গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেছেন, দেশের মানুষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে, গণতান্ত্রিক বিশ্বও এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি। সেই ভয়ে এত জলদি করে এমপি-মন্ত্রীরা শপথ নিলেন। তাদের ভয়, কখন গণেশ উল্টে যায়। কিন্তু এই শপথ নেওয়া কিংবা দ্রুত সরকার গঠনেও কাজ হবে না। কারণ, জনগণ এই সরকারকে মেনে নেবে না।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে এ কথা বলেন তারা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল করে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে এই কর্মসূচি হয়।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লা কায়সারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম এবং জেএসডির সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব।
নেতারা বলেন, ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল বিরাণ ভূমি। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এই ভোট বর্জন করেছে। ৫-৭ শতাংশ ভোট করেছে কিনা সন্দেহ। সিইসি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাকে জাগিয়ে ৪১ শতাংশ ভোটের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তারা নিজেরাই সাক্ষ্য দিচ্ছে ৭ তারিখে কোনো নির্বাচন হয়নি। সরকারি দলের জোটসঙ্গীরা, এমনকি তাদের নিজেদের কেন্দ্রীয় লোকেরাই এখন সাক্ষ্য দিচ্ছে- নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে সিল মেরে ব্যালটবাক্স ভর্তি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকেরাও বেকুব হয়ে গেছেন। ভোট দিলাম না কিন্তু এত ভোট পড়ল কখন। ফলে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মানুষ বলছে ডামি লীগ। কেউ কেউ বলছেন তামাশা লীগ। মানুষের ভোটাধিকার নিয়ে তারা তিনবার তামাশা করেছে।
তারা বলেন, ৭ তারিখের নির্বাচনের ভেতর দিয়ে বাস্তবত দ্বিতীয় বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সরকারের সিন্ডিকেট হাজার কোটি টাকা লুট করে এখন দেশে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাংলাদেশে দুর্বৃত্তের সংজ্ঞা বদলে গেছে। এরা ভোট চুরি করে, টাকা পাচার করে, ব্যাংক লুট করে। এদের সিন্ডিকেটের রাজত্বের ফলে শপথ নেওয়ার সাথে সাথেই বাজারে চাল-ডাল পেঁয়াজসহ সকল জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়া শুরু হয়েছে। জনগণ এই দৌরাত্ম্য মেনে নিবে না। অচিরেই নতুন গণশক্তি রাজপথে অবস্থান নেবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, ৭ জানুয়ারি মানুষ ভোট বর্জন করে নৈতিক যে শক্তি দেখিয়েছে, এটা গণতন্ত্রের শক্তি, মানবিক মর্যাদার শক্তি, ন্যায় বিচারের শক্তি। এটা নতুন গণপ্রতিরোধের সূচনা। এর ওপর দাঁড়িয়েই চলমান আন্দোলন নতুন শক্তিতে বলিয়ান হবে। জনগণের আন্দোলনের মুখেই এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে।
তারা আরও বলেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে সকল দলের সাথে আলোচনা করে নতুন করে ভোটের আয়োজন করতে হবে। ইতোমধ্যে রাজপথের ঐক্য গড়ে উঠেছে। যারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতারিত হয়েছেন তাদেরকেও জনগণের কাতারে আসতে হবে। জনগণের সম্মিলিত শক্তিতে এই সরকারের মসনদ ভেঙে পড়বে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাক্কারুল ইসলাম নবাব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন