আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকেই নজর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। এই নির্বাচন ঘিরে সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীনদের মূল শক্তি তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও মনোমালিন্য দূর করে আসন্ন নির্বাচনের দিকে নজর দিয়ে উজ্জীবিত করতেই বিশেষ বর্ধিত সভার উদ্যোগ নেওয়া হয়। রোববারের সেই বৈঠকে তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে দলীয় প্রধান একটি বার্তাই দিয়েছেন—দলকে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আনতে তৃণমূলে ঐক্যের বিকল্প নেই। সেই ঐক্য গড়তেই দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, দেশের জন্য জনগণের জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, নৌকার প্রার্থীর জন্য কাজ করতে হবে। এর মাধ্যমে তৃণমূলকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের জন্য নিযুক্ত করল ক্ষমতাসীন দলটি।
বৈঠকে দলের জেলা, উপজেলা ও মহানগরের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ সভায় দলের তৃণমূলের কাণ্ডারিরা নিজ এলাকার সংসদ সদস্য ও অন্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্বের বিষয় তুলে ধরেন। অনেকে দলের সাংগঠনিক নাজুক অবস্থার বিষয়ে অভিযোগ জানান। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে দলের জন্য ও যাকেই প্রার্থী করা হোক না কেন তার পক্ষেই কাজ করতে তৃণমূলের নেতাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন দলীয় প্রধান। নইলে, পরিণতি কী হবে, সে বিষয়েও স্মরণ করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালবেলাকে বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলের প্রাণ। আর আগামী ভোটের দিকে নজর দিয়ে এই প্রাণশক্তিকে উজ্জীবিত করতে আমাদের সভাপতি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে তৃণমূলে। এই গতি নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেবে। দিকনির্দেশনা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নেত্রী তৃণমূলের নেতাদের অভিযোগগুলো আমলে নিয়েছেন সেগুলোর বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থাও নেবেন।
জানা গেছে, ভোটের দিকে দলের নীতিনির্ধারকদের যেমন নজর, সেভাবে তৃণমূলের আগ্রহের সীমা নেই। সেজন্যই রোববারের বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেখেশুনে জনপ্রিয়তা যাচাই করে মনোনয়ন দেওয়ার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে মনে করিয়ে দেন, মনোনয়নে ভুল করলে পরিণতি খারাপ হতে পারে। এজন্য বর্তমান সংসদ সদস্যদের দায়ী করেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, যাকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হোক, ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। নৌকা মার্কায় যাকেই মনোনয়ন দিই, ভালো-মন্দ, কানাখোঁড়া, যা-ই হোক—আপনাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আপনারা তাকেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। দলীয় প্রধানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সভায় উপস্থিত সব নেতাকর্মী হাত তুলে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা কালবেলাকে বলেন, এমপি ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে, তৈরি হয়েছে দূরত্ব। অবহেলা ও উপেক্ষার শিকার হয়ে ত্যাগী আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। তাদের সক্রিয় ও উজ্জীবিত করতে মূলত দলের এই সভা। দলীয় সভাপতি জানেন কখন তাদের সক্রিয় করতে হবে। এই নেতাকর্মীরা দলের সভাপতি ছাড়া কারও কথা শুনবেন না। বলা যায়, আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠে সর্বাত্মক প্রস্তুতির একটি ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করল।
বর্ধিত সভায় ৪৩ জন তৃণমূলের নেতা বক্তব্য দেন। তাদের কথায় ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি থাকলেও দলের পক্ষে কাজ করতে, নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ তার সুরও ফুটে ওঠে। তারা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ডাকের অপেক্ষায় ছিলেন, সেটাও স্পষ্ট হয়েছে।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, অনেকেরই এমপি হওয়ার স্বপ্ন থাকতে পারে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ তালুকদার দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা আজকে আপনার সামনে কমিটমেন্ট করে যাবেন যে, আমরা দলের ভেতরে কোনো বিভাজন করব না। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াব।
আরও পড়ুন : বিদেশি প্রভুদের সাড়া না পেয়ে দিশেহারা বিএনপি : ওবায়দুল কাদের
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন বলেন, নেত্রী আপনি যাকে খুশি মনোনয়ন দিন। আমরা বিজয়ী করব। তবে একটা দাবি, তৃণমূলের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ নেই, তাদের মনোনয়ন দেবেন না। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জান তরুণ বলেন, আওয়ামী লীগ আজ অনেক বেশি শক্তিশালী। কোনো অশুভ শক্তিই ষড়যন্ত্র করে সফল হতে পারবে না। আমরা রাজপথে থেকে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব। আগামীতে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করতে আমরা প্রস্তুত আছি।
জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার দাস আগামীতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় জনপ্রিয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ কালবেলাকে বলেন, ভোটের কথা মাথায় রেখেই ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে এটাই মূল বার্তা। সেইসঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রচার করবে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের। দল যাকেই মনোনয়ন দিক, তার পক্ষেই কাজ করবে।
মন্তব্য করুন