ড. সাদিক আহমেদ
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৩, ০৭:১৯ পিএম
আপডেট : ২৫ জুন ২০২৩, ০৫:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. সাদিক আহমেদ

প্রস্তাবিত বাজেট অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়ক নয়

ড. সাদিক আহমেদ। সৌজন্য ছবি
ড. সাদিক আহমেদ। সৌজন্য ছবি

কোনো দেশের জাতীয় বাজেটকে সে দেশের অর্থনীতির চলমান অবস্থা এবং প্রধান প্রধান স্বল্প ও মধ্য-মেয়াদি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনার বিশেষ প্রতিফলন হিসেবে ধরা যায়। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের নীতি কী হবে তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হয় বাজেটকে।

বাংলাদেশের ২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের চারটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। (ক) সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার; (খ) রাজস্ব সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ; (গ) বাজেট ঘাটতির বিচক্ষণ অর্থায়ন; (ঘ) সামাজিক খাতের ব্যয়কে সুরক্ষিত করা।

ক. সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা। এ বিষয়ে খুব কম মানুষই দ্বিমত করবেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট গৃহীত হওয়ার সময়ই এই চ্যালেঞ্জটি আবির্ভূত হয়। রেকর্ডে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকটের গভীরতা অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে কোনো টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিত না করেই তা শেষ হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির চাপ ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাপক আকার ধারণ করে। ২০২২ সালের আগস্টে যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল ২০২৩ সালের জুন মাসে এসে তা ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ হয়েছে। এই মূল্যস্ফীতির দায় বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর চাপানোটা রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক হলেও এর কোনো তথ্যগত ভিত্তি নেই। যদিও বাহ্যিক উৎসগুলোর মধ্যেই অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতির চাপের উৎপত্তি। তবে দুর্বল চাহিদা ব্যবস্থাপনা নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি এত দিন ধরে টিকে আছে। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, যে দেশগুলো সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদা হ্রাসের নীতি গ্রহণ করেছে তারা সকলেই মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, থাইল্যান্ডে মূল্যস্ফীতি ৬৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালের জুনে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক৭ শতাংশ, ২০২৩ সালের এপ্রিলে তা ২ দশমিক৭ শতাংশে নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২২ সালের জুনে থাকা সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ১ শতাংশ থেকে যা ৪৬ শতাংশ কম। ইইউ-তে ২০২৩ সালের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেবাজেমে আসে যা অক্টোবর ২০২২-এ থাকা তার সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশ কমেছে। ভারতে ২০২২ সালের এপ্রিল যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ চলতি বছরের এপ্রিলে তা কমে ৪ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ভিয়েতনামে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি সফলভাবে রোধ করা হয়েছে। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ২ দশমিক ৩ শতাংশের সীমার মধ্যে রয়েছে।

উচ্চ শুল্ক আরোপ এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে বা আমদানি হ্রাস করার মাধ্যমে রিজার্ভের চাপ সামলানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু বাণিজ্য ভারসাম্যের চলতি অ্যাকাউন্টের উন্নতি হলেও আমদানি কমে যাওয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ২০২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য শতাংশ। যেখানে ২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

বৈশ্বিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, ‘আমদানি নিয়ন্ত্রণ’ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় একটি সাময়িক সমাধান হতে পারে তবে এটি কখনোই টেকসই সমাধান নয়। প্রকৃতপক্ষে, এই ব্যবস্থাগুলো মূলধনী অ্যাকাউন্টের উল্লেখযোগ্য অবনতি রোধ করতে পারেনি। কারণ প্রত্যক্ষভাবে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ প্রসারিত হয়নি। এ ছাড়া স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্য ঋণ কমে গেছে এবং এমএলটি ঋণের গতি শ্লথ হয়ে গেছে।

উপরন্তু, বাজার থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মূলধন উঠিয়ে নেওয়ার প্রমাণ রয়েছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ, বাণিজ্যিক ঋণ সরবরাহকারী এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের আস্থার জন্য আমদানি ও মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের সংকেত ছিল নেতিবাচক।

