বরকত ও কল্যাণের মাস রমজান মাস। আল্লাহর দয়া এবং অনুগ্রহ লাভের মাস। এ মাসে আল কোরআন নাজিল হয়েছে। এই মাসে মানুষের মাঝে সংযম, সুশৃঙ্খলতা ও নিয়মানুবর্তিতা তৈরি হয়। এ মাসে মানুষ আল্লাহর আরও বেশি ঘনিষ্ঠ ও কাছের হয়।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন,
যখন রমজান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না।
আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে— হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রমজান মাস উপলক্ষে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য ৪টি উপহারের কথা বর্ণিত হয়েছে।
১. প্রথম ঘোষণা : দুষ্ট জিন ও শয়তানদের বন্দি করা হয়, যাতে তারা মুমিন বান্দার অন্তরে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করতে না পারে। মুমিন বান্দা যেন নির্বিঘ্নে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে।
২. দ্বিতীয় ঘোষণা : এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া মানে পাপ এবং অকল্যাণের দরজা বন্ধ করে দেওয়া। আর জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া মানে ভালো ও কল্যাণের দরজা খুলে দেওয়া।
৩. তৃতীয় ঘোষণা : এ মাসে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকেন—হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। এ মাস কল্যাণের মাস, বরকত ও পুণ্যের মাস। তাই কল্যাণপ্রত্যাশীরা যেন আরও আগ্রহী ও উদ্যমী হয়। তারা যেন ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং অকল্যাণের প্রার্থীরা যেন সংযমী হয়। তারা যেন পাপের মাত্রা কমিয়ে ফেলে।
৪. চতুর্থ ঘোষণা : এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তিদান করেন আল্লাহ তাআলা। বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার দয়ার আরেকটি নিদর্শন হলো, তিনি রমজান মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।
রমজানে রোজা রাখার ফজিলত
আমাদের প্রিয়নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু রোজা ছাড়া। কেননা তা আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সে আমার সন্তুষ্টির জন্য কামাচার ও পানাহার পরিত্যাগ করে। রোজা পালনকারীর জন্য রয়েছে দুটি খুশি যা তাকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশি হয় এবং যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে আনন্দিত হবে। রোজা পালনকারীর মুখের (না খাওয়াজনিত) ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম।’ (বুখারি ১৯০৪, মুসলিম ১১৫১)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, لِكُلِّ عَمَلٍ كَفَّارَةٌ، وَالصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ ‘প্রত্যেক আমলেরই কাফফারা আছে। রোজা আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেব।’ (বুখারি ৭৫৩৮, মুসনাদে আহমাদ ১০৫৫৪)
রোজাকে অন্য আমলের বর্ধিত সওয়াব থেকে আলাদা করা হয়েছে। অন্যান্য আমলের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ করার কথা বলা হলেও রোজার ব্যাপারটি আলাদা। কেননা এর সওয়াব সীমাবদ্ধ নয়; বরং আল্লাহ তাআলা রোজার সওয়াব বহু গুণে দান করবেন। কেননা রোজা সবর তথা ধৈর্য থেকে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّٰبِرُونَ أَجۡرَهُم بِغَيۡرِ حِسَابٖ
‘কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে, কোনো হিসাব ছাড়াই।’ (সুরা যুমার: আয়াত ১০)
ধৈর্য ৩ ধরনের। এ ৩ ধরণের ধৈর্য রোজার মধ্যে একত্রিত হয়।
১. আল্লাহর আনুগত্যের ওপর ধৈর্যধারণ করা
২. আল্লাহর হারাম জিনিস থেকে বিরত থাকতে ধৈর্যধারণ করা এবং
৩. আল্লাহর ফয়সালাকৃত কষ্টের উপর ধৈর্যধারণ করা।
এ কারণেই রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ، وَالصَّبْرُ ثَوَابُهُ الْجَنَّةُ
‘রমজান মাস ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত।’ (ইবন খুযাইমা ১৮৮৭) আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মন্তব্য করুন