ড. মইনুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ পিএম
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. মইনুল ইসলামের নিবন্ধ

অর্থনীতির গতিশীলতার ব্যাখ্যা রয়েছে, স্ববিরোধী কিছু নেই

ড. মইনুল ইসলাম। ছবি : সৌজন্য
ড. মইনুল ইসলাম। ছবি : সৌজন্য

বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিশ্বের কিছু উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ‘প্যারাডক্স’ অভিহিত করতে দ্বিধা করেন না। দেশের কিছু অর্থনীতিবিদকেও এই মতের সঙ্গে সহমত জানাতে দেখা যায়। এটি ভ্রান্ত একটি ধারণা। কারণ, ‘প্যারাডক্স’ কথাটির বাংলা অর্থ হলো ‘আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী’। এর মানে, প্রচলিত তথ্য-উপাত্তের বিচারে এই দ্রুত উন্নয়নের ব্যাখ্যা পাওয়া দুরূহ। পাশ্চাত্যের উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের অনেকের পক্ষে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিশীলতার পেছনে অবদান রাখা অনেক উপাদান সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান আহরণ অনেক সময় সম্ভব হয় না বলে তারা এ ধরনের মত পোষণ করলে সেটাকে তেমন দোষণীয় বলা যাবে না, কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ কেউ এহেন ভুল অভিধা মেনে নিলে বলতে হবে তিনি বা তারা বিষয়টির গভীরে না যাওয়াতেই এই ভুল অনুসিদ্ধান্তের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে দায় এড়াতে চাচ্ছেন।

বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান গতিশীলতার ভালো ব্যাখ্যা রয়েছে, এখানে স্ববিরোধী কিছুই নেই। আলোচ্য কলামে আমি বিষয়টি আলোচনা করার চেষ্টা করব।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের ১ কোটি ৪৯ লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন ও কর্মরত রয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার ফরমাল চ্যানেলে দেশে পরিবারের সদস্যদের কাছে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রায় অর্ধেক রেমিট্যান্স এখন হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশে আসছে। বাংলাদেশের সিংহভাগ রেমিট্যান্স প্রেরকরা হুন্ডি পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। অতএব, ২১-২২ বিলিয়ন ডলার যদি ফরমাল চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স আসে তাহলে কমপক্ষে আরও ২১-২২ বিলিয়ন ডলার বা তার চেয়েও বেশি রেমিট্যান্স (টাকার আকারে) হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশের অর্থনীতিতে ঢুকছে। এহেন হুন্ডি পদ্ধতিতে কোনো কাগজপত্র স্বাক্ষর করার প্রয়োজন হয় না।

হুন্ডিওয়ালাদের স্থানীয় এজেন্ট প্রায়ই রেমিট্যান্স প্রেরক এবং রেমিট্যান্সগ্রহীতাদের পূর্বপরিচিত থাকার কারণে এসব লেনদেনে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কাও তেমন থাকে না। আরও যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরের কেউ জানতেও পারে না যে পরিবারে রেমিট্যান্স এসেছে। টেলিফোনে খবর পেয়ে যথাস্থানে গিয়ে বা নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা পেয়েই রেমিট্যান্সগ্রহীতারা যথাসম্ভব দ্রুত তা নিকটবর্তী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে আমানত হিসেবে জমা করে দেন, তাই আগের দিনের মতো চোর-ডাকাতদের আক্রমণের শিকার হতে হয় না পরিবারকে। যেহেতু বিশ্বস্ততাই হুন্ডি ব্যবসার সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তাই সাধারণত পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা মার যায় না, লেনদেনের গোপনীয়তাও রক্ষা করা হয় সযতনে।

