বাংলাদেশ ব্যাংক বসে বসে তামাক খায় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। বুধবার (২১ জুন) ব্যাংকের পরিচালক পদে টানা ১২ বছর থাকার বিধান যুক্ত করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার প্রতিবাদে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে সংসদের অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) বিল-২০২৩’ পাসের প্রস্তাব করার পর তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এই আইন পাসের প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন জাতীয় পার্টির সদস্যরা।
সংসদে পাস হওয়া বিলে খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। যদিও এসব সংশোধনী সংসদে উপস্থাপিত বিলে বা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনে ছিল না। আবার পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানোর সংশোধনী প্রস্তাব আনার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রবল আপত্তি তোলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
তারা তীব্র সমালোচনা করেন এবং ব্যাংক লুটপাটের জন্য পরিচালকদের দায়ী করেন। পরিচালকদের সুবিধা দেওয়ার জন্য আইন সংশোধন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তারা পরিচালকদের মেয়াদ ‘আজীবন’ করে দেওয়ারও প্রস্তাব করেন।
এর আগে গত ৮ জুন ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল–২০২৩ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছিল। সংশোধনীর মূল প্রস্তাবে পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানো-কমানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব ছিল না। পরে সেটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হলে কমিটিও পরিচালক পদের মেয়াদ নিয়ে কোনো সংশোধনী দেয়নি।
সংসদে এ বিলটি পাসের আগে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু পরিচালকদের মেয়াদ বাড়িয়ে ১২ বছর ও খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ সুবিধাবিষয়ক সংশোধনী দুটি প্রস্তাব করেন।
প্রস্তাবটি দেখে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্যরা। বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন এভাবে বিলে সংশোধনী আনা যায় কিনা? এ বিষয়ে তারা স্পিকারের ব্যাখ্যাও দাবি করেন।
এ সময় সংসদে জাতীয় পার্টির সদস্যরা হইচই, চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন। এতে সাময়িক সময়ের জন্য সংসদে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। অবশ্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে সংসদে রুলিং দেন। পরে জাতীয় পার্টির অনুপস্থিতিতে বিলটি পাস হয়।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, পরিচালক পদের মেয়াদ ১২ বছর করার জন্য সরকারি দলের একজন সদস্য সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছেন। এটা বিল উত্থাপনের সময় ছিল না। যেহেতু সরকারি দলের সংসদ সদস্য এ প্রস্তাব দিয়েছেন, তাই মনে হচ্ছে এটা গ্রহণ করা হবে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন- বিষয়টি সংসদে উত্থাপনই হয়নি, সেটা চাওয়া হয় কী করে? ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, পরিচালকরা হচ্ছেন ব্যাংক লুটপাটের মূলহোতা। কোনো পরিচালক সুপারিশ না করলে আমার মতো লোক গেলে ব্যাংকঋণও মিলবে না। চেয়ারম্যান-পরিচালকের কারণে ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক শেষ। যে আইনের কোনো ধারা অর্থমন্ত্রী সংশোধনীতে আনেননি। যে সেকশন সংশোধনের জন্য সংশোধনী কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি, সেখানে একজন সরকারি দলের সদস্য কোন আইনে এ সংশোধনী আনলেন। তিনি এটা পারেন কিনা? এটা জানা খুবই দরকার। অভিভাবক হিসেবে স্পিকার এটা বলবেন বলে আশা করি।
চুন্নু বলেন, ‘মনে হচ্ছে, অর্থমন্ত্রীকে কনভিন্স করে সরকারি দল করেন- এমন অনেক ব্যাংকের পরিচালকদের সুপারিশে এটা আনা হয়েছে পাস করার জন্য। সেটা হলে আমরা আমাদের সব সংশোধনী প্রত্যাহার করলাম। কারণ এর চেয়ে বড় অন্যায় আর হতে পারে না। যেখানে ব্যাংক লুটপাট করা হচ্ছে। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বসে বসে তামাক খায়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান-পরিচালক হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে চলে যায়। আপনারা দেখছেন না? আপনারা আছেন কাউকে ফেভার করার জন্য। পরিচালকের মেয়াদ ১২ বছর করার এ প্রস্তাবকে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ব্যাংক মালিকদের অনুদান দেওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, তারা এ টাকা দিয়ে প্রথম ও শেষ পাতায় বড় বড় ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন করে প্রধানমন্ত্রীর হাতে দিচ্ছেন। আরও এক বস্তা খালেদা জিয়ার হাতে দিয়েছেন। সেটা তো প্রকাশ করেন না। এদের চরিত্র একই। এরা আপনার হাতের কলকি খেয়ে চলে যাচ্ছে। আপনাদের হাতে গন্ধটা থেকে যাচ্ছে। এখনো সাবধান হোন। এদের আইনের আওতায় নিয়ে আসেন।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ব্যাংক মালিকদের সুবিধা দেওয়ার জন্য আইনটি আনা হয়েছে। তারা জনগণের টাকার অপব্যবহার করে। সর্দি-কাশি হলেই তারা ব্যাংকের টাকায় সিঙ্গাপুর চলে যান।
মন্তব্য করুন