গেমস আসে, গেমস যায়- সাফল্যের খাতা থাকে বিবর্ণ। আগামী ছয় মাসের মধ্যে তিনটি মাল্টিন্যাশনাল গেমস খেলবে বাংলাদেশ। তিন গেমসের জন্য সম্ভাব্য বাজেট ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বিপুল এ অর্থের বিপরীতে সাফল্যের সম্ভাবনা কেমন- ক্রীড়া-সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন করা হলে তার সুনির্দিষ্ট উত্তর কিন্তু পাবেন না!
তিন গেমসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৯ কোটি ২০ লাখ টাকা বাজেট ধরা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের (এসএ) জন্য। আগামী বছরের জানুয়ারিতে এ গেমস পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ ছাড়া যুব এশিয়ান গেমসের জন্য ৬ কোটি ৩৭ লাখ এবং ইসলামিক সলিডারিটি গেমসের বাজেট ধরা হয়েছে ৭ কোটি ২ টাকা। ২২ থেকে ৩১ অক্টোবর বাহরাইনে যুব এশিয়ান গেমস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ১৪ থেকে ১৭ এবং ১৫ থেকে ১৮ দুটি বয়স বিভাগে খেলা হবে এ গেমসে। ৭ থেকে ২১ নভেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে ইসলামিক সলিডারিটি গেমস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
তিন গেমসের মধ্যে সর্বশেষ দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ ১৯টি স্বর্ণপদক জিতেছে। সাফল্যের পথটা ত্বরান্বিত করেছে আরচারিতে ভারতের অংশগ্রহণ না করা। যে কারণে এ ডিসিপ্লিনের ১০ স্বর্ণপদকের লড়াইয়ে শতভাগ সফল ছিল বাংলাদেশ। বাকি দুটি গেমসে বাংলাদেশ অবশ্য বিবর্ণ ছিল। ২০২১ সালে ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে ১১ ডিসিপ্লিনে ৬৪ ক্রীড়াবিদ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। অর্জন ছিল মাত্র তিনটি পদক। এক রুপার সঙ্গে দুই ব্রোঞ্জ- সবগুলো ছিল আরচারি থেকে। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ যুব এশিয়ান গেমসে ১৯ ক্রীড়াবিদ পাঠানো বাংলাদেশ ছিল পদকশূন্য।
আসন্ন তিন গেমসে কি আদৌ বড় সাফল্য অর্জনের অবস্থায় আছে বাংলাদেশ? ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাফল্য অর্জন নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর। প্রথমত, ক্রীড়াবিদদের অনুশীলনের ধারাবাহিকতা থাকা জরুরি। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেটা বিরল! সাবেক ক্রীড়াবিদ ও অভিজ্ঞ কোচ নজরুল ইসলাম রুমি ক্রীড়াবিদদের নিবেদনেও ঘাটতি দেখছেন।
‘বৈশ্বিক যেকোনো আসরের আগে আমাদের ক্রীড়াবিদরা উজ্জীবিত থাকেন। কিন্তু গেমসে গিয়ে তারা কেন যেন খেই হারিয়ে ফেলেন। হয়তো প্রতিপক্ষ শক্তিশালী বলে এমনটা হয়ে থাকে। যেকোনো ইভেন্টে ভালো করতে হলে প্রথম উদ্যোগটা ক্রীড়াবিদকে নিতে হবে। পরবর্তী সময়ে আসবে তাদের প্রস্তুত করা এবং অন্যান্য বিষয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের এখানে সাফল্য অর্জনের প্রচেষ্টা খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না’- কালবেলাকে বলছিলেন নজরুল ইসলাম রুমি। আসন্ন তিনটি গেমসের জন্য কয়েক ডিসিপ্লিনে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বটে। কিন্তু সেভাবে সমন্বিত উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এ কারণে আসরগুলো নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে।
যুব এশিয়ান গেমসের প্রশিক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি, বাকি ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা অংশগ্রহণ ব্যয়। ১২ ডিসিপ্লিনে ৬৩ জনের কন্টিনজেন্ট পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে গেমসে। ইসলামিক সলিডারিটি গেমসের প্রস্তুতির জন্য ৩ কোটি ১০ লাখ এবং বাকি ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা অংশগ্রহণ ব্যয় বাবদ ধরা হয়েছে। গেমসের ১১ ডিসিপ্লিনে ৬৬ সদস্যের কন্টিনজেন্ট পাঠানোর কথা রয়েছে। এসএ গেমসের প্রশিক্ষণের জন্য ৪২ কোটি ৭০ লাখ এবং অংশগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি টাকা। গেমসে ২৬ ডিসিপ্লিনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪৯০ ক্রীড়াবিদ এবং টিম অফিসিয়াল হিসেবে আরও ১৬০ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২৩তম কমনওয়েলথ গেমসের প্রাথমিক ডিসিপ্লিন নির্ধারণের আলোচ্য সূচি রয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) পরবর্তী নির্বাহী কমিটির সভায়। ২০২৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২ আগস্ট স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা কমনওয়েলথ গেমস।
মন্তব্য করুন