মাহমুদা আকন্দ
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪, ০১:১৫ পিএম
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৪, ০৬:৫২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
মাহমুদা আকন্দ-এর নিবন্ধ

বিশ্ববিদ্যালয়, অতি-পলিটিক্যাল এবং এ-পলিটিক্যাল শিক্ষার্থীসমাজ

মাহমুদা আকন্দ : সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সৌজন্য
মাহমুদা আকন্দ : সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সৌজন্য

জাবির শিক্ষার্থী এবং পরবর্তীতে শিক্ষক হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কিছু দেখবার এবং বুঝবার সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্য দুটোই হয়েছে। শিক্ষক হওয়ার পর একবার শিক্ষক সমিতির এবং একবার সিন্ডিকেট নির্বাচনে প্রার্থিতা করেছি। শিক্ষক হিসেবে তখনও আমি নিতান্তই নবীন। স্বপ্ন দেখছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল ইতিবাচকতা নিয়ে সামনে এগিয়ে দেবার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবার।

শিক্ষক রাজনীতির ভাগ, বাটোয়ারার সমীকরণ বিষয়ে আমার কোনো জ্ঞান তখনও হয়ে ওঠেনি। তবে সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করা মানুষ হিসেবে, রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে, দীর্ঘদিন শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ হিসেবে আমার বাবা আমাকে সাবধান করেছিলেন শিক্ষক রাজনীতি বিষয়ে। আমি তখনও শিক্ষক মাত্রই আদর্শ ব্যক্তিত্ব এই সরল বিশ্বাস আঁকড়ে থাকা মানুষ ছিলাম।

নির্বাচনের ভোটের রাজনীতিতে আমি পরাজিত হয়েছিলাম। তারপর, হিসেব কষে নানা কিছুই বুঝতে পেরেছিলাম। এরপর ইচ্ছে করেই নিজেকে শিক্ষক রাজনীতি থেকে সরিয়ে নেই। শিক্ষকতার প্রবেশনাল পিরিয়ড পেরিয়ে স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে থেকে ডিগ্রি নিয়ে ২০১৩ সালের শেষ নাগাদ দেশে ফিরে চাকরিতে পুনরায় যোগদান করলেও আর প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়াইনি।

পরোক্ষভাবে যৌক্তিক বিষয়ে কথা বলেছি বিভিন্ন ফোরামে বা লেখালেখি করেছি। যে কোনো প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরাই সবচাইতে বড় ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি এই সময়ের মধ্যে। আর তা হলো একদল শিক্ষার্থী যারা ক্ষমতাসীন রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের অধিকাংশই দলীয় আদর্শ নয়, ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য, দাপট দেখিয়ে বেড়ানোর জন্য দলের পরিচয় বহন করে চলেছেন। এই দলকে অতি-রাজনৈতিক বলতে পারেন। এরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডে পারদর্শী।

অন্যদিকে আরেকদল শিক্ষার্থী আছেন যারা কোনো কিছুতেই নিজেদের অংশগ্রহণ করার বিষয়ে অনিচ্ছুক। এরা এ-পলিটিক্যাল। তারা সব দেখেন, বোঝেন, যে দিকে ভিড় সেদিকে হালকা হুঁ, হ্যাঁ করেন।

এই দুইদল বাদ দিলে আরেকদল শিক্ষার্থী আছেন যারা সংখ্যায় কম কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব। এদের মধ্যেও আবার আছে নানাবিধ দ্বন্দ্ব। অন্যায় হচ্ছে অন্যায় - এই বিবেচনার চেয়ে যখন ব্যক্তিস্বার্থ, পলায়নপরতা, বা অতি-বিশুদ্ধবাদিতা মুখ্য হয়ে ওঠে তখন অন্যায়কারীদের সুবিধা হয়। তারা নানা ন্যারেটিভ দাঁড় করাবার সুযোগ পায়। অন্যায়ের সাফাই দেবার অজুহাত পায়। এই অবস্থা মোটামুটিভাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই চলে আসছে। এর ভয়াবহ ফলাফল আমাদের চোখের সামনে।

যে ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক, মূল্যবোধহীন, নির্বিকার একটা জেনারেশন আমাদের হাতে তৈরি হয়েছে তার চরম মূল্য দেশের মানুষকে দিতে হচ্ছে, হবে। কারণ, এরাই সার্টিফিকেট নিয়ে নানা পদে অধিষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে খুব হাতে গোনা কজন শিক্ষার্থী যারা এখনো অন্যায়কে অন্যায় বলতে জানেন, তারা আত্মহত্যা না করে, খুন না হয়ে, নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাবার জন্য নিপীড়িত হয়ে ঝরে না গেলে হয়তো কিছু একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।

যদিও, যুক্তি আর গণিতের বিচারে সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবুও তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আশায় বাঁচি, আপাতত।

মাহমুদা আকন্দ : সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টি–টোয়েন্টি অভিষেকে ভারতের ব্যাটারের ধ্বংসলীলা

বিল দখল করে মাছ ধরায় সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক আজিজুল

পাঁচ দাবিতে ইউনিয়ন পরিষদ কর্মকর্তাদের স্মারকলিপি

মাইক্রোবাসচাপায় এনসিপির ২ নেতাসহ তিনজনকে হত্যাচেষ্টা

প্রকাশ্যে কাটা হলো যুবকের হাতের কবজি

ভয়াবহ ভূমিকম্পে কাঁপল জাপান, সুনামি সতর্কতা জারি

যুব হকি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্যে বিসিবির অভিনন্দন

চবি ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ছাড়াল ১ লাখ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্রের শেষ বিদায়

১০

ঘুষ নেওয়া সেই ভূমি কর্মকর্তাকে শোকজ

১১

মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা : রহস্যঘেরা সিসিটিভি ফুটেজ

১২

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়েতের আমিরের সঙ্গে এরিক গিলানের মতবিনিময়

১৩

রায়পুরায় ১০ দিনে ৩ খুন

১৪

বেগম জিয়ার বর্তমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনাই দায়ী : খোকন

১৫

আমিরুলের আগুন ঝরা হ্যাটট্রিকে যুব হকি বিশ্বকাপের ‘চ্যালেঞ্জার চ্যাম্পিয়ন’ বাংলাদেশ

১৬

নির্বাচন-পূর্ব অর্থনীতিতে ৪ ঝুঁকি, সংকটের আড়ালে সম্ভাবনার হাতছানি

১৭

ফ্যাসিস্ট সরকার তারেক রহমানকে জোর করে বিদেশে পাঠিয়েছে : আজাদ

১৮

এবার মোহাম্মদপুরে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ, পাশেই ছিল চিরকুট

১৯

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে সংঘর্ষ, পালাচ্ছে হাজার হাজার বাসিন্দা

২০
X