কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৫, ১২:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

উপদেষ্টাদের প্রতি জামায়াত আমিরের কড়া বার্তা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

দলনিরপেক্ষ সরকারের অংশ হয়ে রাজনীতি করলে জাতি মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

শনিবার (৩ মে) সকালে মগবাজার আলফালাহ মিলনায়তনে দুদিনব্যাপী জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, এ সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে সরকারের কিছু উপদেষ্টা অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করেন, যা দেখে আমরা বিস্মিত হই। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ থেকে তাদেরকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে হলে সরকার থেকে বের হয়ে এসে দিতে হবে, ওখানে থেকে নয়। রাজনীতি করার অধিকার আপনার আছে যেমন অধিকার আমার আছে। কিন্তু একটি দল নিরপেক্ষ সরকারের অংশ হয়ে কেউ রাজনীতি করতে চাইলে জাতি মেনে নেবে না, জাতি এটা চায় না। এই সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া উচিত।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে সরকার গঠিত হয়েছে জনআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে, সেই সরকারকে সহযোগিতা করা আমাদের সবার কর্তব্য। দেশ বিরোধী কোনো কাজ আমাদের সামনে ধরা পড়লে আমরা সহযোগিতা করবো না। আমরা পরামর্শ দেব, সমালোচনা করব এবং ক্ষেত্র বিশেষে আমরা প্রতিরোধ করব। এটি ছিল আমাদের নীতি এবং এটি আমরা অনুসরণ করে চলেছি। এজন্য আমরা সরকারের সকল গৃহীত পদক্ষেপে ইয়েস বলিনি। যেখানে দেখি জনস্বার্থে বিঘ্নিত হচ্ছে, সেখানে আমরা আপত্তি উত্থাপন করি, প্রতিবাদ জানাই, কর্মসূচি পালন করি। আমরা এর ভিত্তিতেই এ সরকারকে সহযোগিতা করার পক্ষে।

জাতি একটি সুস্থ নিরপেক্ষ বস্তুনিষ্ঠ অপেক্ষায় আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে অনেকেই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। আমি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি জনগণের সামনে তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, অবশ্যই নির্বাচন সুষ্ঠু ও বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। এই সুষ্ঠু ও বস্তুনিষ্ঠতার স্বার্থে অবশ্যই কিছু সংস্কার দৃশ্যমান হতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের সুপারিশমালা কমিশনের কাছে পেশ করেছি। তাদের সঙ্গে আমাদের বসা শুরু হয়েছে সামনে আরও সিরিজ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে আমরা মনে করি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও তারা বসছে। একটি সুন্দর সমাধান এই আলোচনা থেকে বের হয়ে আসবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, আমরা সকল দলের প্রতি আহ্বান জানাব; রাজনীতি নিজের জন্য নয়। রাজনীতি দেশ ও জনগণের জন্য হতে হবে। দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থকে সামনে রেখে আমরা যেন মন খুলে সংস্কারে সহযোগিতা করতে পারি। আমরা যত বেশি সহযোগিতা করব তত বেশি জাতি উপকৃত হবে এবং দ্রুত নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হবে। এখানে যদি সহযোগিতার ঘাটতি হয় তাহলে সবকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। আমরা চাই না জাতীয় জীবনে আরেকটা অনিশ্চয়তা আসুক।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চলা গণহত্যার বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এও বলেছি যে প্রকৃত যারা অপরাধী তাদের বিচার দৃশ্যমান হোক। এই স্বল্প সময়ের সব বিচার করা সম্ভব নয় আমরাও বুঝি কিন্তু কিছু বিচার অবশ্যই করতে হবে। জাতির মনে আস্থা তৈরির জন্য যারা প্রধান অপরাধী তাদের কিছু বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। সরকারের চেষ্টায় আমরা দুর্বলতা লক্ষ্য করছি, আমরা আরও গতি চাই। তৎপর হয়ে তারা বিচার কাজ সম্পন্ন করবেন এটা আমরা দেখতে চাই। যদি এদের বিচার হয় তাহলে আগামী নির্বাচনেও কালো টাকা ও পেশিশক্তির যে প্রভাব তা দেখানোর দুঃসাহস কেউ দেখাবে না। আর বিচার যদি না হয় এ আশঙ্কা থেকেই যাবে। এ নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য, জনমতের শতভাগ ঘটানোর জন্য, আমাদের দেশের পার্লামেন্টকে কোয়ালিটি ফুল করার জন্য, পেশিশক্তি ও কালো টাকার প্রভাবমুক্ত করার জন্য আমরা বলেছি পিআর সিস্টেমে নির্বাচন হতে হবে। বিশ্বের ৬২টি দেশ পিআর পদ্ধতির অনুসরণ করছে এবং বেশিরভাগ উন্নত দেশে এই সিস্টেম বিদ্যমান। যারা একবার এই সিস্টেম শুরু করেছে তারা আর বাদ দেয়নি। আমরা ট্র্যাডিশনাল নির্বাচন দেখে আসছি। তার মধ্য দিয়ে সংসদের ভেতরে আইন প্রণেতা হিসেবে এমন এমন ব্যক্তিরাও যান, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে পারি মেয়ের লিখা স্ক্রিপ্টও তারা পড়তে পারেন না। তারাও সেখানে যান। তারা কি আইন রচনা করে বাংলাদেশের মানুষকে দেবেন? তারা কোন আইনটি সংস্কার করার অ্যাবিলিটি রাখেন? তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আইন প্রণয়নের জন্য, আইন সংস্কারের জন্য ওরকম ক্যাপাসিটি যাদের আছে তাদেরই যাওয়া উচিত। এ জন্য আমরা বলেছি, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হারেই সংসদে যাবেন। এতে করে কেউ কাউকে ছোট দল বলার সাহস পাবে না, সবারই অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। কোনো দল কারও দয়ায় নয়, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যাবে। যদি নিজের পা মজবুত না হয় সে মজবুত করার চেষ্টা করবে। নিজের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টা করবে- এ বিষয়টি আমরা স্পষ্ট করেছি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের সঞ্চালনায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ডেলিগেট হিসেবে ছিলেন মহানগরী ও জেলা পর্যায়ের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলরা।

উল্লেখ্য, ৮৯টি জেলা ও মহানগরী আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলদের নিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর পর উন্মুক্ত পরিবেশে এই সম্মেলন করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে বিজেআইএমের সিম্পোজিয়াম

‘ইঞ্জিনিয়ার তুহিন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার’

পুরানা পল্টনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা পেছাল

মানারাতে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যারিয়ারবিষয়ক কর্মশালা 

ঝুঁকি নিয়েই চলছে চার বিদ্যালয়ের পাঠদান

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে বিএনপির গণপদযাত্রা কাল

সংস্কারের নামে সময় নষ্ট করবেন না: অ্যাডভোকেট সালাম

খুবি শিক্ষার্থী নোমানের সনদ বাতিল

খুন হয়েছেন সাগর-রুনি, হত্যায় অংশ নেন ২ জন

১০

ভারতে গেলেন সন্তু লারমা

১১

বিরল সাপের কামড়ে নারীর মর্মান্তিক মৃত্যু

১২

রহস্যের জট খোলেনি সিরাজগঞ্জের সেই ভয়ংকর গুপ্তঘরের

১৩

ছাত্রদল নেতার হাতে জিম্মি মহাসড়ক

১৪

ছবি পাল্টে বড় ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তোলেন ছোট ভাই

১৫

ফুল-ফসলের বিষে কমছে ফুলটুনি

১৬

গোবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

১৭

মাওলানা রইস হত্যা / খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

১৮

নির্বাচন এপ্রিলের মধ্যে হওয়া উচিত : জামায়াত আমির

১৯

সাইকেল চোরকে তিন মাসের কারাদণ্ড ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালতের 

২০
X