ইসলাম মূল যে ৫টি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে রোজা তার মধ্যে একটি। অর্থাৎ ইসলামের ৫টি রুকনের মধ্যে রোজা অন্যতম। ফরজ রোজার পাশাপাশি ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব ও নফল রোজা রয়েছে।
মাসব্যাপী রমজানের রোজা পালন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ। রোজা থাকা অবস্থায় কিছু নিয়ম পালন করতে হয়। তবেই, রোজা যথাযথভাবে আদায় করা হয়।
রোজা রেখে মুখের ভেতর পরিষ্কার রাখাটা খুবেই জরুরি। নতুবা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। ইফতার থেকে সেহরির পর্যন্ত এ সময়ে টুথপেস্ট বা দাঁতের মাজন দিয়ে ব্রাশ করা যায়। নতুবা রোজা মাকরুহ হয়ে যায়।
কারণ রোজা রেখে টুথপেস্ট, টুথ পাউডার, মাজন বা কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা মাকরুহ। আর পেস্ট বা মাজন গলার ভেতরে চলে গেলে রোজাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট ব্যবহার না করার কথা বলেন বিশেষজ্ঞ আলেমরা।
রমজানে দিনের বেলা টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করতে না পারলেও দাঁত ও মুখের যত্ন নেওয়া আবশ্যক। কারণ, দুই দাঁতের মাঝখানে খাবার জমে থাকলে ডেন্টাল ক্যারিজ ও মাড়ির প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য রমজান মাসে ইফতার ও সেহরির পর মানসম্মত টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার পরামর্শ দেন ডেন্টিসরা।
স্বাভাবিক নিয়মে সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার অভ্যাস সবারই। কিন্তু রোজার মাসে সুবহে সাদিকের আগে ব্রাশ করতে না পারলে সমস্যায় পরতে হয়। তাই রোজা রাখা অবস্থায় মেসওয়াক করলে দাঁত ও মুখের যত্নের পাশাপাশি রোজারও যত্ন নেওয়া হয়।
এখন আসুন মেসওয়াকের উপকারিতাসমূহ জেনে নেই :
কেউ সেহরির শেষ মুহূর্তে সুবহে সাদিকের আগে ব্রাশ করতে না পারলে রোজার মাকরুহ থেকে বাঁচতে মেসওয়াক করা উচিত। এর মাধ্যমে নবীজির একটি বিশেষ সুন্নত পালনের পাশাপাশি সারাদিন মুখের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় মেসওয়াকের ব্যবহার সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মেসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। (ইব্নে নাসায়ি : ৫) আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যদি আমি আমার উম্মতের ওপর কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদের প্রত্যেক নামাজের সময় মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম। (বুখারি: ৮৮৭)
হাসান (রহ)-কে রোজা অবস্থায় দিনের শেষে মেসওয়াক করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রোজা অবস্থায় দিনের শেষে মেসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই। মেসওয়াক পবিত্রতার মাধ্যম। অতএব দিনের শুরুতে এবং শেষেও মেসওয়াক করো। (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক: ৪/২০২)
এ ছাড়া রমজান এবং রমজান ছাড়া পুরো বছর মেসওয়াক করা মুস্তাহাব। এর বাইরে যুগ যুগ ধরে দাঁতের সুরক্ষায় মেসওয়াক ব্যবহার একটি বিজ্ঞানসম্মত ও অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে প্রচলিত হয়ে আসছে। তাই রমজানে মুখের দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে এবং রোজাকে ত্রুটিমুক্ত রাখতে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ এ সুন্নতের ওপর আমল করা যেতে পারে।
বর্তমান সময়ে মেসওয়াকের সুন্নতটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এ বিষয়ে সচেতনতা নেই অনেকের মাঝেই। অথচ ফেতনা ফাসাদের সময়ে আল্লাহর রাসুলের কোনো সুন্নত সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে বিশেষ ফজিলত লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মাতের মধ্যে যখন ফেতনা-ফাসাদ হবে, তখন যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রাখবে, তাকে একশত শহীদের সাওয়াব প্রদান করা হবে। (মিশকাত-১৭৬, আত তারগীব ওয়াত তারহীব- ৬৫)
আরেক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার পর আমলহীন আমার কোনো সুন্নাতকে জিন্দা করবে (সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে) এবং তাকে দেখে যারা আমল করবে তাদের আমলের সওয়াবের মতোই সে সওয়াব প্রথম ব্যক্তিকে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় আমলকারীর সওয়াবের মাঝে কোনো কমতি হবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-২১০, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২৬৭৭, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-৩৩৮৫, মুসনাদে আবদ বিন হুমাইদ, হাদিস নং-২৮৯)
মন্তব্য করুন