ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ধ্বংস করার জন্য বদ্ধপরিকর ইসরায়েল। তারা মনে করে, ইরান পরমাণু বোমার অধিকারী হলে তা ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে। আর এজন্য ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করেনি তারা। তবে এক্ষেত্রে ইসরায়েল যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া এককভাবে সফল হতে পারবে না, তা স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলোন পিঙ্কাস।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল একা ইরানের পারমাণবিক-সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে সক্ষম নয়। এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ ধরনের বাংকার ধ্বংসকারী বোমা, ভারী বোমারু বিমান এবং উন্নত ডেলিভারি সিস্টেম, যেগুলো কেবল যুক্তরাষ্ট্রেরই আছে।’
বিশেষত, ইরানের দক্ষিণে অবস্থিত ‘ফোর্ডো’ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রকে ধ্বংস করাকে ইসরায়েল বড় পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করছে। কারণ এটি পর্বতগাত্রের নিচে নির্মিত এবং বিমান হামলার বিরুদ্ধে সুরক্ষিতভাবে গড়া। তাই ইসরায়েল যতই সফলতা দাবি করুক এই কেন্দ্র ধ্বংস করা যে ততটা সহজ নয় তা ভালোভাবেই জানেন ইসরায়েলি জেনারেলরা।
পিঙ্কাস বলেন, ‘এ কারণেই নেতানিয়াহু বারবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সরাসরি যুক্ত করার চেষ্টা করছেন। কারণ ইসরায়েল জানে, শুধু এখনকার হামলায় কিছুটা প্রতীকী লাভ হলেও, পরমাণু হুমকি দূর হবে না। এই জটিল ও গভীর স্থাপনার বিরুদ্ধে কার্যকর হামলা চালানো যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়।’
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অবস্থান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ইরান তার পরমাণু কর্মসূচির পাশাপাশি আঞ্চলিক মিত্রদের (যেমন হিজবুল্লাহ ও হুথি বিদ্রোহীরা) মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রেখেছে।
ইসরায়েল অনেক দিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বকে বোঝাতে চাইছে, ইরান যদি পরমাণু অস্ত্রে সক্ষম হয়, তাহলে শুধু ইসরায়েল নয় গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতাই ধ্বংস হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফোর্ডোর মতো স্থাপনা ধ্বংস করা সাধারণ অস্ত্রের মাধ্যমে সম্ভব নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া এই লক্ষ্যে পৌঁছানো কার্যত অসম্ভব।
কোন পথে হাঁটবেন ট্রাম্প?
এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট। তার প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই ভিন্ন ভিন্ন বার্তা আসছে। একদিকে কূটনৈতিক সমাধানের ইঙ্গিত, অন্যদিকে ইরানকে হুঁশিয়ারি- এই দ্বৈত বার্তায় মার্কিন নীতিতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
পিঙ্কাস বলেন, ‘যদি উত্তেজনা প্রশমিত হয়, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হবে। কিন্তু বর্তমান হোয়াইট হাউস পরিস্থিতিকে যেভাবে সামলাচ্ছে, তা থেকে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না তারা কী পথে এগোবে।’
যুক্তরাষ্ট্র কি সরাসরি সংঘাতে অংশ নেবে?
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইসরায়েল কৌশলগতভাবে যা চাইছে, তা অর্জন করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সামরিকভাবে জড়াতেই হবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অনিশ্চয়তা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের কারণে এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না ওয়াশিংটন শেষ পর্যন্ত তেলআবিবের পাশে দাঁড়াবে কি না।
এই মুহূর্তে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে এবং যে কোনো সময় তা একটি বড় ধরনের সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। এখন প্রশ্ন একটাই যুক্তরাষ্ট্র যদি পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে ইসরায়েল কি একাই ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত?
মন্তব্য করুন