এক সময়ের জাদুকরী ছোঁয়ায় ফুটবল দুনিয়াকে মুগ্ধ করা নেইমার জুনিয়রের ক্যারিয়ার যেন ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের গহ্বরে। ফেরার আশায় ফিরে এসেছিলেন ঘরের মাঠ সান্তোসে, কিন্তু সেখানেও চোট, বিতর্ক আর হতাশাই এখন তার সবচেয়ে বড় সঙ্গী।
২০২৫ এর শুরুতে আল-হিলাল ছাড়ার পর বিশ্ব ফুটবলে নেইমারের জন্য দরজা যেন বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। তখনই নিজেই বলেছিলেন, ‘বোধহয় সময়টা ঘুরে ফিরে এসেছে,’ যখন জানুয়ারির শেষে সান্তোসে ফেরার ঘোষণা দেন। আবেগঘন সেই প্রত্যাবর্তনে বলেছিলেন, ‘এই ক্লাবটাই আমাকে ভালোবাসা দিতে পারে।’
দ্বিতীয় অধ্যায়ের ব্যর্থ শুরু
৩৩তম জন্মদিনে দ্বিতীয় দফায় সান্তোসের জার্সি গায়ে মাঠে নামেন নেইমার। বোটাফোগোর বিপক্ষে বদলি নেমে কিছু ঝলক দেখালেও সেভাবে ছাপ রাখতে পারেননি। পরের ম্যাচে শুরুর একাদশে ছিলেন নভোরিজন্তিনোর বিপক্ষে, কিন্তু বল দখলে হার, ড্রিবলিং ব্যর্থতা ও লক্ষ্যভ্রষ্ট পাসে বোঝা যায়—পুরনো নেইমারকে ফিরে পাওয়া সহজ নয়।
এরপর করিন্থিয়ান্সের বিপক্ষে পরাজয়ের পর ফুটবলের বল নিয়ে অভিযোগ তুলে ফের বিতর্কে জড়ান তিনি। মাঠে আলো ছড়াতে না পারলেও আলোচনায় ছিলেন মাঠের বাইরের আচরণে।
কিছুটা আশা, তারপর আবার অন্ধকার
আগুয়া সান্তার বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করে কিছুটা স্বস্তি ফেরান নেইমার। এরপর কয়েকটি ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্টে জড়িয়ে ফিরে পান কিছুটা ছন্দ। এমনকি কোচ পেদ্রো কাইশিনহাও প্রশংসায় ভাসিয়ে বলেন, ‘নেইমার একজন ফুটবল জিনিয়াস।’
কিন্তু সেই আলোর রেখা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ব্রাগান্তিনোর বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়েন আবার, এবং পরে জানা যায় চোট গুরুতর। তবুও নিজেই আশ্বস্ত করেছিলেন, ‘আমি ভালো আছি, শুধু সাবধানতা অবলম্বন করেছি।’
জাতীয় দলে ডাক, কিন্তু আবারও ছন্দপতন
নতুন করে ব্রাজিল জাতীয় দলে ডাকা হয় নেইমারকে। কিন্তু সেই প্রত্যাবর্তনেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় পুরোনো ইনজুরি। করিন্থিয়ান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মাঠেই নামেননি, পরে জানা যায়—হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি আরও খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।
চোটের সময় চিকিৎসায় মনোযোগ না দিয়ে রিও কার্নিভালে পার্টি করতে গিয়ে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েন। এরপর একটানা ছয় সপ্তাহ মাঠের বাইরে ছিলেন।
শততম ম্যাচেও বিষাদ
সান্তোসের হয়ে শততম ম্যাচে আবার মাঠে ফেরেন নেইমার, কিন্তু দুর্ভাগ্য ছায়ার মতো লেগে ছিল তার সঙ্গে। মাত্র ৩৪ মিনিটেই আবার চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন, এবং এবারও বাঁ-পায়ের পুরনো চোটই ফিরে আসে।
এই সময়ে সান্তোসের কোচ বদল হয়, আর নেইমারের ভবিষ্যৎ নিয়েও তৈরি হয় ধোঁয়াশা। মাত্র পাঁচ মাসের চুক্তিতে সান্তোসে যোগ দেন তিনি, যার মেয়াদ শেষ হবে ৩০ জুনে। ক্লাব প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘এই প্রকল্পটা নেইমারকে ঘিরেই নয়। আমাদের দেখতে হবে লাভ-ক্ষতির হিসেব।’
‘হ্যান্ড অব গড’ – মরিয়া ভুলের পরিণতি?
শেষ সুযোগটাও যেন তিনি নিজেই নষ্ট করলেন। বোটাফোগোর বিপক্ষে ব্রাজিলিয়ান সেরি আ-র গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নেইমার দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পান বল হাতে জাল স্পর্শ করার জন্য – মারাডোনার সেই ‘হ্যান্ড অব গড’-এর মতো, তবে এবার পুরোপুরি মরিয়া ও নিষ্ফল প্রচেষ্টা।
খেলার পর সামাজিক মাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে লিখেন, “আমি একটা ভুল করেছি, ক্ষমা করে দাও!” কিন্তু সমর্থকরা আর সেই ক্ষমা দিতে রাজি নন।
এখন কী হবে?
নতুন ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘নেইমারকে এখনও বিবেচনায় রেখেছি, কিন্তু এখন যারা ভালো করছে, তাদেরই দলে রেখেছি।’
তবে ক্লাব এবং জাতীয় দল—দু’দিক থেকেই নেইমারের ভবিষ্যৎ এখন অত্যন্ত অনিশ্চিত। সান্তোসের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে, নতুন করে আলোচনা শুরুই হয়নি। বার্সেলোনা বা ইন্টার মায়ামি, দুই ক্লাবই তার নাম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে।
প্রাক্তন কোচ জর্জ জেসুসের কথাই যেন বাস্তব হয়ে উঠছে ,‘নেইমার আর সেই লেভেলে নেই।’
তাহলে কি সত্যিই শেষের পথে নেইমার? না কি ফের একবার চরম অন্ধকারে আলো জ্বালাবেন তিনি? উত্তরটা এখন সময়ের হাতে।
মন্তব্য করুন