বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার বহুরূপী প্রকাশ জলবায়ু পরিবর্তনের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের কালিফোর্নিয়াতে দাবানল, আফ্রিকা ও ইউরোপের অতিবৃষ্টি, এশিয়ার উষ্ণতা আর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘন ঘন সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা সবকিছুই জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব প্রমাণ। আমি যখন এ আর্টিকেল লিখছি তখন ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বিগত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি।
গত মাসে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে ও পরবর্তী কয়েক দিন জার্মনি যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল এবং সেখানেও জলবায়ুর বৈচিত্র্য দেখা গেল। বসন্তে প্রচণ্ড বৃষ্টি আর শীত। আমাদের আয়োজক সংস্থার একজন ডাচ কথা প্রসঙ্গে আমাকে বললেন- আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন কিন্তু হেগের আবহাওয়া বিশ্বাস করবেন না। আসলেই দেখলাম পরিষ্কার দিন হঠাৎ মেঘ এবং অঝোরে বৃষ্টি। মাঝে মাঝে দিনব্যাপী বৃষ্টি। এগুলো সবই জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে ঘটছে।
পৃথিবীব্যাপী পরিবেশ দূষণরোধ ও প্রাণ-পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ১৯৭২ সাল থেকে প্রতিবছর ‘৫ জুন’ বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা। এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘Solutions to plastic pollution’ আর আমাদের দেশীয় প্রতিপাদ্য হলো ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে সামিল হই সবাই মিলে’ এবং প্রচারণার থিম ঠিক করা হয়েছে #BeatPlasticPollution ।
বর্তমান বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৪০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়। যার মাত্র ১০ শতাংশ রিসাইক্লিন বা পুনঃব্যবহার হয়। ধারণা করা হয় বছরপ্রতি প্রায় ১৯-২৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রদ, নদী ও সমুদ্রে পতিত হয়। যা প্রত্যক্ষ দূষণে ছোট-বড় জলজ প্রজাতির জন্য এক মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে এবং পরোক্ষভাবে এই ধরণীকেও চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। শুধু তাই নয়, প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রকণা আমাদের খাদ্যের সঙ্গে, পানির সঙ্গে এমনকি নিঃশ্বাসের সঙ্গে মানবদেহে প্রবেশ করছে। অনেক প্লাস্টিক যোজনের মধ্যে কিছু কিছু উপাদান রয়েছে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকি।
আশার দিক হলো এ সমস্যার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিজ্ঞানভিত্তিক যেমন সমাধান রয়েছে ঠিক তেমনি বিশ্বের নানা দেশে প্লাস্টিকের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার সীমিত হচ্ছে। আর সময়ের দাবি হলো সরকারি-বেসরকারি, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণসহ সবার যৌথ উদ্যোগে এ সমস্যার মোকাবিলা ও আশু সমাধানের জন্য কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা।
আজ পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলার বিষয়টি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বজনীন এ সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য বৈশ্বিক অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় সমস্যার আশুসমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
মোহাম্মদ আফতাবুজ্জামান : পরিবেশ ও উন্নয়নকর্মী
মন্তব্য করুন