এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নিয়ে পত্রপত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত কয়েকটি বিষয়ের আলোকপাত করে দেখা যায়, বাংলাদেশের সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একেবারেই শুরুর দিকে ম্যানেজিং কমিটি তথা গভর্নিং বডির মাধ্যমেই শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করা হতো। পর্যায়ক্রমে নিবন্ধন সনদের মাধ্যমে এবং বর্তমানে এনটিআরসিএর সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত এমপিও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া ও নীতিমালা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত।
কাজেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভিন্নতা ও দুর্বলতা কোনোটার জন্যই শিক্ষকরা দায়ী নয়। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন হয়। কাজেই নীতিমালায় ভিন্নতা হতেই পারে। নীতিমালা সরকার প্রণয়ন করে। নিয়োগ পদ্ধতির ভিন্নতা থাকলেও সবাই এমপিওভুক্ত শিক্ষক। সরকার কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার ভিন্নতার কারণে একই পেশাজীবীদের সুযোগ-সুবিধার ও পেশাগত অধিকারের ভিন্নতা হতে পারে না।
একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, একজনে বদলি পাবে আরেকজনে পাবেন না, এরকম দৃষ্টান্ত তৈরি হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। কাজেই বর্তমান আলোচিত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং পেশাগত অধিকার।
কমিটির নিয়োগে সবাই নিজ এলাকায় শিক্ষকতা করছেন। কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ বলছেন কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষকই নিজের এলাকায় অথবা পছন্দের এলাকায় নিয়োগ পেয়েছেন। শিক্ষকগণ নিজে গিয়েই চাকরি নিয়েছেন। তাহলে তাদের বদলি কেন দরকার। বাস্তবতা হলো জীবিকার প্রয়োজনে অনেকেই নিজের এলাকার বাহিরে অন্য জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন। এখন অনেকেই শিক্ষকতার মাঝামাঝি অথবা শেষ পর্যায়ে চলে এসেছেন।
এই দীর্ঘ সময়ে এই শিক্ষকগণ নিজের এলাকার বাইরে শিক্ষকতা করছেন। একটি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেও একদল শিক্ষক বদলির সুযোগ না পেলে এই শিক্ষকদের একদিকে মনকষ্ট এবং পেশাগত হতাশা তৈরি হবে। যার প্রভাব পড়বে শিক্ষা কার্যক্রমে।
বলা হয় কমিটির নিয়োগের অল্প সংখ্যক শিক্ষকের বদলির প্রয়োজন হবে। শিক্ষকদের মধ্যে কারও কারও স্বামী-স্ত্রী দূরে চাকরি করেন। দূরে থাকার কারণে অনেক শিক্ষকই ছেলে মেয়েদের দেখাশোনা, পড়াশোনা ও পারিবারিক প্রয়োজন মেটাতে পারেন না। কাজেই অল্প শিক্ষকদের বদলির প্রয়োজন হলেও বদলিটা এই শিক্ষকদের জন্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক দাবি। তাই মানবিক বিবেচনায় সকল শিক্ষককেই বদলির আওতায় আনা দরকার।
পারস্পরিক ও সমপদে/সম-স্কেলে বদলির ক্ষেত্রে সমন্বয় করা অনেক কঠিন হবে এবং গুটিকয়েক শিক্ষকই বদলি হতে পারবেন। এতে করে শিক্ষকদের কষ্টের লাঘব হবে না। বিষয়ভিত্তিক শূন্য পদের ভিত্তিতেই বদলি দেওয়া প্রয়োজন। একটা নীতিমালাই যেহেতু করা হবে, এই ধরনের জটিলতা না রাখাই প্রত্যাশিত। ফলপ্রসু বদলি নিশ্চিত করতে নিম্নোক্ত বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে:
১. যেহেতু বিভিন্ন পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। তাই একাডেমিক যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দূরত্ব ও স্বামী-স্ত্রীর কর্মস্থল বিবেচনায় নিয়ে স্কোরিং এর ভিত্তিতে বদলি করা যেতে পারে। ২. বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বদলির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যোগদানের দুই/তিন বছর পর পরবর্তী বদলির শুধু সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
৩. সিটি করপোরেশন ও শহরমুখী বদলির চাপ এড়ানোর এড়ানোর জন্য শুধুমাত্র নিজ জেলা অথবা উপজেলা এবং স্বামী অথবা স্ত্রীর কর্মস্থলে বদলির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
সর্বোপরি রাষ্ট্রের যেকোনো নীতি জনগণের কল্যাণেই করা হয়। কোন নীতিমালা প্রণয়নে যদি অধিকাংশই বঞ্চিত হয় তাহলে সেটা কোন কল্যাণকর নীতিমালা নয়। আশা করছি বদলি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদার ও মানবিক হবেন। সকল শিক্ষকই বদলির সুযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট সকলের উপর একদিকে যেরকম আস্থা বাড়বে এবং পাঠদানে শিক্ষকরা আরও বেশি মনোযোগী হবেন। এমপিভুক্ত শিক্ষকদের সার্বজনীন বদলি চালু করার জন্য এই প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, আচলছিলা উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর
মন্তব্য করুন