মোবাইল ফোনের কল্যাণে নিজের দক্ষতা ও নিরাপত্তা নিয়ে আগের চেয়ে অনেক আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে বাংলাদেশের জনগণ। দেশে প্রতি ১০ জন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৯ জন নিজেদের মোবাইল ফোনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুল ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে এআই ব্যবহারে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে আছেন নারীরা। দেশে নারীদের মাত্র এক তৃতীয়াংশ বা ৩৭ শতাংশ নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহার করে থাকেন। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে এআই ব্যবহারের হার ৪৭ শতাংশ। টেলিনর এশিয়ার এক জরিপে এমন তথ্য উঠে আসে।
বুধবার (০৭ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড (বাংলাদেশ)’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে টেলিনর।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবু বকর সিদ্দিক। আরও উপস্থিত ছিলেন- টেলিনর এশিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব এক্সটার্নাল রিলেশনস অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি মনীষা ডোগরা, গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ প্রমুখ।
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ডিজিটাল ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দক্ষ করে তোলা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির পূর্বশর্ত হচ্ছে মোবাইল সংযোগ। মানুষের হাতে মোবাইল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তারা যেন নিরাপদে ও দায়িত্বশীল হয়ে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করেন সে দিকটি নিশ্চিত করাটা আমাদের সম্মিলিত অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
টেলিনর এশিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনীষা ডোগরা বলেন, পরিবর্তিত ডিজিটাল পরিমণ্ডলে ডিজিটাল সেবাকে আরও সমৃদ্ধ করা এবং ডিজিটাল লিটারেসিকে আরও এগিয়ে নেওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এআইভিত্তিক ডিজিটাল দক্ষতার বিকাশ এবং অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব।
গ্রামীণফোনের সিসিএও তানভীর মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংযোগের রূপান্তরকারী শক্তি এবং অগ্রগতির জন্য এর অপরিসীম সম্ভাবনাও স্পষ্ট হচ্ছে। মানুষ যেন ডিজিটাল পরিমণ্ডলে নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে বিচরণ করতে পারেন এজন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার প্রদান এবং প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ব্যবহারের ক্ষেত্রে উচ্চ মান নিশ্চিত করতে হবে।
টেলিনরের জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতি ১০ জনে ছয়জন অনলাইন শিক্ষার উপকারিতার কথা বলেছেন। এ হার মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের চেয়ে বেশি। এছাড়াও মোবাইল ফোনের কল্যাণে বাংলাদেশের ৫২ শতাংশ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ বেড়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে ডিজিটাল পরিমণ্ডল পরিবর্তিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন ঝুঁকি- পরিচয় জালিয়াতি ও ডিপফেকের আংশঙ্কায় প্রতি ১০ জনে ৭ জন তাদের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রতি ১০ জনে তিনজন জানিয়েছেন নেটওয়ার্ক অ্যাটাকের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যেও রয়েছে বাংলাদেশ। টেলিনর জানায়, বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয়জন তাদের দৈনন্দিন জীবনে এআইয়ের সম্ভাবনা ও কার্যকারিতা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। শিক্ষা কার্যক্রমে এআইয়ের প্রভাব সম্পর্কে ১০ জনের মধ্যে আটজন ইতিবাচক মত দিয়েছেন। পাশাপাশি কিছু মানুষ তাদের চাকরির নিরাপত্তার ওপর এআইয়ের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই সংখ্যা প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিনজন।
এআই নিয়ে উচ্ছ্বসিত ব্যবহারকারীরা এআইয়ের ক্ষেত্রে ডেটার ব্যবহার নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ ডেটা কীভাবে ব্যবহার ও শেয়ার করা হচ্ছে তা স্পষ্ট নয় এবং ব্যবহারকারীর প্রত্যক্ষ সম্মতি ছাড়াই বিপুল পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ করে এআই।
মন্তব্য করুন