দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদকে ঘিরে মোমিনের হৃদয়ে বয়ে যায় আনন্দণ্ডখুশির স্নিগ্ধ সমীরণ। মহান স্রষ্টার দরবারে পরম কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ে আনুগত্যের শির। এ আনন্দ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুনির্ধারিত মাধ্যম হলো ঈদ।
ঈদ আনন্দও একটি ইবাদত। তাই একজন মোমিনের ঈদ আনন্দ পালন কেমন হবে, তা দেখিয়েছেন প্রিয় নবীজি (সা.)। বিভিন্ন হাদিসে নবীজি (সা.)-এর ঈদযাপনের নানা চিত্র উঠে এসেছে। একজন অনুগত মোমিন হিসেবে নিজের জীবনে সে সুমহান আদর্শের বাস্তবায়ন করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য।
নবীজি (সা.) ঈদের দিন আনন্দ প্রকাশে উৎসাহিত করেছেন। শরিয়তসিদ্ধ আনন্দ প্রকাশের বহু মাধ্যম রয়েছে, তা গ্রহণ করে আনন্দ প্রকাশ করা বৈধ। তবে আনন্দ বিনোদনের নামে ইসলামে নিষিদ্ধ কোনো কাজ করা অনুগত মোমিনের জন্য শোভা পায় না।
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ঈদের দিন আমার ঘরে আগমন করলেন। তখন আমার কাছে দুটি বাচ্চা মেয়ে বুআস যুদ্ধের বীরদের স্মরণে গান করছিল। তারা পেশাদার গায়িকা ছিল না।
এর মধ্যে আবু বকর (রা.) ঘরে ঢুকে আমাকে ধমকাতে লাগলেন, ‘নবীজি (সা.)-এর ঘরে শয়তানের বাঁশি?’ রাসুল (সা.) তার কথা শুনে বললেন, ‘মেয়ে দুটিকে গাইতে দাও আবু বকর! প্রত্যেক জাতির ঈদ আছে, আর আজ আমাদের ঈদের দিন।’ (বোখারি : ৯৫২)।
অন্য এক হাদিসে এসেছে- আয়েশা (রা.) বলেন, এক ঈদের দিন ক’জন হাবশি লাঠি নিয়ে খেলা করছিল। রাসুল (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আয়েশা! তুমি কি লাঠিখেলা দেখতে চাও?’ বললাম, ‘হ্যাঁ’। তিনি তখন আমাকে তার পেছনে দাঁড় করান। আমি আমার গাল তার গালের ওপর রেখে লাঠিখেলা দেখতে লাগলাম।
তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন, ‘হে বনি আরফেদা! লাঠি শক্ত করে ধরো।’ আমি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তিনি তখন বললেন, ‘তোমার দেখা হয়েছে?’ বললাম, ‘হ্যাঁ’। তিনি বললেন, ‘তাহলে এবার যাও।’ (বোখারি : ৯৫০)।
আলী (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ঈদের দিন আমাদের সবচেয়ে উত্তম পোশাকটি পরিধান করতে বলেছেন।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ৭৫৬০)। বিখ্যাত ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) দুই ঈদে উত্তম পোশাক পরিধান করতেন। তার একটি বিশেষ পোশাক ছিল, যা তিনি দুই ঈদ ও জুমায় পরতেন।’ (যাদুল মাআদ : ৪২৫/১)।
ঈদুল ফিতরের দিনে কিছু না খেয়ে বেরুতেন না। আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের আগে কিছু খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কোরবানির গোশত দিয়ে আহার করতেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৪২২)।
আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি খেজুর না খেয়ে বেরুতেন না। আর খেজুর খেতেন বিজোড় সংখ্যায়।’ (বোখারি : ৯০০)। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসুল (সা.)
রাসুল (সা.) সবসময় ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়তেন। মসজিদে আদায় করতেন না। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় (নামাজের জন্য) ঈদগাহে যেতেন।’ (বোখারি : ৯৫৬)।
নবীজি (সা.) ঈদগাহে যাওয়ার সময় কোনো বাহনে আরোহণ করতেন না; হেঁটে যেতেন, আবার হেঁটে ফিরে আসতেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) হেঁটে ঈদগাহে যেতেন এবং হেঁটেই ফিরে আসতেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১২৯৫)।
নবীজি (সা.)-এর অভ্যাস ছিল, যে রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যেতেন, সে রাস্তা দিয়ে ফিরতেন না; বরং অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরতেন। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ঈদগাহ থেকে ফেরার ক্ষেত্রে রাস্তা বদলাতেন।’ (বোখারি : ৯৮৬)।
মন্তব্য করুন