আ. ছালাম খান
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ইসলামে ইতিকাফের গুরুত্ব ও তাৎপর্য : সহি আকিদা অনুসরণ

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান। সৌজন্য ছবি
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান। সৌজন্য ছবি

ইসলাম মানবজাতির কল্যাণের জন্য এক পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যেখানে আত্মশুদ্ধি, ইবাদত ও নৈতিক উন্নতির জন্য নানা বিধান রয়েছে। ইতিকাফ হলো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা বিশেষ করে রমজান মাসের শেষ দশকে পালিত হয়। এটি আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন ও ইবাদতের প্রতি একাগ্রতা বৃদ্ধির অনন্য সুযোগ এনে দেয়। সহি আকিদার অনুসরণে ইতিকাফের সঠিক নিয়ম ও তাৎপর্য বোঝা আবশ্যক, যাতে আমরা শিরক, বিদআত ও অন্য কোনো গোমরাহি থেকে বেঁচে থেকে খাঁটি ইসলামের পথে চলতে পারি।

এই প্রবন্ধে কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইতিকাফের গুরুত্ব, তাৎপর্য, সামাজিক প্রভাব ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।

ইতিকাফের সংজ্ঞা ও মূল ব্যাখ্যা আরবি ভাষায় ‘ইতিকাফ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে কোনো স্থানে অবস্থান করা বা নিজেকে নিয়োজিত রাখা। ইসলামি শরিয়তে ইতিকাফ বলতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মসজিদে অবস্থান করা এবং আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করাকে বোঝায়।

কোরআনে ইতিকাফের বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে : ‘আর তোমরা যখন মসজিদে ইতিকাফরত থাক, তখন তোমাদের জন্য নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ নয়।’ (সুরা আল-বাকারা: ১৮৭)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা রমজানের নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষভাবে পালন করা হয়।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেও ইতিকাফ পালন করতেন। হাদিসে এসেছে :

‘রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজানের শেষ দশকে নিয়মিত ইতিকাফ করতেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ আমল অব্যাহত রাখেন।’ (সহিহ বুখারি : ২০২৬, মুসলিম : ১১৭২)

এ থেকে বোঝা যায়, ইতিকাফ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ ও দুনিয়ার ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হওয়ার মাধ্যম।

ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

১. আত্মার পরিশুদ্ধি লাভের মাধ্যম : ইতিকাফের মূল লক্ষ্য হলো আত্মশুদ্ধি। আল্লাহর ঘরে নির্জনে অবস্থান করে বেশি বেশি ইবাদত, তাওবা, জিকির ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বান্দার আত্মা পবিত্র হয়।

২. আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন : ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ পার্থিব ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে একান্তভাবে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হয়, যা তার ইমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি করে।

৩. লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান : ইতিকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদরের ফজিলত অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম (সুরা আল-কদর: ৩)।

৪. অহেতুক কাজ থেকে মুক্তি : ইতিকাফ মানুষকে দুনিয়াবি অহেতুক কাজ থেকে ফিরিয়ে আনে এবং ইবাদতের প্রতি একাগ্রতা সৃষ্টি করে।

ইতিকাফের সামাজিক প্রভাব

১. মন ও মস্তিষ্কের প্রশান্তি : দুনিয়ার ব্যস্ততা ও উদ্বেগ থেকে দূরে থেকে একাগ্রচিত্তে ইবাদত করা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।

২. নফসের ওপর নিয়ন্ত্রণ : ইতিকাফ মানুষকে তার নফসের নিয়ন্ত্রণ শেখায় এবং খারাপ অভ্যাস থেকে মুক্তি দেয়।

৩. সামাজিকভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন : ইতিকাফ পালনকারী ব্যক্তি আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সমাজে ন্যায়পরায়ণতা, সততা ও উদারতার প্রসার ঘটাতে পারে।

ইতিকাফের বিধান ও শর্তাবলি

১. ইতিকাফ পালনের স্থান : ইতিকাফ কেবল মসজিদে আদায় করা যায়। নারীরা বাড়ির নির্দিষ্ট একটি স্থানে (নামাজের স্থান) ইতিকাফ করতে পারেন।

২. সময়ের সীমা : রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ ২০ রমজানের সূর্যাস্তের পর থেকে শুরু হয় এবং শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত চলে।

৩. ইতিকাফকারী যা করতে পারবেন : নামাজ আদায় করা, কোরআন তিলাওয়াত করা, জিকির ও তাসবিহ পাঠ করা, দোয়া ও তাওবা করা।

৪. ইতিকাফ ভঙ্গের কারণ : মসজিদ থেকে বিনা কারণে বের হয়ে যাওয়া, শারীরিক ও মানসিকভাবে ইবাদত চালিয়ে যেতে অক্ষম হওয়া।

ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন

ইতিকাফ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ করে দেয়। এটি দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থেকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রচেষ্টার নাম।

হাদিসে এসেছে : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করে, আল্লাহ তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দকের দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন।’ (সহিহ বায়হাকি: ৩৭৩)

সুতরাং, ইতিকাফ পালনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত অর্জন করতে পারে এবং তার পরকালের সফলতার পথ সুগম করতে পারে।

ইতিকাফ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মানুষকে আল্লাহর নৈকট্যে নিয়ে যায় এবং আত্মশুদ্ধির পথ প্রশস্ত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ইবাদত পালন করতেন এবং উম্মতের জন্য এটি সুন্নত হিসেবে রেখে গেছেন।

সহি আকিদার ভিত্তিতে ইতিকাফ পালনের মাধ্যমে আমরা দুনিয়াবি ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে খাঁটি ইবাদতের স্বাদ পেতে পারি।

আসুন, আমরা সবাই ইতিকাফের গুরুত্ব বুঝে তা পালন করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের ইতিকাফ কবুল করুন এবং তার রহমত বর্ষিত করুন- আমিন।

লেখক: মহাপরিচালক (জেলা ও দায়রা জজ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন [email protected]

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আইভীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ

যমুনার সামনে তৈরি হচ্ছে আ.লীগ নিষিদ্ধের মঞ্চ

বিমানে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে ট্রাম্প প্রশাসন

পারভেজ হত্যায় গ্রেপ্তার টিনা, ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ

আইভীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের গাড়িবহরে হামলা

ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা, অস্বীকার পাকিস্তানের

পাকিস্তানে আরেকটি ভারতীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত

‘৯ মাসেও গণহত্যাকারী দল নিষিদ্ধ হলো না কেন’

বাদ জুমা বড় জমায়েতের ডাক হাসনাত আবদুল্লাহর

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা / নিহত ৪ জনের দুজন ছিলেন মসজিদের ইমাম

১০

রাতে শিবির মাঠে নামায় পাল্টে গেল দৃশ্যপট

১১

যমুনার সামনে রাতভর যা যা হলো

১২

কয়টি রাফায়েল আছে ভারতের, একেকটির দাম কত?

১৩

ফের গোলাগুলি শুরু, উত্তেজনা তুঙ্গে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে

১৪

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে নাক গলাতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র

১৫

দুপুরের মধ্যেই আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ড. মাসুদের

১৬

সকালেও বিক্ষোভ চলছে যমুনার সামনে

১৭

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিশুরা

১৮

আগুনে ঘি ঢালা নয়, শান্তি চাই : এরদোয়ান

১৯

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

২০
X