এই হুন্ডি পদ্ধতিতে প্রেরিত অর্থ রেমিট্যান্স প্রেরকের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা যেহেতু পেয়ে যাচ্ছেন, তাই এই অর্থ প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগে ব্যাপক অবদান রাখছে। এক কোটি টাকার বেশি আমানত রক্ষাকারী ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দেশে এখন এক লাখ ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং এসব অ্যাকাউন্টের উল্লেখযোগ্য অংশই গ্রামীণ এলাকার ব্যাংক-শাখাগুলোতে। বিবেচনা করুন সারা দেশে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে প্রবাসীদের পরিবারের পাকা বাড়ি নির্মাণের যে হিড়িক চলেছে তার খরচের কত শতাংশ ফরমাল চ্যানেলে দেশে এসেছে? স্বীকার করতেই হবে, ফর্মাল চ্যানেল বা হুন্ডি পদ্ধতি যেভাবেই রেমিট্যান্সের অর্থ অর্থনীতিতে প্রবাহিত হোক; তার বহুবিধ সুফল পাচ্ছে অর্থনীতি। হুন্ডি পদ্ধতিতে প্রেরিত রেমিট্যান্সের বৈদেশিক মুদ্রা (প্রধানত ডলার) যদিও দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের জন্য পুঁজিপাচারকারীরা অপব্যবহার করে চলেছে তবুও এই ব্যাপারটা অর্থনীতির জন্য পুরোপুরি নেতিবাচক নয়।

বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ সত্ত্বেও বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো যে বড়সড় সংকটে পড়ছে না তার পেছনে ফলমাল চ্যানেলে কিংবা হুন্ডি পদ্ধতিতে প্রেরিত রেমিট্যান্স থেকে উদ্ভূত আমানতপ্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এক অর্থে এই বিপুল রেমিট্যান্সের অর্থ বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের একটা তাৎপর্যপূর্ণ বিকল্পের ভূমিকা পালন করছে। চীন ও ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ যে ভূমিকা পালন করেছে তার অনুরূপ ভূমিকা বাংলাদেশে পালন করছে ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্সপ্রবাহ। বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের চমকপ্রদ উল্লল্ফন ঘটাচ্ছে প্রবাসীদের ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স। বাংলাদেশের অনেক এলাকার গ্রামীণ ও শহুরে অর্থনীতিতে যে বিপুল গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে তার পেছনে প্রধান অবদান রেখে চলেছে এলাকার প্রবাসী-বাংলাদেশিদের সংখ্যাধিক্য।

জেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে ঢাকা জেলায়, তারপর কুমিল্লা, চট্টগ্রামে এবং সিলেটে। আমার মতে হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হওয়া রেমিট্যান্স ও অন্যান্য ব্যবস্থায় দেশে নিয়ে আসা বিদেশে উপার্জিত আয়-উপার্জন ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে প্রতি বছর। (তার মানে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফর্মাল-ইনফর্মাল চ্যানেলে মোট রেমিট্যান্স ও দেশে নিয়ে আসা বৈদেশিক মুদ্রার যোগফল প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার)। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ যারা বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ‘প্যারাডক্স’ আখ্যায়িত করে থাকেন তাদের ত্রুটি হলো তারা বৈদেশিক অভিবাসনের গুরুত্বকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারছেন না। এত দুর্নীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকে তাদের কাছে আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী মনে হয়। ৫০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ প্রতিবছর অর্থনীতিতে যুক্ত হওয়া কি সামান্য ব্যাপার? তারা দেশের অর্থনীতিতে যোগ হওয়া এই বিপুল অর্থপ্রবাহের ইতিবাচক অভিঘাতকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করেন না বলেই ব্যাপারটাকে ‘আন্ডার এস্টিমেট’ করছেন। এখন বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু জিএনআই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বেশি। (জিএনআই হলো জিডিপি ও নিট রেমিট্যান্সের যোগফল)। পশ্চিমবঙ্গের মেগাসিটি কলকাতাকে জনসংখ্যার দিক থেকে অনেকখানি পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ঢাকার জনসংখ্যা এখন দুই কোটি ২০ লাখ আর কলকাতার জনসংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখ। এমনকি জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান এখন পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস নিয়ে এসেছে তা হলো, কৃষিবিপ্লব। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ধান উৎপাদিত হতো মাত্র এক কোটি দশ লাখ টন। গত পঞ্চাশ বছরে ধান উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন কোটি আশি/নব্বই লাখ টনে, ভুট্টার উৎপাদন এবং গম উৎপাদন যোগ করলে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে প্রায় চার কোটি ত্রিশ লাখ টন। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গেছে। তরিতরকারি, শাকসবজি ও হাঁস-মুরগি উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এমনকি, গরু-মহিষের মাংস উৎপাদনেও দেশ এখন স্বয়ম্ভরতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে।

