জন্ম থেকে স্বাভাবিক মানুষের দুটি পা ও দুটি হাত থাকলেও জন্মগতভাবে মাহাথির মোহাম্মদের দুই পা নেই। দুই হাত দিয়ে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ভালো ফলাফল করে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শেষে গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন হুইল চেয়ারে বসে।
হুইল চেয়ারে বসে আছেন মাহাথির, পেছনে মা জোসনা বেগম ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন পরীক্ষাকেন্দ্রে। কেন্দ্রে অভিভাবক ঢুকতে না পারায় রোভার স্কাউটের সেচ্ছাসেবীরা মাহাথির মোহাম্মদকে পৌছেঁ দিচ্ছেন পরীক্ষাকেন্দ্রে। ছেলেকে নিয়ে কতশত স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন জোসনা বেগম। একটাই স্বপ্ন, ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দেখতে চান তিনি।
ছোটবেলা থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত মাহাথির। বগুড়া থেকে পরীক্ষা দিতে আসা এই শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৭৭ ও এইচএসসিতে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এবার অংশ নিচ্ছেন ভর্তি পরীক্ষায়। শনিবার (২০ মে) গুচ্ছের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে পরীক্ষা দেন তিনি। দুই পা-বিহীন মাহাথির অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।
মাহাথির বলেন, আমার একটাই স্বপ্ন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই। আমি অনেক অনেক পড়াশুনা করতে চাই। সেটার জন্য এতদূর এগিয়ে চলা। আমি পড়াশুনা করে সরকারি চাকরি করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমার এতটুকু আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান পরিবারের। আমি পা-বিহীন হলেও কখনো পিছিয়ে যাইনি। সমাজ, স্কুল কলেজের সহপাঠী, শিক্ষরা যেভাবে উৎসাহ দিয়েছে তা আমাকে পড়াশুনায় সাহায্য করেছে।
ছেলেকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন মা জোসনা বেগম। প্রতিবন্ধকতাকে তিনি প্রতিবন্ধকতা মনে করেন না। তিনি ছেলের এতদূর আসাকে গর্ববোধ করেন।
জোসনা বেগম বলেন, আমার ছেলে প্রতিবন্ধী, হাটঁতে পারে না। কিন্তু জন্মের পর থেকে কখনো কোনো অযত্নে রাখিনি। বড় ছেলের মতোই সব যত্ন করেই রেখেছি তাকে। কোনো অসুবিধা মনে করি না আমি। আমার ছেলে শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এতদূর এসেছে তা আমাকে গর্বিত করে। আমার পরিবারও ছেলেকে নিয়ে গর্ববোধ করে। পড়াশুনা করে ছেলে সফল হোক এটাই একান্ত কামনা।
লেখা পাঠিয়েছেন এ বি এস ফরহাদ
মন্তব্য করুন