কী?

খুশী কবির : প্রথমত, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের অধিকার যাতে খর্ব করা না হয় সেই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আইনগুলো সংশোধন করতে হবে এবং নারীবান্ধব করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনতে হবে। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের শেখাতে হবে নারী-পুরুষ সবাই সমান। এটা ছেলেদের কাজ, এটা মেয়েদের কাজ—এভাবে কোনো বৈষম্য শেখানো যাবে না। পুরুষদের তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের উত্তরাধিকার আইনটা সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের সংবিধান বলে যে, নারীদের সবদিকেই সমান অধিকার হতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশেও সমান অধিকার দেওয়া আছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো পারিবারিক আইন ধর্ম দ্বারা পরিচালিত। এর পরিবর্তন হওয়া জরুরি। পারিবারিক আইনে আছে উত্তরাধিকার, অভিভাবকত্ব, ভরণ-পোষণ আর আছে তালাকের বিষয়টা। এসব জায়গায় ধর্মীয় বিধিনিষেধই আইন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। একজন নারী অধিকার কর্মী হিসেবেই নয়, মানুষ হিসেবেও পরিবর্তন প্রত্যাশা করি।

শ্রুতলিখন: মুজাহিদুল ইসলাম

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিষ্টি বিতরণের ধুম / চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত

উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত

টানা কয়েকদিন বৃষ্টির আভাস

পৃথিবীর যে স্থানে কেউ যেতে পারে না

সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় মামলা

সংগঠনের অবস্থা জানতে জেলা সফর শুরু করছে যুবদল

সৌদিতে প্রথমবার সাঁতারের পোশাকে নারী ফ্যাশন শো

তিস্তা নদীতে গোসল করতে গিয়ে কিশোরের মৃত্যু

সমুদ্রপাড়ে সিডিএ প্রকৌশলীদের ‘বারবিকিউ পার্টি’

জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে চাচার হাতে ভাতিজি খুন

১০

পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

১১

অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে সরকার : মান্না

১২

অমরত্ব পেল লেভারকুসেন

১৩

শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য : পরশ

১৪

ইউরোপে ভয়ংকর মিশনে নেমেছে ন্যাটো-সিআইএ

১৫

‘চেয়ারে বসলেই ৫০ কোটি টাকা’

১৬

রাজশাহীতে পুলিশ-বিএনপি ধ্বস্তাধ্বস্তি

১৭

মাছের সঙ্গে এ কেমন শত্রুতা!

১৮

যে বার্তা দিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি  

১৯

নাফনদী থেকে দুই বাংলাদেশি যুবককে অপহরণ করেছে আরসা

২০
X