বাজেট ঘোষণায় যা উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ অর্থবছরের বাজেট তার চেয়েও বেশি মূল্যস্ফীতির হার, কম জিডিপি বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর অব্যাহত চাপ মাথায় রেখেই শেষ হয়েছে। যেভাবেই হোক, ২০২৩ অর্থবছরের বাজেট মূল্যস্ফীতির সঙ্গে উচ্চ রাজস্ব ঘাটতির মাধ্যমে বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। এ ছাড়া রাজস্ব ঘাটতি পূরণে সরকার অভ্যন্তরীণ ঋণ অর্থাৎ ব্যাংক অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ঘাটতি এবং সেই ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যাংক খাতে অর্থায়নের ওপর নির্ভর করা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

২০২৩ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা ২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা কতটা দেখা যাচ্ছে?

২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ। বাজেটে রাজস্ব ঘাটতি দেখানো হয়েছে জিডিপির ৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং এখানে ব্যাংক অর্থায়ন ধরা হয়েছে জিডিপির ৩ শতাংশ। এই লক্ষ্যগুলো প্রায় ২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যের পুনরাবৃত্তি বলা যায়।

আবারও ২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে একটি উচ্চাভিলাষী জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক অর্থায়ন কমিয়ে, কম রাজস্ব ঘাটতি বা অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতির মাধ্যমে চাহিদা কমানোর কোনো প্রচেষ্টা নেই।

অবধারিত উপসংহার হলো, ২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের মতো ২০২৪ অর্থবছরের বাজেট সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নয় বরং প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকেই মনোনিবেশ করেছে।

খ. রাজস্ব সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ

সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার রাজস্ব সংগ্রহের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের প্রধান উৎস হলো কর রাজস্ব। প্রতিবছর সরকার করের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এবং তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। এই পরিস্থিতি ২০২৩ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে।

এবারের বাজেটে গত অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে কর রাজস্ব আহরণ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রাক্কল করা হয়েছে। ২০২২ অর্থবছরে প্রকৃতপক্ষে কর সংগৃহীত হয়েছিল ২ হাজার ৯৯৬ বিলিয়ন টাকা যা এবারের বাজেটে ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৮০ বিলিয়ন টাকা।

২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রকৃত কর সংগ্রহের ওপর ভিত্তি করে বছরের বাকি সময়ে আনুমানিক কর রাজস্ব ৩ হাজার ২৯৬ বিলিয়ন টাকায় পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। রাজস্ব ঘাটতির কারণে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কর-জিডিপি অনুপাত নিম্নমুখী হচ্ছে যা ইতোমধ্যে নিম্ন স্তরেই রয়েছে। ২০২৩ অর্থবছরে আনুমানিক কর-জিডিপি অনুপাত ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে, যা ২০১৯ অর্থবছরের কর-জিডিপি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কম৷

বিগত কয়েক বছর ধরে কার্যকর সংস্কার করতে না পারায় রাজস্ব সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বাজেট মৌসুমে ঘোষিতে এডহক ব্যবস্থা রাজস্ব সংগ্রহের প্রচেষ্টাকে গতিশীল করতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০২৪ অর্থবছরের বাজেটেও কর আহরণে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে শঙ্কা রয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ২৯৬ বিলিয়ন টাকার আনুমানিক কর রাজস্বের তুলনায় ২০২৪ অর্থবছরে কর রাজস্ব বাড়িয়ে ৪ হাজার ৫০০ বিলিয়ন টাকা আহরণের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা তার আগের অর্থবছর থেকে ৩৭ শতাংশ বেশি এবং এ হার অর্জন করা বিশ্বাসযোগ্যতাকেও হার মানায়।

