

মিরপুরে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচ শেষের সঙ্গে সঙ্গে এক প্রশ্নই ভাসছে বাতাসে— এবার লাল বলে দুই দলের সামনে কী অপেক্ষা করছে? সিরিজজয়ী অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও পরাজিত আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি— দুজনের উদ্বেগ আলাদা হলেও তাদের বক্তব্যের সুর ছিল একই- ধারাবাহিক টেস্ট ক্রিকেটের অভাব দলের অগ্রগতি আটকে রাখছে।
মিরপুর টেস্টে ২১৭ রানের জয়ের পর শান্ত স্পষ্ট করে বললেন, সামনে পাকিস্তানের বিপক্ষে মার্চে দুই ম্যাচের সিরিজ থাকলেও দীর্ঘ বিরতি এবং প্রথম শ্রেণির ম্যাচের অভাব তার দলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যেই খেলোয়াড়রা যুক্ত হবেন ন্যাশনাল ক্রিকেট লীগে (এনসিএল), এরপর কেউ কেউ খেলবেন বিপিএলে। বিসিএল আয়োজন নিয়েও এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
শান্তের ব্যাখ্যায় ফুটে উঠলো দলকে প্রস্তুত রাখার বাস্তব সংগ্রাম : “এটা কঠিন, কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে করার মতোই কাজ। যোগাযোগ ধরে রাখা, ব্যক্তিগত অনুশীলনকে লক্ষ্যভিত্তিক রাখা— এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,” ম্যাচশেষে সাংবাদিকদের বললেন তিনি।
তিনি আরও যোগ করেন, “পাকিস্তান সিরিজের আগে যদি কোনো চার দিনের ম্যাচ পাওয়া যায়, সেটা খুবই ভালো হবে। তবে নিশ্চিত নই সেটা সম্ভব হবে কি না।”
ব্যাটিং নিয়ে শান্তের বিশ্লেষণও ছিল খোলামেলা। দুই ম্যাচে চারটি শতক এলেও তা রূপ নেয়নি বড় ইনিংসে। আটটি ফিফটি রূপান্তরিত হয়নি আরও বড় স্কোরে।
“আমরা আলোচনা করেছিলাম— শতক শুধু ১০০-তেই সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না, হতে হবে ১৫০ বা ২০০। সুযোগ ছিল, আমরা বড়টা করতে পারিনি। ভবিষ্যতে বড় রান করতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটেই বড় স্কোর করা ছাড়া উপায় নেই,” বললেন শান্ত।
অন্যদিকে আয়ারল্যান্ডের বাস্তবতা আরও কঠিন। তাদের পরবর্তী টেস্ট সিরিজ আগস্ট ২০২৬, আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এর মাঝে লাল বলে প্রায় কোনো প্রস্তুতির সুযোগই নেই।
বালবার্নির কথায় ফুটে উঠল দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, “আমরা প্রতিটি টেস্টেই শিখছি। মুরাদ হাসানের মতো একজন খেলোয়াড় এখানে অভিষেকের আগে বহু প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছে। আমাদের এমন অভিজ্ঞতা খুব কম,” বললেন আইরিশ অধিনায়ক।
তার হতাশা আরও স্পষ্ট হয় পরের কথায়, “মুশফিকের ১০০তম টেস্ট হয়েছে ২০ বছরে। আমাদের একজন ক্রিকেটারের ১০০ টেস্ট খেলতে হলে হয়ত ৫০ বছর লাগবে।”
বাংলাদেশের সামনে তাই এখন লক্ষ্য— ঘরোয়া মাঠে বড় ইনিংসের সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং দীর্ঘ বিরতির মাঝেও দলকে ধরে রাখা। আর আয়ারল্যান্ডের সামনে অপেক্ষা আরও দীর্ঘ পথ, যেখানে প্রথম শ্রেণির অবকাঠামো গড়ে তোলাই হবে সবচেয়ে জরুরি।
টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ, কিন্তু আগামীর পরীক্ষা— দুই দলেরই— তার চেয়ে অনেক কঠিন।
মন্তব্য করুন