ফাইনালে কিছুটা হলেও যেন স্নায়ুচাপে ভুগছিল গোটা মৌসুম দুর্দান্ত ফুটবল খেলা ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে খেলেছে ইন্টার মিলান। তাতে অনেক বেশি ট্যাকটিকাল হয়ে উঠে ম্যাচ। যেখানে শেষ হাসি পেপ গার্দিওলার। স্প্যানিশ এই কোচের হাত ধরেই ইতিহাস গড়ল ম্যানসিটি। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতলো প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়নরা।
শনিবার (১০ জুন) চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। সিটির পক্ষে রদ্রি করেন জয়সূচক একমাত্র গোলটি।
স্নায়ুচাপের ম্যাচে কিছুটা ধীরলয়ে শুরু করে দুই দলই। আক্রমণে উঠেছে দেখে শুনে। তাই প্রথমার্ধে খুব বেশি পরিষ্কার গোলের সুযোগ তৈরি হয়নি। বল দখলে সিটি পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে দুই দলই সমানে-সমান। সিটি মাত্র দুটি শট লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে। ইন্টার মিলানেরও লক্ষ্যে ছিল মাত্র একটি শট।
পাঁচ মিনিটের মাথায় ডি বক্সে ঢুকে শট নেন বের্নার্দো সিলভা, কিন্তু লক্ষ্যে থাকেনি। ২৫ মিনিটে বারেল্লার দূরপাল্লার শট লক্ষ্যে থাকলে বিপদ হতে পারতো সিটির। সিটির গোলরক্ষক এদারসন তৈরি ছিলেন না। সিটিজেনরা ২৬-২৮ মিনিটে টানা কয়েকটা আক্রমণ চালিয়েও গোল পেতে ব্যর্থ হয়। হলান্ড-গ্রিলিশরা কিছুতেই ইন্টার মিলানের জমাট রক্ষণ ভাঙতে পারেনি।
৩০ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনা মাঠে পড়ে যান। সে সময় শুশ্রূষা নিয়ে ফের মাঠে ফিরলেও অস্বস্তি নিয়ে খেলছিলেন তিনি। ম্যানসিটি ৩৫ মিনিটে বড় ধাক্কা খায়। গার্দিওলা অস্বস্তিতে ভোগা ডি ব্রুইনাকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে নামান ফিল ফোডেনকে।
এদিকে এডেন জেকোকে ৫৬ মিনিটে তুলে লুকাকুকে নামান ইন্টার কোচ। ৫৮ মিনিটে মার্টিনেজ সিটির গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন। গায়ে মেরে বসেন এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। বল পেয়ে সিটি ওঠে প্রতিআক্রমণে। তবে ডি বক্সে ঢোকার আগেই ট্যাকল করে ফোডেনকে থামান বারেল্লা। তাকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি।
কিছুতেই গোল হচ্ছিল না। যেন কোন দলই মরিয়া হয়ে গোলের চেষ্টাই করছিল না। অবশেষে একটা কার্যকর আক্রমণ ইন্টার মিলানের রক্ষণদূর্গে। ৬৮ মিনিটে একটা সংঘবদ্ধ আক্রমণে বল পেয়ে দারুণ শটে গোল করেন সিটির স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি। ইন্টারের গোলরক্ষক ওনানার কাছে তার জোরাল শটের কোন জবাবই ছিল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বল জালে জড়িয়ে যেতে দেখলেন তিনি।
পরের মিনিটেই গোল প্রায় শোধ দিয়েই ফেলেছিল ইন্টার। প্রতিআক্রমণে উঠে সিটির রক্ষণভাগে ঢুকে পড়েছিল। ডামফ্রির ক্রসে যে হেড নিয়েছিলেন ডিমারকো তা এদারসনকে পরাস্ত করলেও ওপরের পোস্টে লেগে ফেরে। ফিরতি বলে ফের ডিমারকো হেড নিয়ে লুকাকুকে বল দিয়েছিলেন। অবিশ্বাস্যভাবে সুযোগ নষ্ট করেন এই বেলজিয়ান। ৭৩ মিনিটে ফের সুযোগ নষ্ট করেন লুকাকু। এমনকি ৭৮ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ফোডেন। কিন্তু ডিবক্সে ঢুকে বাঁ পায়ে যে শট নেন তা সহজেই নিজের আয়ত্বে নেন ওনানা।
সিটির গোলরক্ষক এদারসন ৮৮ মিনিটে দারুণ সেভ করে দলকে বাঁচান। অবশ্য সুবিধাজনক জায়গা থেকে লুকাকু দুর্বল হেড নেওয়ায় কিছুটা হলেও সুবিধা পেয়েছেন এই ব্রাজিলিয়ান। রদ্রি ফিরতি বল ক্লিয়ার করেন। ম্যাচে সমতায় ফিরতে একের পর এক চেষ্টা করে গেছে ইন্টার। কিন্তু শেষের সময়টুকু দারুণভাবে রক্ষণ সামলেছে গার্দিওলার শিষ্যরা। শেষ বাঁশি বাজতেই ইতিহাস গড়ার আনন্দে আত্মহারা সিটির খেলোয়াড়রা। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ গড়েই রেকর্ডবুকে জায়গা করে নিয়েছে তারা। দ্বিতীয় ইংলিশ ক্লাব হিসেবে জিতেছে ট্রেবল শিরোপা। প্রিমিয়ার লিগ ও ঘরোয়া এফএ কাপের পর গার্দিওলার শিষ্যরা জিতে নিলো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাও।
সিটির পাশাপাশি গার্দিওলাও রেকর্ডবুকে জায়গা করে নিলেন। ইতিহাসের একমাত্র কোচ হিসেবে তিনিই দুটি ট্রেবলের মালিক। সিটির আগে বার্সেলোনাকেও জিতিয়েছিলেন তাদের ইতিহাসের প্রথম ট্রেবল।
মন্তব্য করুন