১৭ কোটির বেশি মানুষের খাদ্যশস্য জোগান দিয়েও এখন প্রায় প্রতি বছর মোটা ধান উদ্বৃত্ত হচ্ছে আমাদের। (অবশ্য প্রতি বছর আমরা ৬০/৬৫ লাখ টন গম আমদানি করি)। সত্তর লাখ টন আলুর অভ্যন্তরীণ চাহিদার বিপরীতে ২০২২ সালে বাংলাদেশে এক কোটি দুই লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। হাঁস-মুরগির ডিম ও মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুধ উৎপাদনে দেশে এখনো ঘাটতি রয়ে গেলেও গরু-মহিষের মাংস উৎপাদনে আমরা স্বয়ম্ভরতার দ্বারপ্রান্তে। ঈদুল আজহার সময় অতীতে চোরাচালানে আসা ভারতীয় গরু বড় ভূমিকা পালন করলেও এখন তার প্রয়োজন হয় না, বরং ২০২৩ সালের ঈদুল আজহার সময় কোরবানির গরু উদ্বৃত্ত ছিল।

আম, আনারস, কলা, পেয়ারা ও কাঁঠালের মতো কয়েকটি প্রধান ফল উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্যসাহায্য এখন আমাদের বৈদেশিক ঋণ/অনুদানের এক শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। উচ্চফলনশীল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার, সেচ ব্যবস্থার আওতায় আসায় দেশের অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষের সম্প্রসারণ, যথাযথ ভর্তুকি প্রদান, কৃষিঋণ পদ্ধতির সহজীকরণ, ফসলের বহুধাকরণ, কৃষির লাগসই যান্ত্রিকীকরণ, উচ্চফলনশীল ফসল, তরিতরকারি, মাছ, হাঁস-মুরগি ও ফলমূল চাষের ব্যাপক প্রচলন, রাসায়নিক সার, বীজ ও কীটনাশকের সহজলভ্যতা, ইত্যাদি কৃষিখাতের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। জনগণের খাদ্য জোগানে অর্থনীতির এই সক্ষমতা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখে চলেছে। একসময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ভিক্ষার ঝুড়ি’ আখ্যায়িত করা হতো এই দেশটি কখনোই খাদ্য সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পাবে না ধরে নিয়েই।

তৃতীয় যে সফলতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করে তুলেছে তা হলো তৈরি পোশাকশিল্পের দ্রুত প্রসার। গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশ চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের অবস্থানে পৌঁছে গেছে। ফলে, ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৭৫ কোটি ডলার সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন (৫,৫৫৬ কোটি) ডলারে, যার ৮২ শতাংশ আসছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। চামড়াজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য এবং ডিজিটাল পণ্য প্রতিটি থেকেও এখন বাংলাদেশ এক বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় নিয়ে আসছে। শিল্প খাতের উৎপাদন এখন বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৩৫ শতাংশে পৌঁছে গেছে, শিল্প খাতে কর্মসংস্থানও মোট জনশক্তির ১৮ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে। এর মানে, জিডিপিতে এখন শিল্প খাতের অবদান কৃষি খাতের অবদানের প্রায় আড়াইগুণ। অর্থনীতির এই প্রশংসনীয় কাঠামোগত রূপান্তর স্বল্পোন্নত অন্য কোনো দেশে ঘটেনি।

