শুক্রবার—শুদ্ধতা আর শুভ্রতার মহোৎসবে পরিপূর্ণ একটি দিন। পুরো সপ্তাহের ক্লান্ত দেহ, অতৃপ্ত মন এ দিনটিতে সুখের পরশে জেগে ওঠে। উল্লাসে মাতে। হাদিস শরিফে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও দিনটিকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলে উল্লেখ করেছেন। তাই জুমাবার আমাদের জন্য আনন্দের দিন। পারস্পরিক মিলনোৎসবের দিন। এ দিন ব্যস্ততার দেয়াল টপকে আমরা একে-অপরে মিলিত হই। খোশগল্প করি। তবে, মুমিনদের এই খোশগল্প-সুখানন্দ শুধু দুনিয়ার জমিনেই না, পরকালেও তারা এই দিনে জান্নাতে মিলিত হবেন। আনন্দ-উল্লাস করবেন।
এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেছেন, জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমাবার জান্নাতিরা সেখানে জমায়েত হবেন। এরপর উত্তর দিকে মৃদু বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধুলোবালি তাদের মুখমণ্ডল ও পোশাক-পরিচ্ছদে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে যাবে। শরীরের রঙ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। পরে তারা নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে এসে দেখবে, পরিবারের লোকেদের শরীরের রঙ এবং সৌন্দর্যও বহুগুণে বেড়ে গেছে। পরিবারের লোকেরা তাদের বলবে, আল্লাহর শপথ! আমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর তোমাদের সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে। উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহর শপথ! তোমাদের সৌন্দর্যও আমরা তোমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর বহুগুণ বেড়ে গেছে। (মুসলিম : ২৮৩৩-১৮৮৯)
জনৈক তাবেয়ির প্রশ্নের জবাবে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) আমাকে জানিয়েছেন, জুমার দিন জান্নাতিদের মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে। তখন তারা তাদের রবকে দেখতে আসবেন। তাদের জন্য তার আরশ প্রকাশিত হবে। জান্নাতের কোনো এক বাগানে তাদের সামনে তাদের প্রভুর প্রকাশ ঘটবে। নূর, মণিমুক্তা, পদ্মরাগ, জমরুদ ও সোনা-রুপা ইত্যাদির মিম্বর রাখা হবে সেখানে। তাদের মধ্যকার সবচেয়ে নিম্নস্তরের জান্নাতিও মিশক এবং কপূরের স্তূপের ওপর আসন গ্রহণ করবেন।
অন্য এক হাদিসে আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জিবরাইল আলাইহিস সালাম শুভ্র আয়নার মতো একটা জিনিস নিয়ে আমার কাছে আসেন। আয়নাটিতে একটি কালো দাগ ছিল। আমি বললাম, এটা কী? তিনি বলেন, এটি হলো জুমার দিন। এ দিনকে আল্লাহ তায়ালা আপনার এবং আপনার উম্মতের জন্য ঈদের দিন বানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আপনারা ইহুদী ও নাসারা থেকে অগ্রগামী। এই দিনে একটা সময় আছে, যে সময় বান্দা আল্লাহর কাছে যে কল্যাণই প্রার্থনা করে আল্লাহ তাকে তা-ই দান করেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, জুমার দিনকে কালো দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হলো কেন? উত্তরে জিবরাইল আলাইহিস সালাম বলেন, এই যে কিয়ামত দিবস তা এ দিনেই সংঘটিত হবে। আখেরাতে জুমার দিনকে আমরা ‘ইয়াউমুল মায়িদ’ নামে স্মরণ করব।
এবার বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্ন করলেন, ‘ইয়াউমুল মাযিদ কী?’ জিবরাইল আলাইহিস সালাম উত্তর দেন, জান্নাতে আল্লাহ তায়ালা প্রশস্ত ও সুগন্ধময় একটা উপত্যকা বানিয়েছেন। এতে তিনি শুভ্র মেশকের একাধিক টিলা স্থাপন করেছেন। জুমার দিন এলে রব্বুল আলামিন এই উপত্যকায় অবতরণ করবেন। তখন সেখানে নবীগণের জন্য স্বর্ণের মিম্বরসমূহ রাখা হবে, শহীদগণের জন্য মুক্তার অনেক চেয়ার পাতা হবে এবং জান্নাতি হুরেরা আপন আপন কক্ষ থেকে অবতরণ করবে। এরপর সবাই মিলে আল্লাহর প্রশংসা ও মাহাত্ম্যের স্তুতি গাইতে থাকবে।
জিবরাইল আলাইহিস সালাম আরও বলেন, এরপর আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করবেন, ‘হে ফেরেশতারা, আমার বান্দাদের বিশেষ পোশাক পরিধান করাও।’ সে অনুযায়ী তাদের সজ্জিত করা হবে। তখন রব্বেকাবা নির্দেশ দেবেন, ‘আমার বান্দাদের জন্য বিশেষ খাদ্য পরিবেশন কর।’ আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তাদের জন্যই বিশেষ ভোজনের ব্যবস্থা করা হবে। এরপর আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘আমার বান্দাদের সামনে বিশেষ পানীয় উপস্থিত কর এবং তাদের আতর-খোশবু লাগিয়ে দাও।’
সবশেষ রাব্বুল আলামিন জিজ্ঞেস করবেন, ‘হে আমার বান্দারা, তোমরা আমার কাছে কী চাও?’ উত্তরে মুমিনরা বলবে, ‘আমরা কেবল আপনার সন্তুষ্টি কামনা করি।’
আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘আমি তোমাদের প্রতি রাজি হয়ে গেছি।’ তারপর প্রত্যেককে নিজ নিজ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ করা হবে। সবাই আপন আপন জান্নাতে চলে যাবে এবং হুরেরা ওইসব কক্ষে প্রবেশ করবে, যার প্রত্যেকটিই সবুজ (মূল্যবান রত্ন) পান্না বা লাল ইয়াকুতের তৈরি। (মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৪২২৮। মুজামে আওসাত, তবারানী ৩/৫৫ : ২১০৫৪)
মন্তব্য করুন