কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০৬:০৪ পিএম
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০৬:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন পুনর্গঠনের অর্থ কে দেবে?

রুশ ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত ইউক্রেনের ভবন। ছবি : প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
রুশ ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত ইউক্রেনের ভবন। ছবি : প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

চলমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের অনেক শহর। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস হয়েছে বহু স্থাপনা, বাড়ি-ঘর ও সম্পদ। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্ত্রসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছে ইউরোপ আমেরিকাসহ সমগ্র পশ্চিমা বিশ্ব ও তার মিত্ররা। এমন সময় প্রশ্ন উঠছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় অর্থ কোথা থেকে আসবে, কে দেবে সেই অর্থ?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেনের পুনর্গঠনের জন্য প্রায় ২০০ থেকে ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে। ইউক্রেনের পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় ইউরোপকে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। ৫০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। সেই হিসেবে ইউক্রেনকে পুনরুদ্ধারে অনুমিত খরচ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, এই মুহুর্তে ইউরোপকে পদক্ষেপ নেওয়ার এবং দায়িত্ব গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ জরুরি হয়ে উঠেছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে ইউক্রেনের জন্য বড় বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। তারা ইউক্রেনে ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপরও, ইউরোপকে দেশটির যুদ্ধোত্তর পুনরুদ্ধারের সমন্বয় ও অর্থায়নে নেতৃত্ব দিতে হবে।

ইউক্রেনে আমেরিকার চেয়ে ইউরোপের স্বার্থ অনেকগুণ বেশি। ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপকভাবে উপকৃত হলেও, ইউরোপীয় দেশগুলোর পাওয়া ছিল আরও অনেক। সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিল তারাই। একইভাবে, ইউরোপের যুদ্ধ-পূর্ব স্থিতাবস্থা ফিরে না আসলে ইউরোপকে অনেক কিছুই হারাতে হবে। পারমাণবিক হুমকি বৃদ্ধির কথা নাই-বা উল্লেখ করা হলো।

ইউরোপীয়দের অবশ্যই বুঝতে হবে, আগামী বছর (২০২৪ সালে) হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরেও যদি ইউরোপ এবং ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সমর্থন অক্ষুণ্ণ থাকে – তবুও বর্তমান মার্কিন রাজনৈতিক অবস্থায় সেখানে একটি বড় ‘যদি’ থেকে যায়। নির্বাচনের পর কোথাও দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক সহায়তার বেপারে আমেরিকার উৎসাহ ম্লান হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয়ই ক্রমবর্ধমানভাবে পপুলিস্ট অবস্থান গ্রহণ করছে এবং আজকের পপুলিস্টরা বেশিরভাগই ঘরোয়া বিষয়গুলিতে ফোকাস করেন। বাকি বিশ্বের জন্য তাদের উদ্বেগ খুবই সামান্য।

ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রার্থীর মর্যাদা দিয়েছে ইইউ। ফলে দেশটিকে ইউরোপীয় ব্লকের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করতে ইউক্রেনকে যথেষ্ট প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রয়োজন। এবং এই প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করার জন্য ইইউকে যথাসাধ্যই করতে হবে।

ইউরোপীয় দেশগুলো কয়েক দশক ধরেই আমেরিকার সামরিক ব্যয়ের উপকারভোগী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জিডিপির একটি বড় অংশই জাতীয় প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করে। যার পরিমাণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমন্বিত প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দ্বিগুণ।

যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক বাজেট ইউরোপীয় স্তরে কমাতে পারে তবে এটি বছরে ৪০০ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে। বিপরীতভাবে, যদি ইউরোপ তার প্রতিরক্ষা খাতে মার্কিন স্তরে ব্যয় বাড়ায়, তবে এটি প্রতিবছর কমপক্ষে ৩০০ বিলিয়ন ব্যয় বাড়াবে ইউরোপের। যেহেতু ইউরোপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল প্রতিরক্ষা ব্যয়ের উপকারভোগী সুতরাং ইউক্রেন পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তাদেরই দেওয়া উচিত।

এমনটি দাবি করাই যায় যে, ইউরোপ যদি তার প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে শক্তিশালী করত তবে ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকতেন।

ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদের একটি প্রতিবেদন বলা হয়, দেশটি যদি এক সপ্তাহের জন্যও কোনো তীব্র সশস্ত্র সংঘাতে জড়ায় তবে তার কাছে মজুদ সমস্ত গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং ইউরোপীয় দেশগুলোর সামরিক প্রস্তুতিতে খুব বেশি আস্থা রাখা যায় না। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও সেটা খুব বেশি কিছু হবে না।

ইউরোপ কেন আমেরিকার চেয়ে নিজের প্রতিরক্ষায় এত কম অর্থ ব্যয় করে? অর্থনীতিবিদ মানকুর ওলসন এবং রিচার্ড জেকহাউসার তাদের ১৯৬৬ সালের এক গবেষণাপত্র ‘অ্যান ইকোনমিক থিওরি অফ অ্যালায়েন্স’-এ দেখিয়েছেন, বৃহত্তর দেশগুলো যখন কোনো একটি সম্মিলিত জোটের মধ্যে থাকে তখন তারা জোটের ব্যয়ের একটি অসম ভাগ বহন করে। ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

উদাহরণস্বরূপ, কানাডার মতো একটি দেশ তার প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির মাত্র ১.৩% ব্যয় করে। কারণ তারা জানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই অনেক বোঝা বহন করবে।

তা সত্ত্বেও, বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কিয়েল ইনস্টিটিউটের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ইউক্রেনকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে ফ্রান্স, ইতালি এবং স্পেনের মতো কিছু ইউরোপীয় দেশ কত কম অবদান রেখেছে।

যদিও সম্প্রতি ইইউ ইউক্রেনকে ২০২৭ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ৫০ বিলিয়ন ইউরো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে তারা বলছে এই অর্থের মাত্র এক তৃতীয়াংশ সরাসরি অনুদান হিসাবে দেওয়া হবে। বাকি অর্থ ঋণ হিসেবে প্রদান করা হবে যা সম্ভবত ইউক্রেন পরিশোধ করতেও ব্যর্থ হবে।

নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ইউক্রেনের পুনর্গঠন একটি বিশাল ও ব্যয়বহুল উদ্যোগ। যার সাফল্য নির্ভর করবে প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য ইউক্রেনের নিজস্ব প্রতিশ্রুতিসহ আরও অনেক বিষয়ের উপর। তবে ইউরোপীয় দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব থেকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। এমনকি ইউক্রেনের পুনর্গঠনে যদি ইউরোপকে ঋণ করতে হয় বা ইউরোপের নিজস্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধীর হয়েও যায় তবুও ইউরোপকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে।

মূল - কেনেথ রগফ (KENNETH ROGOFF), ভাষান্তর - মুজাহিদুল ইসলাম

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রুমিন ফারহানাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ

খুলনার রাজনীতির মাঠে সক্রিয় বিএনপি নেতা পারভেজ মল্লিক

সরকারি অফিসে হোয়াটসঅ্যাপ-পেনড্রাইভ নিষিদ্ধ করল জম্মু ও কাশ্মীর

মমতাজের পর এবার আদালতে জুতা খোয়ালেন তৌহিদ আফ্রিদি

ক্যাম্পাসে সহনশীল রাজনীতি চায় ছাত্রদল : আবিদুল

বগুড়ায় স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন শীর্ষক আঞ্চলিক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

সব পাথর কোয়ারিগুলো ইকো ট্যুরিজম করার নির্দেশ

জকসু নির্বাচনের আগে বিচার চায় জবি ছাত্রদল

প্রোডাক্ট বিভাগে ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিচ্ছে শিক্ষা

চীনের সহযোগিতা বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে : ইউজিসি চেয়ারম্যান

১০

ইলিশের উৎপাদন কমার কারণ জানালেন প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

১১

জকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রশিবিরের ৫ দফা

১২

ভারতে নির্মিত হচ্ছে ‘পরীমণি’, তবে কে এই পরী?

১৩

বক্তব্যের ভুল ধরতে ফজলুর রহমানের আহ্বান

১৪

মাত্র ১৪ হাজার টাকা আবেদন ফি-এ মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

১৫

অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় আর নেই

১৬

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাবার ছবি দেখিয়ে আফ্রিদির জামিন চাইলেন আইনজীবী

১৭

যুক্তরাজ্যে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

১৮

আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ

১৯

গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলা, সাংবাদিকদের দেখেই ফেলল বোমা

২০
X