দৈনিক কালবেলায় ২৩ অক্টোবর (সোমবার) ‘শ্রমিকদের প্রস্তাবের অর্ধেক মজুরি দিতে চান গার্মেন্টস মালিকরা’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
শ্রমিককে ন্যায্য মজুরি দিলেও লাভ হবে মালিকের। কারণ, এতে শ্রমিক ন্যায্য শ্রম দেওয়ার প্রতি মনোযোগী হবে। বাড়বে উৎপাদন। কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হবে না। অপরদিকে ন্যায্য মজুরি বঞ্চিত শ্রমিক বর্তমান বাজারে নিজের মৌলিক চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এতে তিনি কাজের প্রতি মনোযোগী হতে পারছেন না। এ ছাড়া শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে পাঠকরা লেখেন,
সেকান্দার মানিক : মালিক শ্রমিক একে অপরের পরিপূরক। অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশের শ্রমিকের বেতন কম। আমরা চাই শ্রমিকরা উপযুক্ত বেতন পাক। বিনিময়ে শ্রমিক দিক ন্যায্য শ্রম। মালিক ও শ্রমিকের সুসম্পর্কে আরো বৃদ্ধি হোক আমাদের গার্মেন্টস শিল্প।
লালন মিয়া : উন্নত দেশগুলোতে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সরকার, সুশীল সমাজ বিশেষ অবদান রাখে। আমাদের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলার মতো কেউ নেই। সরকার পেট মোটা করছে মালিক পক্ষের। আর সুশীল সমাজকে আটকিয়ে রাখছে ডিজিটাল আইনের ধারার ভিড়ে। দেশকে উন্নয়ন করতে হলে দেশের শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
মো. আশেক আশেক : মালিকদের এই সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের জন্য মেনে নিতে কষ্ট হবে। দেশের বাজারে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে শ্রমিকরা খাবে কী আর চলবে কী করে। সরকারের উচিত বাজার নিয়ন্ত্রণ করা, না হয় গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে বসে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। মালিকদের বিভিন্নভাবে সুবিধা দিয়ে ‘কলাগাছ থেকে ভড়গাছ’ বানাবেন আর শ্রমিকদের পথে বসাবেন, এইটা হতে পারে না। শ্রমিকদের পরিশ্রমের মজুরি সঠিকভাবে দিতে হবে।
বিলাল হোসাইন রিয়াদ : শ্রমিকরা যেমন ন্যায্য পারিশ্রমিক পাওয়ার হকদার, মালিকদেরও সেটা দেওয়ার সামর্থ্য থাকা দরকার। গার্মেন্টস শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে শ্রমিক-মালিক উভয়ের দিকেই খেয়াল রাখতে হবে। আমার মতে সর্বনিম্ন পারিশ্রমিক ১৫-১৬ হাজার টাকা হওয়া উচিত।
সাফায়াত জামিল মাহির : শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবির পেছনে কাজ করছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি। মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়াতে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠাতে পরিবারে চালানোতে হিমশিম খাচ্ছে শ্রমিকশ্রেণির মানুষ। বেতন না বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করাটাই সমাধান হবে বলে মনে করি।
মো. তানবীর আলম : ১০ হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে একজন মালিক কত দিন চলতে পারবে, এমন একটি প্রশ্নের মধ্যেই লুকিয়ে আছে শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কত হওয়া উচিত সেই উত্তরটি। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির বাজারে ২০ হাজার টাকা দিয়ে এক মাস একটি সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব।
মীর কাশেম : গার্মেন্টস সেক্টরে বাংলাদেশে শিল্পবিপ্লব ঘটিয়েছেন শ্রমিকরা। জাতীয় আয়ের সিংহভাগ তাদের ঘামঝরা শ্রমে অর্জিত। অথচ মজুরি হিসেবে যা বেতন দেওয়া হয়, তা খেয়েপরে সুস্থ জীবনযাপনে যথেষ্ট নয়। জাতীয়, আন্তর্জাতিক আইনকানুন মতে, ন্যায্য মজুরি পাওয়া শ্রমিকের অধিকার। যথাযথ মজুরি ও মর্যাদা দেওয়া মালিকের কর্তব্য। শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই গরিব শ্রমিকের হক না মেরে ন্যায্য মজুরি ও মর্যাদা দিয়ে মালিক ও শ্রমিকের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা উচিত। তাহলে শ্রমিক অসন্তোষ থাকবে না। শ্রমিক বিদ্রোহে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে না।
মো. আবদুল হামিদ : একজন শ্রমিক এত অল্প টাকা দিয়ে কীভাবে দিন চালাবে? অনেকেই ইতিমধ্যে শহর ছাড়া শুরু করে দিয়েছে। সবাই বেতন বৃদ্বির দাবি করলেও ব্যবসায়ীদের লাভ বড় করে দেখা হয়। সর্বনিম্ন মজুরি ১৮ হাজার টাকা করুন। অন্তত তারা যেন সংসারটা চালাতে পারে।
জোবায়ের আহমেদ : এমনিতেও এই দেশে শ্রমিক আইন মানা হয় না। ৮ ঘণ্টা কাজের জায়গায় ১২-১৪ ঘণ্টা ডিউটি। কিন্তু মজুরির বেলায় চরম কৃপণতা। এটা চরম জুলুম। যখন ক্ষমতাসীন পার্টির কর্মীরা আসে তখন তাদের তারা ঠিকই খুশি করে দেয় কিন্তু যাদের শ্রমে-ঘামে এত কিছু তাদের বেলায় অজুহাত।
মোস্তাকিম মোস্তাক : সব কিছুর দিক বিবেচনা করে শ্রমিকদের মজুরি ২২ হতে ২৩ হাজার টাকা করা হোক। তাহলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
মো. শাহ জামাল : বাংলাদেশে সব কিছুর দাম বেশি। কিন্তু আমাদের শ্রমিকের দাম কম। আমার অধিকার চাই, আমার নিরাপত্তা চাই।
মো. মোফাজ্জল হোসাইন : বর্তমান বাজারমূল্য বিবেচনা করলে একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি ১৫ হাজার টাকা প্রয়োজন।
রিফাত খান : শ্রমিকদের কষ্ট কেউ বোঝে না। তারা তাদের ন্যায্য দাম চাইছে। মালিকরা এক মাস শ্রমিক হয়ে কাজ করুক, সংসার চালাক; তারপর বুঝবে শ্রমিকরা কেন তাদের ন্যায্য দাম চাচ্ছে।
শহিদুল ইসলাম : ১০ হাজার ৪০০ টাকা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অতিরিক্ত দ্রব্যমূল্য এবং অন্যান্য খরচের কথা বিবেচনা করে ১৫ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
নুর আহমাদ সিদ্দিকী : গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের শ্রমের যথাযথ মূল্য দেয় না। মালিকদের কাছে শ্রমিকদের জীবনের কোনো দাম নেই। মালিকের চাওয়া হলো টাকা। উৎপাদন বাড়লে মুনাফা বাড়বে। তারা শ্রমিকের সুখ-অসুখ বোঝে না। বোঝে শুধু উৎপাদন।
গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম
মন্তব্য করুন