ফুটবল আপনাকে একটা রাতেই বানিয়ে দিতে পারে নায়ক। আবার ভিন্নটিও হয়। কোনো এক রাতে নায়ক থেকে বনে যেতে পারেন খলনায়কে । এই নিয়েই ফুটবলটা চলে, এখানেই বোধহয় ফুটবলের মাহাত্ম, এই জায়গাতেই ফুটবল সবার থেকে আলাদা।
আদেমোলা লুকমান। ইউরোপা লিগের ফাইনালের পর এই নামটাই সবার মুখে মুখে। থাকবে নাই বা কেন। একটি শতাব্দিতে যে ইতিহাস কেউ করেনি সেই কাজটাই করে ৬১ বছর পর আটালান্টাকে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় শিরোপা এনে দিয়েছেন। মাথায় মুকুট তো তারই প্রাপ্য।
জাভি আলোনেসোর লেভারকুসেনকে যেন একাই চুপ করিয়ে দিয়েছেন লুকমান। আটালান্টার তিন গোলের তিনটিই করেছেন এই আফ্রিকান। যেখানে বেশ কয়েকটা একক রেকর্ডও হয়ে গেল তার।
এই হ্যাটট্রিকে একমাত্র আফ্রিকান ফুটবলার হিসেবে কোনো ইউরোপিয়ান ফাইনালে হ্যাটট্রিক রেকর্ডটা এখন শুধু লুকমানের। ইউরোপা লিগের ফাইনালের মঞ্চেও এটাই প্রথম হ্যাটট্রিক। শুধু তাই নয় এটাই লুকমানের ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক এবং তার সাবেক ক্লাব এভারটনে তিন বছরে লুকমান এর গোলসংখ্যার চেয়ে বেশি এই এক রাতের তিন গোল!
এর আগেও ইউরোপের বিভিন্ন কম্পিটিশনের ফাইনালে হ্যাট্টিক হয়েছে। তবে সেটা এই শতাব্দিতে নয়। আজ থেকে ৫০ বছর আগে কোনো ফাইনালে হ্যাট্টিকের দেখা পেয়েছিলেন গ্লাডবাখের হেইঙ্কেস, ১৯৬৮-৬৯ সিজনে মিলানের প্রাতি, ১৯৬৫-৬৬ মৌসুমে বার্সেলোনার পুয়োল। এছাড়া ইউরোপিয়ান ফুটবলের ফাইনালে দুইবার তিনের অধিক গোল করার রেকর্ড আছে রিয়াল মাদ্রিদের বিখ্যাত ফুটবলার ফেরেঙ্ক পুসকাসের।
ফাইনাল শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক ইতালিয়ান সাংবাদিক দাবি করেন, একদিন বেরগামোর একটি রাস্তার নামকরণ করা হবে লুকমানের নামে। কথাটা শুনে হেসে ফেলেন আটালান্টার ২৬ বছর বয়সী উইঙ্গার। হেসে বিষয়টা উড়িয়ে দিলেও ক্লাবের থেকে এমন সম্মান নিশ্চই একটা ফুটবলারের সারা জীবনের স্বপ্ন। যে স্বপ্ন পূরণ হওয়া মোটেও মন্দ নয়।
এমন ম্যাচের পর কে আর চুপ করে বসে থাকে। বলাটাকে নিজের হাতে রেখেই মা-বাবার সাথে উদযাপন করেছেন লুকমান।নিজের পরিবারকে গ্যালারিতে সাক্ষী রেখে আটালান্টার ১১৬ বছরের ক্লাব ইতিহাসে দ্বিতীয় ট্রফি এনে দিয়েছেন।
১৯৬৩ সালে কোপা ইতালিয়া জিতেছিল বেরগামো শহরের ক্লাবটি। যে ম্যাচটায় আরও বিশেষত্ব আছে। সেটা প্রতিপক্ষকে থামিয়ে দেয়া। লেভারকুসেনের জয়ের রথ থামাতে এক লুকমানের তিনটা গোলই ছিলো যথেষ্ট। হয়তো একারণেই এই জয়টা আরও বিশেষ কিছু।
লুকমানের বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডে। জন্মসূত্রে এই দেশটারই নাগরিক তিনি। খেলেছেন ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলেও। তবে জাতীয় দল হিসেবে বেছে নিয়েছেলেন বাবার দেশ নাইজেরিয়াকেই।
মন্তব্য করুন