দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ফাইনাল শেষ হয়েছে অনেক আগেই। পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত আবারও এশিয়া কাপ জিতেছে। কিন্তু ম্যাচ-পরবর্তী দৃশ্য যেন একেবারে ক্রিকেট নাটকের চূড়ান্ত অঙ্ক—চ্যাম্পিয়ন হয়েও ট্রফি হাতে তুলতে পারেনি ভারত। সুর্যকুমার যাদব হাসতে হাসতে ‘অদৃশ্য ট্রফি’ তুললেন, সতীর্থরা তার চারপাশে উল্লাস করলেন। এভাবেই শেষ হলো এক বিরল ও বিতর্কিত রাত, যার প্রতিধ্বনি এখন গড়িয়ে গেছে ক্রিকেট বোর্ডরুমে।
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং এসিসি সভাপতি মহসিন নকভি। ভারতীয় ক্রিকেটাররা শুরু থেকেই পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন—তাদের হাতে ট্রফি তুলবেন না কোনো পাকিস্তানি কর্মকর্তা। সমাধানের পথ খোঁজা হয়েছিল, প্রস্তাব উঠেছিল আমিরাত ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান খালিদ আল জরউনি কিংবা বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম ট্রফি দেবেন। কিন্তু নকভি রাজি হন নি। তিনি দাবি করেন, এসিসি সভাপতি হিসেবে ট্রফি তোলার অধিকার শুধু তারই।
ফলে শুরু হয় টানাপোড়েন। ভারতীয় বোর্ড সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া সরাসরি জানান, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এসিসি সভাপতির হাত থেকে ট্রফি নেব না। কিন্তু তাই বলে তিনি ট্রফি নিয়ে চলে যাবেন, সেটি অগ্রহণযোগ্য।’ তিনি আরও সতর্ক করে দেন, নভেম্বরের দুবাই আইসিসি সম্মেলনে ভারতের পক্ষ থেকে ‘কড়া ও গুরুতর’ প্রতিবাদ জানানো হবে।
বিতর্ক এখানেই থামেনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টুইটে এশিয়া কাপ জয়কে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সঙ্গে তুলনা করলে নকভি পাল্টা জবাব দেন। তার মন্তব্যে যুদ্ধ, রাজনীতি আর ক্রিকেট গুলিয়ে যায়, যা আরও আগুনে ঘি ঢালে। ভারতীয় সমর্থকদের কাছে এটি দেখা হয়েছে নিছক উসকানি হিসেবেই।
এই ট্রফি-নাটক কিন্তু হঠাৎ করে জন্ম নেয়নি। পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল প্রকট। টসের আগে রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে ওয়াকার ইউনুসকে হাজির করানোর চাপ, হ্যান্ডশেক এড়িয়ে চলা, এমনকি ম্যাচ রেফারি নিয়েও টানাপোড়েন—সবকিছু মিলিয়ে পরিবেশটা ছিল অস্বস্তিকর।
ফাইনালের পর ৪৫ মিনিট দেরিতে যখন পুরস্কার বিতরণ শুরু হলো, ভারতীয়রা শুধু ব্যক্তিগত পুরস্কারগুলো নিলেন, ট্রফি কিংবা পদক নয়। আয়োজক সায়মন ডুল তখন ঘোষণা করলেন, “ভারতীয় দল আজ কোনো পুরস্কার নেবে না। এখানেই অনুষ্ঠান শেষ।” সেই দৃশ্যই এশিয়া কাপের স্মৃতিতে রয়ে গেল।
এখন প্রশ্ন, এরপর কী? নকভি নাকি শর্ত দিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক এক অনুষ্ঠানে তিনিই ভারতের হাতে পদক-ট্রফি তুলবেন। কিন্তু ভারতীয় বোর্ড তাতে রাজি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ, জয়টা মাঠে নিশ্চিত হলেও, ট্রফির লড়াইটা এখনো চলছে—এবার সেটা নেমেছে ক্রিকেটের রাজনৈতিক বোর্ডরুমে।
মন্তব্য করুন