আনোয়ার ফারুক তালুকদার
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আসন্ন বাজেটে আয়করের নিম্নসীমা ৫ লাখ টাকা করা হোক

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২ জুন ২০২৫ সালে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা তাঁদের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে। যার আকার হতে পারে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা যা গতবারের বাজেটের চাইতে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। গতবারের বাজেট ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট। উচ্চাভিলাষী না হয়ে বাস্তবভিত্তিক বাজেটের দিকেই এগোতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার৷ অন্যতম লক্ষ্য হবে মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা৷ আমাদের দেশের মুদ্রাস্ফীতি গত দুই বছর ধরেই ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। গত মার্চে যার হার ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ ৷ যা এপ্রিল মাসে কিছুটা কমে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ হয়েছে। নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা থাকতে পারে। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন যখন অতিষ্ঠ সেই অবস্থায় নতুন সরকারের প্রথম বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা থাকবে এই বাজেটে এমনি আশা সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের ৫ শতাংশের নিচে রাখা হবে৷ আগামী অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ৷ চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কিছুটা কমিয়ে এরইমধ্যে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে৷ যদিও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশের নিচে থাকবে৷ এমতাবস্থায় প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের উপরে রাখতে হলে দেশের ব্যবসার পরিবেশ স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। উৎপাদনশীল খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাসের নিরবিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করা দরকার। খেলাপি ঋণ এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। খেলাপি ঋণের কষাঘাতে আমাদের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর পদক্ষেপ নিতে প্রয়োজনে বিশেষ প্রণোদনা থাকতে পারে আসন্ন বাজেটে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (যা বর্তমানে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং রাজস্ব নীতি বিভাগ) আগামী অর্থবছরে পাঁচ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হতে পারে যা চলতি বাজেটে ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা ৷ তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী কর আদায় না হওয়ায় চলতি অর্থবছরে রাজস্বের লক্ষ্য কমিয়ে চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে৷ সাবেক এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আদায় হয়েছে দুই লাখ ২১ হাজার ৮১৭ টাকা, কিন্তু আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা৷ রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ ২১ শতাংশ৷ কর ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে নতুন ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ কর আদায়ে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

আমাদের গতানুগতিক কর ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে প্রগ্রেসিভ কর ব্যবস্থায় প্রবেশ করা উচিত। মানুষ যেন কর দিতে উৎসাহী থাকে সেই ব্যবস্থাপনা জরুরী। যারা কর দেন তাদের জন্য নির্দিষ্ট হারে পেনশনের ব্যবস্থা রাখা একটি বড় প্রণোদনা হতে পারে। আমাদের দেশে সরকারি চাকরিজীবীরাই শুধুমাত্র পেনশনের আওতায় আসে। কিন্তু বেসরকারি চাকুরিজীবীদের কোন পেনশনের ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি চাকুরিজীবীদের পেনশনের আওতায় আনার জন্য করদাতাদের অন্তর্ভুক্ত করে এই বাজেটে প্রস্তাবনা আশা করছি। আমাদের দেশে কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ অথচ নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন ৪০ লক্ষের কাছাকাছি। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে কর প্রদানের আওতায় আনতে পারে করদাতাদের জন্য পেনশন স্কিম। দেখা যাচ্ছে একটা বিরাট অংশ কর সনাক্তকরণ নম্বর থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত কর প্রদান বা রিটার্ন করছেন না। যদিও সবার কর শনাক্তকরণ নম্বর থাকলেই কর প্রদানের উপযুক্ত হবেন তা নাও হতে পারে। অথবা কেউ কেউ আগে করযোগ্য আয় করতেন এখন হয়তো কর প্রদান যোগ্য আয়ের আওতায় নাও পড়তে পারেন। যারা কর প্রদান করেন না তাদের করের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা দরকার।

কর প্রদানে ন্যায্যতার নীতি প্রয়োগ করা প্রয়োজন। অর্থাৎ যিনি বেশি আয় করবেন তিনি বেশি কর প্রদান করবেন। মানুষের ব্যয়যোগ্য আয় বিবেচনার নিয়ে করারোপ করা। দেখা যায় আমাদের দেশে বহুদিন ধরে করের নিম্নসীমা সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকার মধ্যে রয়েছে। সেই নিম্নসীমাকে পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করা প্রয়োজন। যেভাবে মূল্যস্ফীতি মানুষের ব্যয়যোগ্য আয়কে কমিয়ে ফেলছে তা বিবেচনার দাবি রাখে। এমনকি আমাদের সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোতেও করের নিম্নসীমা পাঁচ লাখ টাকার অধিক রয়েছে। সেই বিবেচনার করের নিম্নসীমা ৫ লাখে উন্নীত করলে কর প্রদানে মানুষের উৎসাহ যেমন বাড়বে এবং বেশি সংখ্যক মানুষ কর প্রদানে আগ্রহী হবে বলেই সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাস।

আনোয়ার ফারুক তালুকদার: অর্থনীতি বিশ্লেষক

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এক ছাতার নিচে ৩ পরাশক্তি, কোন দিকে যাচ্ছে বিশ্ব?

হামলা-মামলা নির্যাতনেও হাসিনার কাছে মাথানত করিনি : এ্যানি

তিন মাস পর বেঙ্গালুরু ট্রাজেডি নিয়ে মুখ খুলল আরসিবি

আগারগাঁওয়ে ‘ব্লকেড’, সিইসির সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক বাতিল

সময় টিভির পরিচালক পদ ফিরে পেলেন আহমেদ জোবায়ের

জাকসু নির্বাচন / ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা, মনোনয়ন পেলেন শেখ সাদী-বৈশাখী

সব কালো চক্রান্ত থেকে রক্ষা করার মালিক আল্লাহ : আরএস ফাহিম

রোজার আগে নির্বাচন, ভোটের ৬০ দিন আগে তপশিল : আখতার আহমেদ 

‘কেউ তো জানে’ আসছে এনটিভির পর্দায়

মসজিদুল হারামে এ সপ্তাহে জুমা পড়াবেন শায়খ সুদাইস

১০

৬ বছরেও শেষ হয়নি কাজ, আশ্রয়কেন্দ্র এখন মাদকসেবীদের আখড়া

১১

জার্সিতে নাম পাল্টালেন হলান্ড

১২

ডিবি কার্যালয়ে লতিফ সিদ্দিকী

১৩

ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই : আইএসপিআর

১৪

আগামী সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ইসির 

১৫

২০ মাসের ব্যবধানে পানিতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু, বাকরুদ্ধ পরিবার

১৬

হঠাৎ মিষ্টি খেতে মন চায়, এটা কীসের ইঙ্গিত?

১৭

ভারতের হয়ে খেলার আশা ছেড়ে দিয়েছেন শামি

১৮

যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুশইন করা হচ্ছে, দাবি বিএসএফ ডিজির 

১৯

সিজারের ৬ মাস পর পেট থেকে বের করা হলো গজ

২০
X