তাহলে জার্মান মেশিন আর আগের মতো কাজ করে না। ইংলিশ কিংবদন্তি গ্যারি লিনেকারের অমর উক্তিও আর সত্যি নয় এখন। সেই কবে লিনেকার বলেছিলেন, ‘ফুটবল খুব সহজ খেলা। ২২ জন খেলোয়াড় ৯০ মিনিট ধরে বলের পেছনে দৌড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত জার্মানি জিতবে।’
ফুটবলে জার্মানদের যে কোনো পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জয়ের কাহিনি এখন আর দেখা যায় না। ইউরোতেও দেখা গেলে না। উপরন্তু স্পেনের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ২-১ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে তাদের।
সাম্প্রতিক সময়ে বড় টুর্নামেন্টে জার্মানদের ব্যর্থতা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে জার্মানির কোচ হুলিয়ান নাগেলসমান হারের মধ্যেও ‘ইতিবাচকতা’ খোঁজ করছেন।
স্টুটগার্ট অ্যারেনায় জার্মান অবশ্য দুই রকমের ফুটবল খেলেছে। প্রথম ৬০ মিনিট নিজেদের হারিয়ে খুঁজছিল জার্মানি। মেরে খেলার ওপর জোর দিয়েছিল। সেই সময় বল পজিশনে এগিয়ে ছিল স্পেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে একটি গোলও পায় তারা।
এরপর যেন ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে জার্মান জাত্যাভিমান। যদিও ম্যাচ জেতার জন্য সেই জেগে ওঠা যথেষ্ট ছিল না। তবু ৬০ মিনিটের পর যে ফুটবল খেলেছে নাগেলসমানের দল, সেটা মনে রাখার মতো। সম্ভবত সেই খেলাটুকুর মধ্যেই ‘ইতিবাচকতার’ খোঁজ করছেন জার্মান কোচ।
খেলা শেষে নাগেলসমান বলেন, ‘বলা হতো জার্মানি নাকি জিততে চায় না। জেতার জন্য কী দরকার, সেটা জার্মানি বুঝতে পারে না। স্পেনের বিপক্ষে একবারের জন্যও সেটা মনে হয়নি। ফুটবলাররা নিজেদের সবটুকু দিয়ে লড়াই করেছে। এই ইতিবাচক দিকটা নিয়েই ফেরা উচিত।’
পেনাল্টি না দেওয়ার জন্য রেফারির ওপর কোনো রাগ নেই তার, ‘আমি ওই বিষয়ে (রেফারিং) কথা বলতে চাই না। এখানে আমি ফুটবল নিয়ে কথা বলতে চাই। রেফারি একটা নিয়মের যুক্তি দিয়ে পেনাল্টি দেননি। তবে আমরা তো শুধু পেনাল্টি না পাওয়ার জন্য হারিনি।’
নাগেলসমানের মতে জার্মান শেষের দিকে যে ফুটবল খেলেছে, তাতে জিততেই পারত, ‘ম্যাচে যে কেউ জিততে পারত। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা যদিও অনেক ভালো খেলেছি। ৬০ মিনিটের পর থেকে আমাদের হাতেই ছিল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ। প্রচুর সুযোগ তৈরি করেছি। আমরাই তো জেতার জন্য খেলছিলাম।’
ম্যাচের শুরুতে জার্মানির ফুটবলাররা কড়া ট্যাকল করেন। রক্ষণে বেশি মনোযোগ দিয়ে খেলা শুরু করেছিল স্বাগতিকরা। শুরুর একাদশে কয়েকটি পরিবর্তন করেন নাগেলসম্যান। স্পেনের তুখর আক্রমণ ভাগকে আটকানোর জন্য এমরে চ্যান, লেরয় সানেদের খেলান তিনি। টনি ক্রুজকেও কিছুটা নিচের দিকে রাখা হয়। ফলে জার্মানি শুরুর দিকে ধারালো আক্রমণে যেতে পারেনি। মাঝমাঠের দখলও নিতে পারেনি। প্রথমার্ধে মাঝমাঠ স্পেনের দখলে ছিল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তারা লিডও নেয়। ম্যাচের ৫১ মিনিটে জার্মান জালে গোল দেন দানি অলমো। ডানপ্রান্ত ধরে উঠে এসে ইয়ামাল বক্সে পাস বাড়ান। ডান পায়ের শটে গোল করে স্পেনকে এগিয়ে দেন অলমো।
পিছিয়ে পড়ার পর আক্রমণের ধার বাড়ানো ছাড়া জার্মানির সামনে উপায় ছিল না। ক্রুজকে আক্রমণে এগিয়ে দেন কোচ। তাকে ক্ষুরধার করতে নিকোলাস ফুলক্রুগ আর ফ্লোরিয়ান উইজারকে নামান। ফল পেতেও দেরি হয়নি। ৭০ মিনিটে রবার্ট আন্দ্রিচের শট বাঁচান সিমোন। ৭৭ মিনিটে বারে লাগে ফুলক্রুগের শট। ৮২ মিনিটে জার্মানির শট যায় বারের ওপর দিয়ে। মুহুর্মুহু আক্রমণে স্বাগতিকদের গোল পাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছিল। ৮৯ মিনিটে মিটেলস্টাডের ক্রস হেডে মাটিতে নামান হাভার্টজ। ডান পায়ের শটে গোল করেন উইজ।
সমতায় নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয়। অতিরিক্ত সময়েও জার্মান ভালো ফুটবল খেলছিল। অতিরিক্ত সময়ের ১১৯ মিনিটের মাথায় গোল করেন স্পেনের মাইকেল মেরিনো। তাতেই ইউরো সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয় তাদের। মঙ্গলবার রাতে ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলবে স্পেন।
শেষ দিকে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে স্পেনের মার্ক কুকুরেল্লার হাতে বল লাগে। রেফারি পেনাল্টি দেননি। শেষ বাঁশি বাজার আগে ফুলক্রুগের হেড পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলে বিদায় নেয় জার্মানি। তাই স্পেনের ড্যানি কার্ভাহাল শেষে লালকার্ড দেখলেও তারা আনন্দে মেতে ওঠে।
মন্তব্য করুন