গত ৬ অর্থবছরে কর রাজস্বের প্রকৃত বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল প্রতি বছর মাত্র ১০ শতাংশ। বাজেটে প্রস্তাবিত নতুন কর ব্যবস্থা সীমিত কিছু কর বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করতে পারে কিন্তু প্রত্যাশিত ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি কোনোভাবেই আশা করা যায় না। এর সবচেয়ে সম্ভাব্য ফলাফল হলো প্রকৃত কর রাজস্ব আহরণে বিশাল ঘাটতি তৈরি হওয়া।

অর্থপূর্ণ সংস্কারের জন্য কর ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রয়োজন কর পরিকল্পনা এবং কর প্রশাসনের সংস্কার। এই সংস্কারের মধ্যে রয়েছে কর পরিকল্পনাকে কর সংগ্রহ থেকে পৃথক করা; কর প্রশাসনের সরলীকরণ ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এনবিআরের আধুনিকীকরণ; করদাতা এবং কর আদায়কারীর মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ উল্লেখযোগ্য।

একটি বাছাইকৃত এবং উৎপাদনশীল কম্পিউটারভিত্তিক অডিট ব্যবস্থার সঙ্গে একটি সত্যিকারের স্ব-মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা, প্রশিক্ষিত এবং পেশাদার ট্যাক্স অডিটর দ্বারা অডিট পরিচালনা, এনবিআরকে কর পুলিশ বিভাগ থেকে কর পরিষেবা সংস্থায় রূপান্তর করা, একটি সঠিক ‘সম্পত্তিকর ব্যবস্থা’ প্রবর্তন এবং ২০১২ সালে প্রণীত ভ্যাট আইনের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন।

সুদূরপ্রসারী সংস্কার এবং বিশেষজ্ঞ ট্যাক্স রিফর্ম কমিশন (টিআরসি) দ্বারা পরিকল্পিত একটি আধুনিক কর ব্যবস্থা অনুশীলনের মাধ্যমে উল্লিখিত বিষয়গুলো সর্বোত্তমভাবে চালু করা যেতে পারে। যেমনটি টিআরসিভিত্তিক সংস্কারগুলো ভারতীয় কর ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করতে এবং কর/জিডিপি অনুপাত বাড়াতে সাহায্য করেছে।

কর-রাজস্ব বাড়াতে সরকারের হাতে আরেকটি অস্ত্র রয়েছে, যা কাজে লাগানো হয়নি। বছরের পর বছর ধরে সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। Non-financial SOE-এর মোট সম্পদ জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ ধারণা করা হয়। এই সম্পদের ১০ শতাংশ হারে রাজস্ব পাওয়া উচিত যা মোট জিডিপির অন্তত ২ শতাংশ।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১৫২ বিলিয়ন টাকা মুনাফা অর্জন করেছে, যা ওই বছরের জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। বেশিরভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানই লোকসানের সম্মুখীন এবং তাদের পরিচালনা ব্যয়ের ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে প্রতিবছর বিপুল ভর্তুকি দিতে হয়।

অধিকন্তু, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ বিনিয়োগ বাজেটের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়। ফলস্বরূপ, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মুনাফা কর এবং লভ্যাংশ হিসাব করার পর ২০১৯-২০২১ অর্থবছরের বাজেট থেকে জিডিপির ২.৫-৩.১ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে। করপোরেট প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং সংস্কারের মাধ্যমে এসব রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়ালে সরকারের রাজস্ব হিসাবে জিডিপির অতিরিক্ত ১ দশমিক ৬ শতাংশ এখান থেকেই পাওয়া যেতে পারে।

গ. বাজেট ঘাটতির বিচক্ষণ অর্থায়ন

বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রাখার চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বাজেট ঘাটতি মেটানোর বিচক্ষণ উপায় খুঁজে বের করা সরকারের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির বর্তমান পরিবেশে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপের মধ্যেই সরকারকে দেশীয় ঋণের প্রবৃদ্ধি কমাতে হবে।

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক অর্থের ব্যবহার কমাতে হবে। এক্ষেত্রে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের সম্ভাব্য বিকল্পগুলো হলো, স্বল্পমূল্যের বিদেশি ঋণ এবং বাজারভিত্তিক দেশীয় ঋণের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি করা। জাতীয় সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের হার একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও এর সমাধান রাজনৈতিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এখান থেকে পরিত্রাণে খুব দ্রুত একটি ভালো বিকল্প সামনে আনতে হবে। এটি হতে পারে টি-বিলের জন্য সেকেন্ডারি বাজারের বিকাশ, যা জাতীয় সঞ্চয়পত্রের তুলনায় সরকারকে উল্লেখযোগ্যভাবে কম খরচে জনসাধারণের কাছ থেকে সরাসরি ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দেবে।

ঘ. সামাজিক খাতে ব্যয়কে সুরক্ষিত করা

এটা প্রমাণিত, রাজস্ব আহরণে সীমাবদ্ধতা সরকারকে দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষায় পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করার ক্ষমতাকে সীমিত করেছে। বাজেটের প্রায় ৫০ শতাংশ অর্থ নির্দিষ্ট কয়েকটি খাতে ব্যয় হয় (যেমন : মজুরি এবং বেতন, সিভিল সার্ভিস পেনশন, উপকরণ এবং সরবরাহ, নিরাপত্তা ব্যয় এবং সুদ পরিশোধ)। তাই রাজস্ব ঘাটতির মুখে ব্যয়ের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করার সুযোগ সীমিত। তা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সরবরাহ এবং সামাজিক সুরক্ষার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে ভর্তুকি কমাতে হব এবং পুঁজিভিত্তিক বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প কমাতে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমানোর পাশাপাশি এই ব্যয় হ্রাস দরিদ্র এবং দুর্বলদের আয়ের স্তর উন্নতির মাধ্যমে সরকারকে রাজনৈতিকভাবেও সাহায্য করতে পারে। বৃহৎ, দৃশ্যমান এবং দীর্ঘকালীন অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে ব্যয় ত্বরান্বিত করার প্রবণতা নির্বাচনী বছরে রাজনৈতিকভাবে আকর্ষণীয় বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এগুলো সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থেকে ব্যয় স্থানান্তর বৈকি। সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সরবরাহ, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় আরও বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ এগুলোর ফলাফল সরাসরি ও তাৎক্ষণিক।

ড. সাদিক আহমেদ: অর্থনীতিবিদ; ভাইস চেয়ারম্যান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এশিয়া কাপের জন্য শক্তিশালী দল ঘোষণা করল বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ

মেডিকেলে ‘আনফিট’ রিপোর্টে ভেঙে গেলে নবদম্পতির সংসার

যুদ্ধ সক্ষমতা ও বিশেষ প্রযুক্তি দেখাল উত্তর কোরিয়া

জঙ্গলে রহস্যময় জ্বলন্ত গাড়িতে পাওয়া গেল ২ পুরুষের মরদেহ

ডাকাতি করে পালানোর সময় ২ জনকে গণপিটুনি

দুঃসময় যেন পিছুই ছাড়ছে না পাক তারকা ক্রিকেটারের, এবার যেন হারাবেন পদটাই

হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ে যা জানা জরুরি

বিপাকে স্বরা ভাস্কর

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মাঝ আকাশে নগ্ন অবস্থায় ধরা বিমানবালা

১০

মরদেহ দাফনের পর জীবিত ফিরে এলো রবিউল!

১১

সারাক্ষণ চার্জার প্লাগে রাখেন? জেনে নিন কী হতে পারে

১২

এশিয়া কাপে ভারতের একাদশ কেমন হবে, জানালেন তারকা ক্রিকেটার

১৩

বায়ুদূষণের শীর্ষে দুবাই, ঢাকার অবস্থান কত

১৪

মৌদিকে আদর্শগত শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করলেন বিজয়

১৫

কেবিন ক্রুদের আসল কাজ কী

১৬

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১৭

বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের বড় সুখবর দিল সরকার

১৮

জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে এবার আইপিএলে কাজ করা অ্যানালিস্ট

১৯

আমরা লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে : নেতানিয়াহু

২০
X