গেল বছরের ৫ আগস্ট পেত্রা জেহরা বারহাদ নামে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ নিয়ে মালয়েশিয়ায় আসেন ৭১ জন বাংলাদেশি। স্বপ্নের মালয়েশিয়ায় আসার পরপরই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তাদের। প্রায় পাঁচ মাস কাজ না পেয়ে ক্ষুধা আর চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে এসব প্রবাসীরা। কষ্টের অভিযোগ তুলে ধরতে গেলেই শিকার হতে হয় নির্মম নির্যাতনের।
এদেরই একজন পাবনা প্রবাসী মো. শফিকুল ইসলাম (৩৩ )। ইউনিক নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় আসেন তিনি। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, সে অসুস্থ ছিল, চিকিৎসা হয়নি।
স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবস্থাও ভালো নয়। ভয় আর আতঙ্কে সময় কাটে তাদের। নিয়োগকর্তার নিয়োগকৃত লোকের দ্বারা নিয়মিতই নির্যাতনের শিকার হতে হয় এসব প্রবাসীকে। ৫ অক্টোবর মালয়েশিয়ায় আসলেও এখনো মেলেনি ভিসা কিংবা কাজ।
কাজ না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনেও যান এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন। আশ্বাস মিললেও চূড়ান্ত কোনো সুরাহা করতে পারেনি হাইকমিশন।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সিলর, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম বলেন, পেত্রা জেহরা বারহাদ কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ভবিষ্যতে এই কোম্পানি যাতে নতুন কোনো কর্মী না আনতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে হাইকমিশন। এখনো কাজ না পাওয়া কর্মীদের সমস্যা সমাধানে হাইকমিশন কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নিহত শফিকুল ইসলামের মরদেহ কোম্পানির মাধ্যমে দেশে পাঠাতে কাজ করছে হাইকমিশন। একই সঙ্গে বৈধভাবে আসায় তার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে পেত্রা জেহরা বারহাদ কোম্পানিতে কর্মরত ইফতেকার নামে এক বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সঠিক নয়, তাদের গায়ে হাত তোলা হয়নি, কোম্পানি থাকা খাওয়ারও সু-ব্যবস্থা করেছে। ট্যাক্স জটিলতার কারণে পাঁচ মাস ধরে তাদের বসিয়ে রাখতে হয়েছে। তবে ৪-৫ মার্চের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে সবাই ভিসা পাবে বলেও জানান তিনি।
ইফতেখার আরও জানান, মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর শফিকুল ইসলামকে সেপাং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনার সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যারা এমন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের কোনো ছাড় নেই। অভিযোগ রয়েছে এমন কোম্পানিকে পরবর্তীতে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিতে চিন্তা করবে হাইকমিশন।
মন্তব্য করুন