চতুর্থ যে বিষয়টি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিশ্বের মধ্যে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে তাহলো ক্ষুদ্র ঋণের প্রসার। এই ক্ষুদ্রঋণ সরবরাহ ব্যবস্থায় গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক এবং কয়েক হাজার এনজিওর অংশগ্রহণের ফলে দেশের দুই কোটি ত্রিশ লাখের বেশি প্রান্তিক অবস্থানের গ্রামীণ নারী ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় আসায় এবং এই ঋণগ্রহীতাদের প্রায় ২৮ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণের সহায়তায় দারিদ্র্য নিরসনে সফল হওয়ায় দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে একেবারে প্রান্তিক অবস্থানের জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক দৈন্য অনেকখানি কমেছে। জাতিসংঘ এবং বিশ্বব্যাংক ক্ষুদ্রঋণকে দারিদ্র্য নিরসন ও উন্নয়নের সহায়ক উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পঞ্চম যে বিষয়টি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করে চলেছে তা হলো নারীর ক্ষমতায়ন। তৈরি পোশাকশিল্পের প্রায় ৬৫-৭০ শতাংশ শ্রমিক নারী, ক্ষুদ্রঋণের ৯৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতা গ্রামীণ নারী, উচ্চশিক্ষা ব্যতীত বাংলাদেশের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীরা ছাত্রদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি। এমনকি, বাংলাদেশের মোট নারী সমাজের প্রায় ৪১ শতাংশ এখন বাড়ির বাইরে কর্মরত রয়েছেন, যেটা দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ হার। নারীর ক্ষমতায়নে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বও তাদের প্রণোদনামূলক ভূমিকা অক্ষুণ্ন রেখে চলেছেন।

আরেকটি বিষয়েও বাংলাদেশ পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে উঠছে, তা হলো ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত প্রসার। একই সঙ্গে দেশের ভৌত অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থার অপর্যাপ্ততা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারের আগ্রহ ইতোমধ্যেই সুফল দিতে শুরু করেছে। দেশের শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টিকে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অভিহিত করতেই হবে। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মীয়মাণ গভীর সমুদ্রবন্দর, পায়রায় নির্মিত দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর, মোংলা সমুদ্রবন্দরের উন্নয়ন, পদ্মা বহুমুখী সেতু, নির্মীয়মাণ যমুনা রেলসেতু, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল, ঢাকার মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী বছর-দু’বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও অনেকখানি এগিয়ে দেবে নিঃসন্দেহে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে সন্দেহের চোখে দেখা নেহাতই অজ্ঞতাপ্রসূত বলা চলে। এটা স্বীকার করতেই হবে যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বহুদিন ধরেই সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠন। এর মানে, যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার সত্যিসত্যিই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়ন করত তাহলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এরই মধ্যে ১০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে যেত। দুর্নীতির কারণে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রায় দুই/তিন শতাংশ কম হচ্ছে। আর, এই দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠন দেশের আয়বৈষম্যকে বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতি বছর।

ড. মইনুল ইসলাম: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুই সন্তানসহ গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা, দেবর নিখোঁজ

ওয়ার্ডপ্রেস কন্ট্রিবিউশনের গর্বিত মুখ বাংলাদেশের নাসিম

বরিশালে এনসিপির পদযাত্র‍ায় ২০ সহস্রাধিক জনতার জমায়াতের প্রস্তুতি

১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে নতুন করে লেখালেন স্টার্ক

মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সময় ৯৬ বাংলাদেশি আটক

চেয়ারে শহীদদের স্বজনেরা, মেঝেতে বসেন ৫ উপদেষ্টা

শ্যামলীতে ছিনতাইকারীদের একজন গ্রেপ্তার, মোটরসাইকেল জব্দ

নারীদের বীরত্বপূর্ণ অবদানে জুলাই উইমেন্স ডে উদযাপন

এসএসসি-এইচএসসিতে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর

মাকে জীবনের জন্য হুমকি দাবি, বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি ছেলে 

১০

চরমোনাইর দরবারে এনসিপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল

১১

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদে এনসিপির বিক্ষোভ মিছিল 

১২

বাড়ির পেছনে পড়ে ছিল শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ

১৩

আশুলিয়া কলেজ প্রশাসনের ভুলে বিপাকে ১৮৬ এইচএসসি পরীক্ষার্থী

১৪

উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত : হেফাজতে ইসলাম

১৫

নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না : মোস্তফা জামান

১৬

‘মব’ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে ছাত্রশিবির, অভিযোগ ছাত্রদলের 

১৭

লর্ডসে ব্যর্থ জাদেজার বীরত্ব, ইংল্যান্ডের নাটকীয় জয়

১৮

গমের ব্লাস্ট রোগ দমনে গাকৃবিতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

১৯

শুটিংয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল স্টান্টম্যানের

২০
X