আরব আমিরাতের মাটিতে এসে এমন পরিণতির কথা কেউ কল্পনাও করেনি। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে জয়ের পথে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ ৫ ওভারে ছন্দহীন বোলিং, বাজে ফিল্ডিং আর কাঙ্ক্ষিত চাপ প্রয়োগে ব্যর্থতায় তারা ৭ উইকেটে হার মানল সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে! তাতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খুইয়েছে লিটন দাসের দল।
এটাই কি বাংলাদেশ দল? যারা নিয়মিত বিশ্বকাপে খেলে, এশিয়ায় ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করে—সেই দলের এমন ছন্দপতন গভীর প্রশ্ন তোলে দলের সামর্থ্য আর মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ তুলেছিল ১৬২ রান—একটা ভালো সংগ্রহ। তানজিদ হাসান ঝড়ো শুরু এনে দেন ১৮ বলে ৪০ রানের ইনিংসে, জাকের আলী খেলেন স্থির ৪১ রানের ইনিংস। বোলিং শুরুটাও ভালো ছিল। মাত্র ১৪ রানে আমিরাত হারায় তাদের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ওয়াসিমকে। এরপর রিশাদ হোসেন তুলে নেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট—জোহাইব।
কিন্তু এরপর? সেই প্রশ্নটাই এখন পুরো বাংলাদেশ শিবিরের ঘাড়ে চেপে বসেছে।
রিশাদই যখন বল হাতে এলেন ১৬তম ওভারে, তখনো ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সেই ওভারেই ঘটে যায় বিপর্যয়। এক ওভারে আসে ১৯ রান, সাথে তানজিদের হাতে মিস হয় সহজ ক্যাচ, যেটা সরাসরি গিয়ে ছক্কা হয়! আমিরাতের ড্রেসিংরুমে তখনই যেন বাজতে শুরু করে বিজয়ের সুর।
এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি আলিশান শারাফু (৬৮)* ও আসিফ খান (৪১)*-কে। বাংলাদেশের বোলাররা একের পর এক ওভারপিচ, স্লোয়ার ও প্রেডিক্টেবল ডেলিভারিতে ম্যাচকে করে তোলেন একতরফা।
বাংলাদেশের হারের পেছনে মূল দায় ফিল্ডিং ও পরিকল্পনার। শুরুতে লিটনের দল মাঠে আগ্রাসী থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারে গতি, হারে মনোযোগ। ধীরে ধীরে ম্যাচ চলে যায় প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রণে।
হাসান মাহমুদ, রিশাদ, তানজিম—তিনজনই শেষ ওভারগুলোতে ছিলেন অনিয়ন্ত্রিত। স্লগ ওভারে কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। বোলারদের ফিল্ড সেটিংও ছিল দুর্বল। শরিফুল ইসলাম ছিলেন একমাত্র স্বস্তি, ৪ ওভারে দেন মাত্র ২৪ রান।
অবিচল আলিশান পুরো ইনিংস জুড়ে ছিলেন ম্যাচের স্থিরতা। অন্যদিকে আসিফ খান শেষদিকে এসে বাংলাদেশের বোলারদের কবর রচনা করেন ছয় মেরে মেরে। ওয়াসিম হয়তো এই ম্যাচে ব্যর্থ, তবে আগের দুই ম্যাচের পারফরম্যান্সে তিনি সিরিজ সেরা নির্বাচিত হন (১৪৫ রান)।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো এক নবীন দলের বিপক্ষে সিরিজ হার বাংলাদেশের জন্য শুধু হতাশাজনক নয়, একরকম লজ্জাজনকও। বিশেষ করে দলের সিনিয়রদের ব্যর্থতা, ফিল্ডিংয়ের বিশৃঙ্খলা, আর অধিনায়কত্বের কৌশলগত দুর্বলতা ভবিষ্যতের পথ কঠিন করে তুলবে।
শারজাহর এই হার শুধুই একটি ম্যাচ হার নয়—এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের আত্মবিশ্বাসে বড়সড় ধাক্কা। যেখানে বাংলাদেশ আশায় বুক বাঁধে বিশ্বমঞ্চে সাফল্যের, সেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে সিরিজ হার এক গুরুতর প্রশ্ন তুলে দেয়—এই দল প্রস্তুত তো বিশ্বমঞ্চের জন্য?
মন্তব্য করুন