৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘ডামি নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে এই নির্বাচনের সংসদ দিয়ে সরকারের আয়ু বাড়ানো যাবে না বলে দাবি করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সেগুনবাগিচায় সংহতি মিলনায়তনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।
সাইফুল হক বলেন, দেশের সকল বিরোধী দল গেল ৭ জানুয়ারির পাতানো ডামি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও বর্জনের যে ডাক দিয়েছিল- দেশের মানুষ অভূতপূর্ব, স্বতঃস্ফূর্ততায় তাতে সাড়া দিয়ে সরকার, সরকারি দল ও নির্বাচন নামক তামাশার প্রতি নজিরবিহীন গণঅনাস্থা প্রকাশ করেছে। মানুষ তাদের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার এই নির্বাচনী তামাশা গ্রহণ করেনি। গণতান্ত্রিক বিশ্ব হিসেবে পরিচিত দেশসমূহ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও ভাগবাটোয়ারার এই নির্বাচনী প্রহসন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
তিনি বলেন, বিদেশিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারকে সরকারের প্রতি সমর্থন কিংবা তাদের অনৈতিক ক্ষমতা প্রলম্বিত করার অথবা টিকে থাকার সার্টিফিকেট হিসেবে দেখানোরও কোনো অবকাশ নেই। ভারত, চীন ও রাশিয়া এই সরকারের প্রতি তাদের যে সমর্থন ব্যক্ত করেছে তা প্রধানত বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের বিবেচনায়। আওয়ামী লীগ সরকার জবরদস্তি করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে গিয়ে বাংলাদেশকে পরাশক্তিসমূহের লীলাক্ষেত্রে পরিণত করছে। এই পরিস্থিতি এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি ক্রমে বাড়িয়ে তুলছে।
সাইফুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে দেশের অবশিষ্ট গণতান্ত্রিক কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা আবারও একদলীয় শাসন জোরদার করতে তৎপর রয়েছে। জবরদস্তি করে ক্ষমতায় থাকতে তারা গোটা রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক পথে সরকার পরিবর্তনের পথও তারা বন্ধ করে দিয়েছে; এভাবে দেশকে তারা অকার্যকরী করে তুলছে।
তিনি বলেন, ডামি নির্বাচনের সংসদ দিয়ে সরকারের আয়ু বাড়ানো যাবে না। দেশের মানুষ এই দুঃশাসনকে কোনোভাবেই আর বরদাস্ত করছে না। ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন বর্জন করে দেশের মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে যে গণঅনাস্থা জানিয়েছে গণআন্দোলন-গণসংগ্রামের পথে তাকে রাজপথে নিয়ে আসাই এখন বিরোধী দলসমূহের প্রধান কর্তব্য।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলসমূহের মধ্যে রাজপথের যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, নতুন পর্যায়ে আন্দোলন পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যস্ত করে যুগপৎ ধারায় এই ঐক্য আরও সংহত ও জোরদার করা প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ তাদের অধিকার ও মুক্তির জন্য যে মরিয়া লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত তাকে সফল করতে বিরোধীদলসমূহকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনী তামাশার মধ্যে দেশের সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। সরকারের প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি দেশকে আরও বিভক্তি-বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়েছে; দেশকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অনিবার্য বিপর্যয়ের পথে। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে তিনি অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরি উদ্যোগ নিতে সরকার ও সরকারি দলের প্রতি আহবান জানান।
সাইফুল হক বলেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা; অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন এবং একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী সাম্যভিত্তিক গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠায় পার্টি ও গণতন্ত্র মঞ্চের ৩১ দফা গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কর্মসূচি বাস্তবায়নেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এদিকে, সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি এবং দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ ঊর্ধ্বগতি ও বাজার নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ জেলা পর্যায়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভের কর্মসূচি পালন করবে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাশিদা বেগম, সাইফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সংগঠক জামাল সিকদার, মো. স্বাধীন মিয়া প্রমুখ।
মন্তব্য করুন