নির্বাচন হলে যাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, তারাই নির্বাচন আটকানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
সোমবার (২১ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য হুমকি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
দুদু বলেন, সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করা হয়েছে। সেই ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারীদের বিচার করা ছাড়া দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। হাসিনা গণহত্যাকারী, এ বিষয়ে এ দেশে কারও দ্বিমত নেই। জাতিসংঘের দ্বিমত নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ তাকে আশ্রয় দিয়েছে। তারাই তো হাসিনাকে দিয়ে বাংলাদেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল।
তিনি বলেন, হাসিনা শুধু হত্যাকারী, লুণ্ঠনকারী, স্বৈরশাসকই নন, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তিনি এই দেশটাকে এক ধরনের উপঢৌকন হিসেবে ভারতের কাছে তুলে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি, সামাজিকতা, পররাষ্ট্রনীতি সবকিছু ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এ কথা শেখ হাসিনা নিজে স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভারতকি এমন কিছু দিয়েছি যে, তারা ভুলতে পারবে না। কী দিয়েছিলেন, সেটা বলেননি। তাহলে বলা যায়, এই দেশটাকে দিয়েছিলেন। তিনি সুযোগ পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দেশটাকে ভারতের কাছে দিয়ে দিতেন। তাই শেখ হাসিনাকে কোনোভাবে ক্ষমা করা যাবে না। তার বিচার অবশ্যই করতে হবে।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, জুলাই-আগস্টে যারা নিহত হয়েছে, তাদের পরিবার এবং যারা আহত হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। ইতোমধ্যে বিএনপি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের দায়িত্ব নেওয়া হবে।
বাংলাদেশের চার থেকে পাঁচটি বাজেটের টাকা হাসিনা নিয়ে গেছেন এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে যে টাকা-পয়সা লুটপাট করছে আওয়ামী লীগ, তার একটি টাকাও এখনো দেশে ফেরত আনতে পারেনি সরকার। সে টাকা ফেরত আনতে হবে।
ড. ইউনূস সম্পর্কে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ড. ইউনূসকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে। তাকে নিয়ে আমরা গঠনমূলক সমালোচনা করি, যেন তিনি সঠিক পথে থাকেন এই জন্য। তার ভাবমূর্তি সারা দেশে আছে এবং সারা বিশ্বে আছে। সেটা ব্যবহার করে দেশ সমৃদ্ধ হবে, এটাই বিএনপি মনে করে। তার কাছে আমাদের একটাই প্রত্যাশা, যত দ্রুত সম্ভব একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচন ছাড়া এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।
তিনি বলেন, অনন্তকাল ধরে যদি আমরা নির্বাচনকে ফেলে রাখি, তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু বসে থাকবে না। ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। ইতোমধ্যে গোপালগঞ্জে তা প্রমাণিত হয়েছে। সেটা ঢাকা শহরে ঘটবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সতর্ক থাকতে হবে এবং নির্বাচিত একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, নির্বাচন হলে যাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, তারাই নির্বাচন আটকানোর চেষ্টা করছে। আমাদের নেতা ৬-৭ মাস আগে বলেছেন- এবারে নির্বাচন খুব সহজ হবে না। ইতোমধ্যে কিন্তু তা প্রমাণিত হচ্ছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া অন্য কোনো কিছু দেশের জনগণ মানবে না।
সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সহ-সভাপতি শিল্পী জেনস সুমন, মহিদুল ইসলাম মামুন, শরীফুল হাই প্রমুখ।
মন্তব্য করুন